স্পন্দন ডেস্ক : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বেশ কয়েকটি পরিপত্র জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব পরিপত্রে নির্বাচনী সময়সূচি জারি, সময়সূচির প্রজ্ঞাপন ও গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতা নির্ধারণ, নির্বাচনী ব্যয়, ভোটার তালিকার ব্যবহার ইত্যাদি নানা বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের তপশিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি জানান, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি একইদিনে এই দু’টি ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার ইসির উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেনের স্বাক্ষরে এসব পরিপত্র জারি করা হয়।
প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতা
পরিপত্রে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী আসন্ন নির্বাচনে একজন প্রার্থীর যোগ্যতা ও অযোগ্যতা কীভাবে নিরূপণ করা হবে সে বিষয়ে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, একজন প্রার্থী আদালত কর্তৃক ফেরারি বা পলাতক আসামি হিসেবে ঘোষিত হয়ে থাকলে বা তিনি প্রজাতন্ত্র বা কোনো সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের কাজে কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন। আদালত কতৃর্ক অপ্রকৃতিস্থ ঘোষিত কিংবা দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি লাভ না করলে এবং বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নেওয়া ব্যক্তিরাও প্রার্থী হতে পারবেন না।
এতে বলা হয়, কেউ কোম্পানির পরিচালক বা ফার্মের অংশীদার হলে, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে গৃহীত কোনো ঋণ বা তার কোনো কিস্তি মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনের আগে পরিশোধে ব্যর্থ হলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। সেইসঙ্গে, কৃষিকাজের জন্য নেওয়া ক্ষুদ্র কৃষি ঋণ ছাড়া মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনের আগে ব্যাংক হতে নেওয়া কোনো ঋণ বা তার কোনো কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য অযোগ্য বলে ঘোষিত হবেন। এছাড়া মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনের আগে সরকারি টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি বা অন্য কোনো সেবা প্রদানকারী সংস্থার বিল পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলেও সেই ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত কোনো ব্যক্তি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। প্রজাতন্ত্র বা সরকার নিয়ন্ত্রিত কোনো প্রতিষ্ঠানে সার্বক্ষণিক পদে থাকলে, তা ‘লাভজনক পদ’ হিসেবে গণ্য হবে এবং এ ধরনের ব্যক্তিরা নির্বাচন করতে অযোগ্য হবেন। এছাড়া উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান; সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার মেয়র; বিভিন্ন সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত বা সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত দপ্তর/প্রতিষ্ঠান/কর্পোরেশন/কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল ব্যক্তি এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত ব্যক্তিদের প্রার্থী হতে হলে নিয়ম অনুযায়ী পদত্যাগ করতে হবে।
এক প্রার্থী তিন আসনের বেশি নয়
আসন্ন নির্বাচনে কোনো ব্যক্তি একই সময়ে তিনটির অধিক নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী হতে পারবেন না বলেও পরিপত্র জারি করেছে ইসি। এতে বলা হয়, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ১৩ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি একই সময়ে তিনটির বেশি নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী হলে, তার সবগুলো মনোনয়নপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে।’
মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যা দাখিল করতে হবে
পরিপত্র আরও উল্লেখ করা হয়, প্রত্যেক মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীর স্বাক্ষরিত একটি হলফনামার সঙ্গে সর্বশেষ আয়কর রিটার্নের কপি সংযুক্ত করে দাখিল করতে হবে। এসব বিধানগুলো স্থানীয়ভাবে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকেও এ বিষয়ে প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০২৫ অনুযায়ী মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ফরম-২০ এ নির্বাচনী ব্যয়ের সম্ভাব্য উৎসের বিবরণী এবং ফরম-২১ এ প্রার্থীর সম্পদ, দায়-দেনা ও বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের বিবরণী দাখিল করাও বাধ্যতামূলক।
প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয়
প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কেও পরিপত্রে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রত্যেক নির্বাচনী এজেন্টকে (বা এজেন্ট না থাকলে প্রার্থীকে নিজে) তফসিলি ব্যাংকে একটি পৃথক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। ব্যক্তিগত ব্যয় ব্যতীত নির্বাচন সংক্রান্ত সব ব্যয় এই অ্যাকাউন্ট থেকেই পরিশোধ করতে হবে।
ছবিসহ ভোটার তালিকা ব্যবহার বাধ্যতামূলক
আরেকটি পরিপত্রে বলা হয়, জাতীয় নির্বাচনে বর্তমানে প্রণীত ছবিসহ ভোটার তালিকাই ব্যবহার করতে হবে। নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা ছবিসহ ভোটার তালিকা ব্যবহার করবেন। তবে প্রার্থী, নির্বাচনী এজেন্ট বা পোলিং এজেন্টেরা ছবি ছাড়া ভোটার তালিকার সিডি সংগ্রহ করে মুদ্রণ পূর্বক ব্যবহার করবেন। সিডি সংগ্রহের জন্য মনোনয়নপত্র গ্রহণের সময় সংশ্লিষ্ট জেলা বা উপজেলা পর্যায় থেকে কিংবা রিটার্নিং কর্মকর্তা বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিস থেকে আবেদন করতে হবে। এ সংক্রান্ত নানা নির্দেশনাও দেওয়া হয় পরিপত্রে।
পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেবেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা
ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আইটি-সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থার মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন বলে পরিপত্রে জানানো হয়। তপশিল ঘোষণার দিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। এছাড়া রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে- তপশিল ঘোষণার পরপরই ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্যানেল চূড়ান্ত করে তাদের নিবন্ধন বিষয়ে দ্রুত অবহিত করতে হবে। রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা আগেই জারি করেছে ইসি।
পরিপত্রে জানানো হয়, নির্ধারিত তারিখ ও সময়ের মধ্যে রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিকট প্রার্থী, প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারী কর্তৃক সরাসরি মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে। অনলাইনে জমা দেওয়ার সুযোগ নেই। রিটার্নিং বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র দাখিলের তারিখ, সময় ও স্থান জানাতে হবে। সরকারি ছুটিসহ প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ ও গ্রহণ করা হবে। প্রার্থী, প্রস্তাবক ও সমর্থনকারীকে সরাসরি উপস্থিতিতেই মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার দর্শনীয় স্থানে গণবিজ্ঞপ্তি টাঙানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রিটার্নিং অফিসারের গণবিজ্ঞপ্তির একটি নমুনা পরিপত্রের সঙ্গে পাঠানো হয়েছে।