শ্রীপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি : মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার হুদা শ্রীপুর গ্রামে মন্দির নির্মাণের জন্য বাটুল বিশ্বাস নামে এক কৃষকের বাড়ি ভাঙচুর ও দখল চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। ওই কৃষকের সম্প্রতি কেনা জমিতে থাকা টিনশেডের আধাপাকা বাড়ির দরজা-জানালা ভেঙে বাইরে ফেলে দেয় হামলাকারীরা। এতে বাধা দেয়ায় হামলাকারীদের মারধরে চার নারীসহ অন্তত আটজন আহত হয়। ৯৯৯- কল পেয়ে স্থানীয় ফাঁড়ির পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শুক্রবার এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী কৃষক বাটুল বিশ্বাসের ছেলে বিপ্লব বিশ্বাস জানান, দুইমাস আগে তার বাবা প্রতিবেশী চাচাতো ভাই দিপংকর বিশ্বাসের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ১৩ শতক জমি কেনেন। কিন্তু শুক্রবার সকালে একই গ্রামের প্রদীপ কুমার বিশ্বাস, গৌতম বিশ্বাস, বিধান বিশ্বাস, গৌতম বিশ্বাস, সুব্রত বিশ্বাসসহ একটি গ্রæপ শাবল, কুড়ালসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের কেনা জমিতে থাকা আধা পাকা ঘরে হামলা চালায়। এ সময় মোবাইল ফোনে ভাঙচুরের ছবি তুলতে গেলে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।
তিনি জানান, তাদের লাঠির আঘাতে বাটুল বিশ্বাসের স্ত্রী শেফালী বিশ্বাস ও ভাইয়ের স্ত্রী প্রেমা রানী বিশ্বাস, ছেলে বিপ্লব বিশ্বাসের স্ত্রী রূপা সেন, প্রহ্লাদ বিশ্বাসের স্ত্রী শিখা বিশ্বাস, ছেলে বিপ্লব বিশ্বাস, পলাশ বিশ্বাস, মহিদ বিশ্বাস ও শান্তনু বিশ্বাস আহত হন।
বিপ্লব আরো জানান, ৯৯৯-এ কল দিলে স্থানীয় ফাঁড়ি থেকে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু ততক্ষণে ওই বাড়িটির অন্তত ৮টি দরজা জানালা ও গ্রিল ভেঙে ফেলা হয়। এর আগে ওই বাড়ির সামনের জমিতে পাটকাঠির বেড়া ও ওপরে টিন দিয়ে বাঁশের তৈরি একটি মন্দির নির্মাণ করে গ্রামবাসী।
তিনি বলেন, গ্রামে মন্দির হোক সেটা আমরাও চাই। কিন্তু আমাদের জমি দখল করে কেন মন্দির নির্মাণ করতে হবে? মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমরা তিল তিল করে টাকা জমিয়ে ও হালের গরু বিক্রি করে জমিটি কিনেছি। এখন গ্রামের কিছু ক্ষমতাশালী ব্যক্তি জোর করে আমাদের জমি দখল করে সেখানে মন্দির ও ক্লাব ঘর নির্মাণ করতে চান। আমরা বাধা দিতে গেলে তারা আমাদের বাড়ির মা বোনসহ অন্তত ৮ জনকে পিটিয়ে আহত করেছে। আমরা এর বিচার চাই।
এ প্রসঙ্গে ওই জমিতে সদ্য প্রতিষ্ঠিত মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার বিশ্বাস জানান, ওই জমিতে মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য গ্রামের প্রতিটি বাড়ি থেকে ৭ লাখ টাকা এবং মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর ও স্থানীয় নাকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমুউনুর রশিদ মুহিতের অনুদান মিলিয়ে মোট ৯ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছেন। ওই টাকায় জমি কেনা কথাবার্তার মাঝেই জমির মালিক বাটুল বিশ্বাসের কাছে গোপনে জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। এদিকে প্রায় ৬ মাস ধরে এখানে অস্থায়ী মন্দির করে পূজার কাজ শুরু করে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় গ্রামবাসী ক্ষুদ্ধ হয়ে ওই বাড়িটিতে ভাঙচুর চালায়।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় নাকোল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য চিন্ময় রায় বলেন, জমির সদ্য মালিক হওয়া বাটুল বিশ্বাসের ছেলেরা জমি দখল নিতে বাইরে থেকে মাস্তান ভাড়া করায় গ্রামবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়ি ভাঙচুর করেছে।
নাকোল পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (আইসি) উপ-পরিদর্শক লাল্টু রহমান বলেন, বাড়িঘর ভাঙচুরের বিষয়ে ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।