নিজস্ব প্রতিবেদক : নবজাতক কোলে নারীর চোখে মুখে ভীতি। বাঁশের সাথে দড়ি দিয়ে বাঁধা ছালা ঝুলিয়ে কাঁধে নিয়ে ছুটছে তার ছেলেরা। মাথাল মাথায় চাষির দল। কারোর মাথায় হাড়ি-পাতিল ও তল্পিতল্পা। কাঁধে মস্ত বড় ঝোলা নিয়ে মেয়ের হাত ধরে দ্রæত পায়ে ছুটছেন মা। হাঁস মুরগির ঝাঁপি কারোর মাথায়। যশোর রোড ধরে এগিয়ে চলেছেন একদল শরণার্থী। পাকিস্তানী বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের মুখে দেশ ছাড়ছেন সবাই। গন্তব্য প্রতিবেশী দেশ ভারত। ৫২ বছর পর আবারো মূর্ত হলো একাত্তরের সেই দৃশ্যপট; প্রাণ বাঁচাতে পলায়নপর শরনার্থীদের সেই বিভীষিকময় দিনের মিছিল।
১৯৭১ সালে ভারতমুখী শরনার্থীদের সেই যাত্রাকে স্মরণ করতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শুক্রবার ছিল প্রতীকি এই আয়োজন। অ্যালেন গিন্স বার্গের সেই কালজয়ী কবিতা ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ ছিল এই আয়োজনের প্রতিপাদ্য। পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী, নারী-পুরুষ ও সাংস্কৃতিক কর্মী শরণার্থী সেজে এই আয়োজনে অংশ নেন। এদিন বিকেল সাড়ে চার টায় যশোর রোডের পুলেরহাট বাজার থেকে এই যাত্রা শুরু হয়ে কৃষ্ণবাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আঙিনায় গিয়ে শেষ হয়।
প্রতীকি এই যাত্রায় অংশ নেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাসান মজুমদার, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলনসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
যাত্রা শেষে স্কুল প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয় সংক্ষিপ্ত আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ সময় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করেই সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। তিনি বলেন, ১৯৭১’র সেপ্টেম্বরে হাজার হাজার নর-নারী যশোর রোড ধরেই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। সেদিনকার স্মরণে আজ যশোর জেলা প্রশাসনের এই আয়োজন। তিনি বলেন, যশোর রোডে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি গেট নির্মাণের প্রকল্পের অনুমোদন হয়েছে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বর্তমান সরকারকে আবারো ক্ষমতায় আনতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাসান মজুমদারের সভাপতিত্বে এ সময় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন, মুক্তিযুদ্ধকালীর বৃহত্তর যশোরের মুজিব বাহিনীর উপপ্রধান অ্যাডভোকেট রবিউল আলম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এ এইচ এম মুজহারুল ইসলাম মন্টু, আরবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম ও চাঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম রেজা।
আলোচনা সভার মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক রফিকুল হাসান, যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা একরাম উদ্দৌলাহ্, বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার, মন্টু চাকলাদার, মোবাশ্বের হোসেন বাবু প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা সাধন কুমার দাস ও আহসান হাবিব পারভেজ।
সভাশেষে শেকড় যশোর আয়োজনে মৌসুমী ভৌমিকের গাওয়া ‘যশোর রোড যে কথা বলে’ গানটির ওপর ভিত্তি একটি বিশেষ গীতি নকশা পরিবেশিত হয়। সবশেষে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অন্যনান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শোয়াইব হোসেন, শহিদ কর্নেল জামিল স্মৃতি সংসদের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন দোদুল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দীপঙ্কর দাস রতন, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান বুলু, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনোতোষ বসু, সাবেক সভাপতি সাজ্জাদ গনি খাঁন রিমন, সাজেদ রহমান, ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল, সাজ্জাদুর রহমান খান বিপ্লব, তরিকুল ইসলাম তারু, রওশন আরা রাসু প্রমুখ।