শেখ কাজিম উদ্দিন, বেনাপোল : বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রী চলাচল ব্যাপকভাবে কমে গেছে। গত অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর-এই চার মাসে যেখানে যাতায়াত করেছিলেন ৬ লাখ ৫ হাজার ৮১৮ জন যাত্রী, চলতি অর্থবছরের একই সময়ে সেই সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ২ লাখ ২ হাজার ৯৬৯ জনে। ফলে মাত্র চার মাসেই বাংলাদেশ সরকারের ভ্রমণকর থেকে প্রায় ৩২ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে।
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ভারত ও বাংলাদেশে যাতায়াত করা পাসপোর্টধারীর সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৫ হাজার ৮১৮ জন। এর মধ্যে ভারতগামী ছিলেন ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫২ জন এবং ভারত থেকে ফেরেন ২ লাখ ৯৬ হাজার ৮৮৬ জন।
অপরদিকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের একই সময়ে যাতায়াতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ২ লাখ ২ হাজার ৯৬৯ জন। এর মধ্যে ভারতগামী ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৩৪ জন এবং ভারতফেরত ৮৮ হাজার ২৩৫ জন। ফলে চার মাসে যাত্রী কমেছে ৪ লাখ ২ হাজার ৮৪৯ জন।
যাত্রী কমায় শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতও রাজস্ব হারিয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, যাত্রী কমার কারণে ভারত সরকারের ভিসা ফি খাতে প্রায় ৪২ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশের ভ্রমণকর খাতে প্রায় ৩২ কোটি টাকা রাজস্ব কমেছে।
বেনাপোল চেকপোস্ট সূত্র বলছে, প্রতিবছর ভ্রমণ, চিকিৎসা, ব্যবসা ও উচ্চশিক্ষায় বেনাপোল দিয়ে ১৮-২০ লাখ মানুষ ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করেন। সরকারও এখান থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্ব পায়। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর ভারত নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশিদের ভিসা জটিল ও সীমিত করতে শুরু করে। এতে, ভ্রমণ খাতে বড় ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়ে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও ভারত- ভিসার নিয়ম সহজ করেনি। ফলে চাহিদা অনুযায়ী ভিসা না পেয়ে নানা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বাংলাদেশিরা।
ভারত ভ্রমণকারী আতিয়ার রহমান অভিযোগ করে বলেন, “কড়াকড়ির কারণে ভিসা পেতে এখন অনেক টাকা দিতে হয়, হয়রানিও সহ্য করতে হচ্ছে। ব্যবসা ও চিকিৎসা-দুই ক্ষেত্রেই ক্ষতি হচ্ছে।”
ব্যবসায়ী হায়দার আলী জানান, “আমি ১২ হাজার টাকা দিয়ে ভিসা পেয়েছি। দালাল ছাড়া কোনোভাবে ভিসা পাওয়া যায় না। এর আগে ভিসা না দিয়ে পাসপোর্ট ফিরিয়ে দিয়েছে।”
চিকিৎসা নিয়ে ভারত থেকে ফিরে আসা আব্দুল হান্নান বলেন, “আমার ভিসায় এক ডাক্তারের নাম থাকলেও আমার আত্মীয় অন্য ডাক্তার দেখান। এ কারণে পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে তিন ঘণ্টা বসিয়ে রাখে এবং ভবিষ্যতে ভিসা না দেয়ার হুমকি দেয়।” প্রতিবাদ করলে অনেকের পাসপোর্টে সিল মেরে দেয়। এতে পরবর্তীতে ভিসা পাওয়া যায় না। যেকারণে অনেক অনুনয় বিনয় করে ফিরতে হয়েছে।
বাংলাদেশে ভ্রমণে আসা ভারতীয় নাগরিক সুরজিৎ সাহা ও রেখা সাহা জানান, কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন থেকে স্বাভাবিকভাবেই ভিসা পেয়েছেন, কোনো ঝামেলা হয়নি।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) শামিম হোসেন বলেন, “ভিসা জটিলতার কারণে পাসপোর্টধারী যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে। এর সঙ্গে সরকারের রাজস্বও কমছে।”
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাখাওয়াত জানান, সর্বশেষ শুক্রবার বেনাপোল দিয়ে ভারতে গেছেন মাত্র ১৪৯৪ জন এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছেন ৮৮৮ জন পাসপোর্ট যাত্রী।