Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

❒সখের মোটরসাইকেলে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছিলেন রুবেল

যশোরে বাবা-মেয়ে ও চাচা ভাইপোসহ সড়কে ঝরলো ৫ প্রাণ

এখন সময়: শনিবার, ১০ মে , ২০২৫, ০৩:৪১:৫৪ এম

 

বিল্লাল হোসেন: এবার ঈদের ছুটিতে যশোরে আলাদা সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা মেয়ে, চাচা ভাইপোসহ ৫ জনের প্রাণহানী হয়েছে। ইদ পরবর্তী তিন দিনে যশোর সদর উপজেলার উপজেলার পুলেরহাট, চুড়ামনকাটির দাসপাড়া ও শার্শা উপজেলার মিনি স্টেডিয়ামের সামনে দুর্ঘটনা তিনটি ঘটে। নিহতরা হলেন- খুলনা নগরীর মুজগুন্নী আবাসিক এলাকার মিল্লাত আলী গাজীর ছেলে রুবেল (৩২), তার মেয়ে ঐশি (১০), চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের পুকুর বাগডাঙ্গা গ্রামের মৃত খবির উদ্দিনের ছেলে জাকির হোসেন (৫০), শার্শা উপজেলার বৃত্তিবারীপোতা গ্রামের  খলিলুর রহমানের ছেলে রাসেল হোসেন (২০) ও বিল্লাল হোসেনের ছেলে জাহিদ হোসেন (২২)। দুর্ঘটনায় রুবেলের স্ত্রী জেসমিন খাতুন (২৮) ও ৪ বছরের মেয়ে তায়েবাসহ আরও কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। বাড়ি থেকে বের হয়ে মুহুর্তে তাজা প্রাণগুলো ঝরে যাওয়ার ভুক্তভোগী পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) বিকেলে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন রুবেল। সদর উপজেলার পুলেরহাট মোড়ে পৌঁছালে  যাত্রীবাহী একটি বাস (ঢাকা মেট্রো ১৪-০২৫২) তাদের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। আঘাতে তারা সড়কের ওপর ছিটকে পড়লে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে রুবেলের হোসেনের মেয়ে ঐশী  ঘটনাস্থলে মারা যান। রুবেলসহ তার স্ত্রী জেসমিন ও আরেক মেয়ে তায়েবাকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিছু সময় পর সার্জারী ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রুবেল। দুর্ঘটনার প্রতিবাদে জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভায়।

নাভারণ হাইওয়ে থানার এস আই ইউসুফ শেখ জানান, ঈদ উপলক্ষে রুবেল তার স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে খুলনা থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে শার্শা উপজেলা শহরে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে পুলেরহাটে সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা- মেয়ে মারা যান। এদিকে, যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গ থেকে রাতে বাবা-মেয়ের মৃতদেহ বাড়িতে পৌঁছালে স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। রুবেলের মা হাজেরা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। একমাত্র ছেলে ও পুতনিকে হারিয়ে শোকে পাগল হাজেরা। কিছু সময় পর পর জ্ঞান ফিরলেই বিলাপ করছেন তিনি।

রুবেলের বড় বোন আফরোজা হাউমাউ করে কাঁদছিলেন আর বলছিলেন, একমাত্র আদরের ভাই শখ করেছিল মোটরসাইকেলের। তাই দুই বোন মিলে তাকে মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছিলাম। সখের মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন শ্বশুর বাড়ি। ঘাতক বাস তার ভাই ও ভাইজির জীবন কেড়ে নিয়েছে। এই শোক কিভাবে সহ্য করবেন তারা। সব শেষ হয়ে গেছে। শুক্রবার সকালে জানাযা শেষে বাবা- মেয়ের লাশ গোয়ালখালী কবরস্থানে দাফন করা হয় বলে জানা গেছে।  এদিকে, সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা ও মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় অজ্ঞাত বাসচালকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নিহত রুবেলের পিতা  মিল¬াত আলী। শুক্রবার তিনি যশোর কোতয়ালি  থানায় তিনি এ মামলা করেন।

এর আগের দিন ২ এপ্রিল বেনাপোল-যশোর মহাসড়কের শার্শা স্টেডিয়ামের সামনে প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে মারা যান মোটরসাইকেল চালক রাসেল হোসেন (২০) ও আরোহী জাহিদ হোসেন (২২)। তারা সম্পর্কে চাচা ভাইপো।

শার্শা থানার ওসি কেএম রবিউল ইসলাম জানান, রাসেল ও জাহিদ মোটরসাইকেল যোগে নাভারন থেকে বেনাপোলের দিকে যাচ্ছিলেন। শার্শা স্টেডিয়ামের সামনে পৌছালে বেনাপোল অভিমুখি একটি প্রাইভেট কারের চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেলের পিছনেসজোরে ধাক্কা দিলে তারা দুজন রাস্তায় ছিটকে পড়ে। এতে মাথায় আঘাত লেগে ঘটনাস্থলে দুজনের মৃত্যু হয়।

নাভারণ হাইওয়ে থানার ওসি রোকনুজ্জামান জানান, দুর্ঘটনার পর প্রাইভেটকারটি পালিয়ে যায়। প্রাইভেটকারটি আটকের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

এদিকে, শুক্রবার (৪ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে জাকির হোসেন চুড়ামনকাটি বাজারে সবজি বিক্রি করে ভ্যানযোগে বাড়ির উদ্দেশ্যে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে চুড়ামনকাটির দাসপাড়ায় পৌঁছালে ভ্যানের সামনে একটি ছাগল চলে আসে। চালক ওই ছাগল বাঁচানোর চেষ্টা করলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভ্যানটি সড়কের পাশে উল্টে যায়। দুর্ঘটনায় জাকির হোসেন ও মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসক জাকির হোসেনকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করেন। ঢাকায় যাওয়ার পথে জাকিরের মৃত্যু হয়।

উল্লেখ্য, গত বছর ঈদুল ফিতরের উৎসবে যশোর সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ জনের মৃত্যু হয়েছিলো। এছাড়া ২৩ জন আহত হয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

 

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)