ম.ম.রবি ডাকুয়া, মোংলা: মোংলা বন্দরের সঙ্গে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ স্থাপিত হলেও এখনো বন্দর থেকে শুরু হয়নি পণ্য পরিবহণ। চার হাজার ২৬১ কোটি টাকায় নির্মিত খুলনা-মোংলা এই রেলপথে এখন চলে মাত্র একটি কমিউটার ট্রেন। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত এবং মোংলা বন্দর ব্যবহার করে কম খরচে পণ্য আমদানি-রফতানির উদ্দেশ্যে রেলপথটি করা হলেও দেড় বছরেও পণ্যবাহী ট্রেন চালু করা যায়নি।
স্থানীয়রা জানান, মোংলা বন্দরের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ স্থাপনের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সাথেও পণ্য পরিবহণ সুগম করার লক্ষে খুলনা মোংলা রেলপথ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। কিন্তু সে সব এখন অধরাই রয়ে গেছে। তাই এ প্রকল্পকে হাস্যকর এবং ব্যর্থ বলছেন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় নেতারা।
এর মধ্যে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে রেল সংযোগ সংক্রান্ত প্রকল্পে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি রুপির অর্থায়ন ও নির্মাণকাজ সাময়িক স্থগিত করেছে ভারত। এসব প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম খুলনা-মোংলা রেলপথ। এ অবস্থায় অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়লো মোংলা বন্দর থেকে ট্রেনে পণ্য পরিবহণ।
গত ২০ এপ্রিল বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের পরিপ্রেক্ষিতে ও শ্রমিকদের নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে রেল সংযোগ প্রকল্পের অর্থায়ন ও নির্মাণকাজ স্থগিত করেছে ভারত। এই সিদ্ধান্তের ফলে অন্তত তিনটি চলমান প্রকল্প থেমে গেছে এবং আরও পাঁচটি প্রকল্পের জরিপ কাজও বন্ধ হয়ে গেছে। এই প্রকল্পগুলোর মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করা। স্থগিত হওয়া বাকি দুটি প্রকল্প হলো-আখাউড়া-আগরতলা আন্তঃদেশীয় রেল সংযোগ এবং কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন স্থাপন ও ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্প।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর একনেকে অনুমোদনের মধ্যে দিয়ে প্রকল্পটি শুরু হয়। ১৪ বছরে এই মেগা প্রকল্পে ব্যয় হয় ৪ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। যার মধ্যে ২ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খুলনা-মোংলা রেলপথ বাস্তবায়নের পর দিনের বেশিরভাগ সময়ই অলস পড়ে থাকে। অথচ বেশ ঢাকঢোল পিটিয়েই প্রকল্প শুরু করেছিল তৎকালীন সরকার। বৈদেশিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে, এমন আশ্বাসও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন এই লাইনে মাত্র একটি ট্রেন-ই চলাচল করে।
যাত্রী সাধারণ বলেন, আগে যে ট্রেনটা খুলনা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত চলতো। সেটা এখন মোংলা যাচ্ছে। এটা কোনো বাড়তি ট্রেন না। সকালে-বিকালে ২টা ট্রেন থাকলে ভালো হতো। মানুষের যাতায়াতে সুবিধা হতো।
সারাদিন আর কোনো রেল চলাচল না করায় বন্ধ থাকে স্টেশনের সকল কর্মকাণ্ড। উদ্বোধনের সাত মাস পরও এই রুটে কোনো পণ্যবাহী ট্রেন চালু না হওয়ায় ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী ও নাগরিক নেতারা।
মংলা বন্দর বার্থ-শিপ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ জাহিদ হোসেন বলেন, পণ্য পরিবহনের ট্রেন চালু না হওয়ায় এ প্রকল্প থেকে ব্যবসায়ীরা কোনো সুফল পাচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের সুফল পেতে হলে এখানে মোংলা বন্দর থেকে সরাসরি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং আন্তর্জাতিকভাবে পণ্য পরিবহনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন কমিটির নেতৃবৃন্দ বলেন, এই প্রকল্প এখন যেভাবে চলছে অবশ্যই এটা একটা হাস্যকর প্রকল্প। এটাকে অর্থনৈতিকভাবে গতিশীল করতে হবে। অন্যথায় এ প্রকল্প থেকে খুলনাবাসী কোনো উপকৃত হবে না।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, খুলনা-মোংলা রেলপথ নিয়ে মহাপরিকল্পনা রয়েছে। তবে সেসব পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে।