নিজস্ব প্রতিবেদক : ১ জানুয়ারি যশোর তথা বাংলাদেশের অন্যতম সু প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের ৫০ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। সংস্থাটির সুবর্ণজয়ন্তী পালনে সর্বাত্মক প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু এবং রাষ্ট্রীয় ও বিএনপির দলীয় শোক কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়ে এদিনের কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়েছে। এক সপ্তাহ পরে অর্থাৎ ৭ জানুয়ারি পালিত হবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা।
মঙ্গলবার বিকেলে সংস্থাটির কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে একথা জানানো হয়। নিজস্ব কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সংস্থাটির পরিচালক ( (কর্মসূচি) কাজী মাজেদ নওয়াজ। এসময় পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) বিশ্বজিৎ কুমার ঘোষ, পরিচালক ( মাইক্রো ফাইন্যন্স প্রোগ্রাম ) আজিজুল হক ও উপপরিচালক (প্রশাসন ও মানব সম্পদ) আব্দুল জলিল খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলন শুরুতে দাঁড়িয়ে এক মিনিটি নিরবতা পালন করা হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে সংস্থাটির সংক্ষিপ্ত কার্যক্রম ও ইতিহাসসহ দিবাসটি উদযাপনের বিস্তারিত কর্মসূচি উপস্থাপন করতে গিয়ে কাজী মাজেদ নওয়াজ বলেন-জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে। এমন সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও রাষ্ট্রীয় শোক বিবেচনা করে আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন ১ জানুয়ারি ২০২৬-এর স্থলে আগামী ৭ জানুয়ারি ২০২৬ (বুধবার) তারিখ আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন-সমাজটাকে একটু বদলে দেয়ার ইচ্ছে নিয়ে ১৯৭৫ সালের শেষ দিকে যশোরের কয়েকজন যুবক গড়ে তোলেন ‘জাগরণী চক্র’ নামে একটি সংগঠন। জীবনযুদ্ধে পর্যুদস্ত হতে হতে হতোদ্যম হওয়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন তারা। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে যশোর শহরতলির চাঁচড়া জেলেপাড়ায় ১৯৭৫ সালে নিজেদের অর্থে ও স্বেচ্ছাশ্রমে তারা শুরু করেছিলেন নিরক্ষর বয়স্কদের ব্যবহারিক শিক্ষা কার্যক্রম। ১৯৭৬ সালে জাগরণী চক্র সাংগঠনিক রূপ পায়। সংস্থার প্রথম সভাপতি- যশোরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষাবিদ প্রফেসর শরীফ হোসেনকে সাথে নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা হিসাবে যাত্রা শুরু করেছিলেন সেই সময়ের রাজনীতি সচেতন তরুণ সমাজকর্মী মো. আজাদুল কবির আরজু। দারিদ্র্যমুক্ত, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের প্রায় ৮ হাজার স্টাফ এখন দেশের ৫২ জেলায় কাজ করছেন প্রায় ১১ লক্ষ সুবিধাবঞ্চিত নারী- পুরুষ, গর্ভবতী মা ও শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী ও প্রবীণ মানুষের সাথে। যশোর থেকে শুরু হওয়া এ প্রতিষ্ঠানটি এখন দেশের প্রধান কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মধ্যে অন্যতম, যা যশোরের মানুষ হিসাবে আমাদের গৌরবান্বিত করেছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পালনে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত কার্যক্রম সমূহ:
জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর উদ্যাপনের নামকরণ করা হয়েছে ‘জাগরণের ৫০ বছর’। ‘জাগরণের ৫০ বছর’ শীর্ষক অনুষ্ঠিতব্য কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে-
জাগরণের জয়যাত্রা: সংস্থার প্রধান কার্যলয়ে সকাল ৯:৩০ মিনিটে ৫০ জন সঙ্গীতশিল্পীর পরিবেশনায় জাতীয়সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন। ৫০ জন প্রান্তিক সুবিধাভোগী কর্তৃক ৫০টি পায়রা অবমুক্তকরণ ও বেলুন উড়িয়ে কর্মসূচি উদ্বোধন, ছাতিম গাছ (জাগরণ বৃক্ষ) রোপণ, থিম সংগীতের সাথে শিশুদের কোরিওগ্রাফ, সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও অতিথিবৃন্দকে সম্মাননা।
জাগরণ শোভাযাত্রা: সকাল ১০টায় জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন কার্যালয় থেকে শোভাযাত্রা শুরু হবে এবং শোভাযাত্রটি শহরের ঈদগাহ, গরীবশাহ মাজার মোড়, দড়াটানা, চৌরাস্তা, রেলরোড, চারখাম্বা, ভোলাট্যাংক রোড হয়ে মুজিব সড়ক ধরে জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন প্রধান কার্যালয়ে এসে শেষ হবে।
চিত্র জাগরণ ও জাগরণের গল্প: সকাল ১০:৩০ মিনিটে জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন কার্যালয়ে পার্শ্ববর্তী মাঠে দেশের খ্যাতিমান ২৫ জন চিত্রশিল্পী ও যশোরের ২৫ জন শিশু চিত্রশিল্পী অংশগ্রহণ করবেন ‘চিত্রজাগরণ’ শীর্ষক আর্টক্যাম্পে। একই সাথে দর্শক ও শিশু শ্রোতামন্ডলী শুনবেন জাগরণের গল্প। গল্প শোনাবেন বিশিষ্ট কবি, লেখক, বাচিকশিল্পী ও চিত্রশিল্পীগণ। এছাড়াও চারুপীঠ ও জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের কমিউনিটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
জাগরণী সমাবেশ: বিকাল ৪ টায় জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন কার্যালয়ের পার্শ্ববর্তী মাঠে অনুষ্ঠিতব্য এ আয়োজনে রয়েছে, জাগরণের ৫০ বছর শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, প্রান্তিক সুবিধাভোগী ৫ জনের জীবনকথা, সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, আর্টক্যাম্পে অংশগ্রহণকারী প্রখ্যাত ২৫ জন চিত্রশিল্পী, যশোরের বিশিষ্টজন, সংস্থার সাবেক ও বর্তমান সাধারণ পরিষদ সদস্য এবং ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে কর্মরত স্টাফ ও তাদের স্ত্রী/মা’কে সম্মাননা প্রদান। সম্মানিত অতিথি ও সুধীবৃন্দের বক্তব্য। সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিটে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জাগরণী
ফাউন্ডেশনের কমিউনিটি স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে নৃত্যানুষ্ঠান, ব্যঞ্জণ থিয়েটারের নাটিকা ‘যশস্বী আর্যপুত্র, সঙ্গীতানুষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে আতশবাজির আলোর বিচ্ছুরণ।
এই আয়োজনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন-পিকেএসএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, নেটজ পার্টনারশিপ ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড জাস্টিস’র নির্বাহী পরিচালক ড. ম্যাক্স স্টিলি। এছাড়া যশোর জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এবং সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত থাকবেন বলে আমরা আশা করছি।
উল্লেখ্য, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বছর জুড়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণে তার চলমান কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিশেষ স্বাস্থ্যসহায়তাসহ বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে বছরটিকে স্মরণীয় করে রাখতে গ্রহণ করবে বিভিন্ন কর্মসূচি।