আশাশুনি প্রতিনিধি: আশাশুনি উপজেলার খাজরা ও বড়দল ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার বিঘা জমিতে এবার জলাবদ্ধতার কারণে আমন ধান হয়নি। ফলে ১০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য বর্তমানে বাইরে অবস্থান করছে। জমির জলাবদ্ধতা নিরসনে খোলপেটুয়া নদীর চেউটিয়া খালের বাঁধে স্লুইস গেট নির্মাণের দাবিতে ১০ গ্রামের মানুষের আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে পশ্চিম ফটিকখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সমস্যা সমাধানে সম্মিলিত হয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করেন খাজরা ইউনিয়নের ফটিকখালি, গজুয়াকাটি, খালিয়া, পশ্চিম খাজরা, দেয়াবর্ষিয়া, পিরোজপুর, রাউতাড়া, কাপসণ্ডা ও বড়দল ইউনিয়নের বাইনতলা, পাচপোতাসহ বিভিন্ন গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন।
আলোচনা সভা শেষে ইউপি সদস্য রামপদ সানা জানান, গত আষাঢ় মাস থেকে অতিবৃষ্টি ও লবণ পানির ঘের মালিকদের নিষ্কাশিত লবণাক্ত পানিতে আমরা ডুবে আছি। সংশ্লিষ্ট এলাকার পানি কালকি স্লুইস গেট দিয়ে এতদিন নিষ্কাশিত হতো। কিন্তু বড়দলের কপোতাক্ষ নদের নাব্যতা হারিয়ে স্লুইস গেটের মুখে অতিরিক্ত পলি পড়ে গেট দিয়ে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর কপোতাক্ষ নদ খনন কাজ চলমান থাকায় পানি নিষ্কাশনের এ পথ বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে পলি অপসারণের কাজ করলেও দীর্ঘ সূত্রতার কারণে আমাদের পরবর্তী ফসল উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। তাই বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া এখন সময়ের দাবি। বর্তমানে অধিকাংশ পরিবারের ঘরে চাল নেই তাই পরবর্তী ফসল উৎপাদন না হওয়া পর্যন্ত সরকারিভাবে রেশনের সুবিধা দিলে সবাই উপকৃত হবে।
প্রধান শিক্ষক কিঙ্কর মণ্ডল জানান, বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধানের জন্য এখন কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। জলাবদ্ধতার কারণে এবছর ১০ হাজার বিঘা জমির মালিকরা ধান চাষাবাদ করতে না পেরে অধিকাংশ পরিবারের লোকজন কাজের জন্য বাহিরে অবস্থান করছে। আরও একবছর যদি চাষাবাদ না করতে পারে তাহলে বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য সবাইকে এলাকা ছাড়তে হবে। খোলপেটুয়া নদীর চেউটিয়া খালের বাঁধে স্লুইস গেট নির্মাণ করা হলে খাজরা ও বড়দল ইউনিয়নের ১০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হবে। গত ২৫ অক্টোবর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর খোলপেটুয়া নদীর চেউটিয়া খালের বাঁধে স্লুইস গেট নির্মাণের জন্য আবেদন করা হয়েছে। সেটা যদি অনুমোদন দেয়া হয় তবে তা দুই ইউনিয়নের মানুষের জন্য আশির্বাদ হয়ে দেখা দেবে।
গ্রাম চিকিৎসক নৃপেন্দ্র নাথ মন্ডল জানান, স্থায়ী সমাধানের জন্য খোলপেটুয়া নদীর চেউটিয়া খালের বাঁধে ৪ ব্যান্ড স্লুইস গেট নির্মাণ করতে হবে। বিজন সানা (আমিন) জানান, জলাবদ্ধতার কারণে চাষাবাদ না করতে পেরে আমরা চরম দুর্ভোগে আছি। রাস্তা কার্পেটিং করবে বলে বিগত এক বছর ধরে মাটি খুঁড়ে ফেলে রেখেছে। কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। কোনো মানুষ অসুস্থ হলে তাকে ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া যায় না। দুর্ভোগ থেকে উত্তরণের জন্য চেউটিয়া বাঁধে স্লুইস গেট নির্মাণ ও বর্ষা মৌসুমে সংশ্লিষ্ট খালের নেটপাটা অপসারণ করে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার পরিবারের লোকজন।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যকর্মী অরুণ কুমার রায়, সমাজ সেবক স্বপন রায়, জমির মালিক মুজিবর সরদার, হাসেম গাজী, রব্বানী সরদার, পরিতোষ মণ্ডল, কমলেশ সরদার, রুহুল গাজীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।