নিজস্ব প্রতিবেদক : বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থার মধ্যেই মহাসড়ক অবরোধ করে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি করা শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি -সম্পাদককে শোকজ করেছে বিএনপি। সোমবার (০১ ডিসেম্বর) যশোর জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন স্বাক্ষরিত করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। শোকজ হওয়া নেতারা হলেন- শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাসান জহির ও সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটন। তারা দুজনই আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। বিজ্ঞপ্তিতে আগামি ৪৮ ঘন্টা মধ্যে দুই নেতাকে শোকজের লিখিত জবাব দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর আগে, গত ২৯ নভেম্বর আসনটির বিএনপির মনোনিত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি করেন যশোর -বেনাপোল মহাসড়ক অবরোধ করেন এই দুই নেতার অনুসারীরা। দীর্ঘ সময় ধরে মহাসড়কে অবস্থান কর্মসূচির ফলে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন দলীয় প্রধানের সংকটময় মূর্হতে এ ধরণের কর্মসূচি হওয়ার কারণে তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয় বিএনপিকে। পৃথক দুটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আপনাদের মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন প্রাপ্ত প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোন ধরণের সভা, সমাবেশ মিছিল, মটর সাইকেল মহড়া না করার জন্য। মৌখিক নির্দেশ অমান্য করে গত ২৯ নভেম্বর শার্শায় আপনাদের অনুসারিরা মহাসড়ক অবরোধ করে প্রার্থীর বিরুদ্ধে সভা, সমাবেশ ও কাফনের কাপড় পরে সড়কে শুয়ে পড়াসহ নানান কার্যক্রম করেছেন। দুঃখজনক বিষয় হল যখন দেশনেত্রীর গুরুতর অসুস্থতার কারণে সকল কর্মসূচী বন্ধ করা হয়েছে। সে সময় বিবেক বিবর্চিত এইসব কর্মসূচী সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখিন হয়েছে। পত্র পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড়ে দলের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করেছে। দায়িত্বশীল পদে থেকে আপনারা এর দায়ভার থেকে মুক্ত নন। এসব নিয়ন্ত্রনে ব্যর্থ হওয়ায় কেন আপনাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না; পত্র প্রাপ্তির ৪৮ ঘন্টার মধ্যে যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকনের নিকট উপস্থিত হয়ে লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, 'দলীয় মনোনয়ন না পাওয়াতে শার্শা উপজেলার সভাপতি সম্পাদক নানা কর্মসূচি করে আসছিলেন। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এ ধরণের কর্মসূচি করতে নিষেধ করেছিলাম। তার পরেও গত ২৯ নভেম্বর সড়ক অবরোধ করে কর্মসূচি করে তাদের অনুসারীরা। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। তারা এমন সময়ে কর্মসূচি করেছে; তখন দলীয় প্রধান অত্যন্ত সংকটময় মুহূর্তে চিকিৎসাধীন। তাই সমালোচনা বেশি হয়েছে। আগামি ৪৮ ঘন্টার মধ্যে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সম্পাদককে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে।' আর অভিযোগের বিষয়ে শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাসান জহির বলেন, 'শোকজের চিঠি পেয়েছি। জেলার নেতারা গতদিনের কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চেয়েছে। গতদিনের কর্মসূচিতে আমরা ছিলাম না। তার পরেও আমাদের শোকজ করা হয়েছে। দল করি, দলের সিন্ধান্ত মানতে হবে। যেভাবে জবাব চেয়েছে; সেভাবে জবাব দেওয়া হবে।' প্রসঙ্গত, সীমান্তবর্তী উপজেলা শাশা উপজেলা নিয়ে যশোর-১ আসন গঠিত। হাফ ডজন প্রত্যাশীর মধ্যে এই আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করে দলের সাবেক দফতর সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মফিকুল হাসান তৃপ্তি। এরপর থেকে এলাকায় নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ করছেন। যদিও শার্শা বিএনপির একাংশের নেতারা প্রার্থী বদলের জন্য কেন্দ্রে লিখিত আবেদন করেছেন। উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাসান জহির, সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটন এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে উপজেলা বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীদের নিয়ে এই দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত শনিবার বিকালে বেনাপোল বলফিল্ড মাঠে সমাবেশ হয়। পরে নেতাকর্মীরা যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক দিয়ে শার্শার অভিমুখী বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় অনেকে কাফনের কাপড় পরে সড়কে অবস্থান নেন। নাভারণ মোড়ে গিয়ে কর্মসুচি শেষ করেন। দীর্ঘক্ষণ এই কর্মসূচি চলাতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। বিক্ষোভ শেষে অবরোধকারীরা মহাসড়ক থেকে সরে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমালোচনা চলছে।