নিজস্ব প্রতিবেদক: ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে নিম্নচাপের কারণে দিনভর বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে যশোর শহর ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকা। এতে করে জনজীবনে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। এই বৃষ্টি বয়ে আনলো শীত । বিমানবন্দর সংলগ্ন আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এধরণের আবহাওয়া আজ দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, ঘুর্ণিঝড় মিগজাউম বাংলাদেশের উপকুলীয় অঞ্চল অতিক্রম করার প্রভাবে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে। নিম্ন চাপের কারনে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সারাদিন যশোরে ৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এ বৃষ্টিতে নেমে এসেছে শীত। সেই সাথে বৃষ্টির কারনে শহরের অধিকাংশ জায়গা তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। মানুষ একপ্রকার ঘরবন্দি হয়ে পড়ে। অতি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাইরে বের হয়নি। বুধবার সন্ধ্যা রাত থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকে। অবিরাম বৃষ্টিতে খড়কী এমএম কলেজ দক্ষিণ গেট, আসাদ হলের সামনে, চোরমারা দীঘির পাড়, ফায়ার সার্ভিস অফিস মোড়, চারখাম্বা, বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক মোড়, বেজপাড়া চোপদারপাড়া, কবরস্থান পাড়া, তালতলার মোড়, শংকরপুর জমাদ্দার পাড়া, বারান্দিপাড়া, ষষ্ঠিতলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়। এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় এলাকাবাসিকে পানির মধ্যদিয়ে চলাচল করতে হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পৌরসভা থেকে সঠিকভাবে ড্রেন পরিষ্কার না করার কারনে যখনই বৃষ্টি হয় তখনই এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে পৌরসভায় স্মারকলিপি দেয়া হলে সমস্যা সমাধানের আশ^াস দেয়া হলেও সেটা আজো বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে পৌরসভা আসাদ হলের সামনে, চারখাম্বা. ফায়ার সার্ভিসে মোড়ের সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতা সমাধানের বিষয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় আলোচনা হয়। অথচ পৌরসভা থেকে এটা সমাধানে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। আলোচনা শুধু কাগজ কলমেই রয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা উত্তম কুমার কুন্ডু জানান, পৌরসভার এসব এলাকায় বৃষ্টির পানি জমেছে। এসব স্থান থেকে এক থেকে দুই ঘন্টার মধ্যে পানি সরে যাবে। কিন্তু খড়কী রেললাইন পাশ থেকে পানি অপসারণের জায়গা দখল করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। সেটা অপসারণ না করা পর্যন্ত খড়কী এলাকার জলাবদ্ধতার সমস্যা দূর হবে না।
অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি জানান, অভয়নগর উপজেলায় দিনভর গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে কর্মজীবী মানুষ বিড়ম্বনায় পড়েছে। বৃষ্টিতে ভিজেই শ্রমজীবী মানুষরা তাদের নিত্যদিনের কাজকর্ম করেছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। সারাদিন সূর্যের দেখা মেলেনি। দিনভর বৃষ্টির কারণে উপজেলার রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের চলাচল কম ছিল। তারপর সকাল থেকে চলছে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে ফুটপাতের দোকানিরা পড়েছেন বিপাকে। নওয়াপাড়া বাজারে লোকসংখ্যাও কম থাকায় বিপণিবিতান গুলোতে নেই কোন ক্রেতা। রিকশা-ভ্যানচালকরা পর্যাপ্ত ভাড়া না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন। নওয়াপাড়া নদী বন্দরের কার্যক্রম স্থবির রয়েছে। নিম্নচাপে সৃষ্ট কালোমেঘ আর দিনভর বৃষ্টির কারণে উপজেলার বিভিন্ন রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ফলে উপজেলার বিভিন্ন সড়কে চলাচলে বিঘ্নসৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের।
নিম্ন আয়ের মানুষদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বৃষ্টির কারণে বেশির ভাগ মানুষ কাজে বের হতে পারেননি। কাজে না যাওয়ার ফলে অনেকে অলস সময় কাটাচ্ছেন। বৃষ্টির কারণে বিশেষ করে রিকশা ও ভ্যান চালক, দিনমজুররা বেশি বিপাকে পড়েছেন।
সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটা বাজার ঘুরে দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে সাধারণ মানুষের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। খুব অল্প সংখ্যক মানুষ বাইরে বের হয়েছেন। নিম্ন আয়ের মানুষেরা বিশেষ করে রিকশা ও ভ্যানচালকরা বের হলেও সারাদিনে আয় করতে পারেননি গাড়ি ভাড়ার টাকা। এছাড়া বৃষ্টির কারণে বাজারে মানুষ না আসার কারণে ছোটছোট ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় আছেন কখন বন্ধ হবে বৃষ্টি।
উপজেলার একতারপুর বাজারের ক্ষুদ্র সবজি ব্যবসায়ী আফছার আলী বলেন, বৃষ্টির মাঝে অতি প্রয়োজন ছাড়া মানুষজন বাজারে আসেননা। কাঁচা মালগুলো আজ বিক্রি না করলে পচন ধরে যাবে।
উপজেলার গ্রামতলা এলাকার দিনমজুর সোলায়মান হোসেন বলেন, সারাদিন গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে ঠিক মতো কাজ করতে পারেনি। আজ কাজে যোগদান করেও কাজ করতে পারেনি বৃষ্টির জন্য। পরে বাড়িতে চলে এসেছি।