বিল্লাল হোসেন: যশোরে ‘সিরিয়াল কিলার’ নান্নুর সেকেন্ড ইন কমান্ড ৯ মামলার আসামি রেজাউল ইসলাম খুনের ১ মাস পার হলেও রহস্য উদঘাটন হয়নি। প্রথম অবস্থায় পুলিশ তিনটি ঘটনাকে সামনে রেখে তদন্ত করেও কোন ফল হয়নি। হারুন নামে সন্দিগ্ধ একজন আটক হলেও তার কাছ থেকে কোনো ক্লু বের করতে পারেনি পুলিশ। রিমান্ডে তিনি খুনের ঘটনার সাথে জড়িত নন বলে দাবি করেছেন। বর্তমানে রেজাউল হত্যা ঘটনার তদন্ত কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। এতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।
নিহতের স্বজনরা জানান, সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের দৌলতদিহি গ্রামের মৃত গোলাম তরফদারের ছেলে রেজাউল আওয়ামী যুবলীগের রাজনীতি করতেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর কৃষি কাজ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে তার কারো সঙ্গে দ্বন্দ্ব ছিল না। কারা কি কারণে রেজাউলকে নৃশংসভাবে খুন করলো এটা তা নিশ্চিত হতে পারছেন না। ঘটনার এক মাস পার হলেও পুলিশ হত্যা রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। ফলে নির্মম হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনা পর্দার আড়ালে থেকে যাচ্ছে। খুনিরা চিহ্নিত না হওয়ায় নিহতের পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কে রয়েছে।
নিহতের স্ত্রী শিউলী বেগম জানান, রেজাউল বাড়ির ছাদে বসে ছিলেন। হঠাৎ মোবাইল ফোনে কল আসে। এরপর তিনি বাইরে গেলে কিছুক্ষণ পরই হত্যাকাণ্ড ঘটে। খুনিরা অবশ্যই তার (রেজাউল) পূর্ব পরিচিত কেউ হবে। কারা খুন করেছে জানি না, তাই অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। পুলিশ গভীরে তদন্ত করলে খুনের রহস্য উদঘাটন হতে পারে।
স্থানীয় কিছু মানুষের মতে, রেজাউল ছিলেন কুখ্যাত মোখলেছুর রহমান নান্নুর সেকেন্ড ইন কমান্ড। বর্তমান সময়ে সরাসরি কোন অপরাধ না করলেও মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে তার চলাচল ছিল। সম্প্রতি মাদক ব্যবসায়ী নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরেই হয়তো এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু ঘটনার ১ মাস অতিবাহিত হলেও খুনের রহস্য উদঘাটন বা খুনিদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ।
এদিকে হত্যা ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে আটক দৌলতদিহি গ্রামের হারুনের স্বজনরা দাবি করেছেন, তিনি (হারুন) রেজাউল হত্যার সাথে কোনভাবে সম্পৃক্ত নয়। পুলিশ প্রকৃত খুনিদের চিহ্নিত করতে না পেরে নিরীহ মানুষকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। তাকে আটকের পর অর্থবাণিজ্যের চেষ্টা করে পুলিশ। হারুন ছাড়া সন্দিগ্ধ বল্টু নামে আরও একজনকে পুলিশ আটক করলেও অদৃশ্য কারণে গভীররাতে তাকে ছেড়ে দেয়। যা নিয়েও এলাকায় নানা সমালোচনা রয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যশোর কোতোয়ালি থানার এসআই জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, রেজাউল আগে নানা অপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে সন্ত্রাস, মাদক ও রাজনৈতিক কোন্দলকে সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। কিন্তু কোনো এখনো ক্লু মেলানো যায়নি। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে দৌলতদিহির হারুন নামে একজনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু হত্যা ঘটনার সাথে জড়িত নয় বলে দাবি করে আসছে। আরেকজনকে আটকের পর ছেড়ে দেয়া প্রসঙ্গে জানান, দুই জন এক জায়গায় বসে ছিল বলে তাকেও (বল্টু) আটক করা হয়েছিল। পরে ছেড়ে দেয়া হয়। হত্যার রহস্য উদঘাটন খুনিদের শনাক্তে তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
উল্লেখ্য, ১২ আগস্ট রাত সাড়ে ১২ টার দিকে নিজ বাড়ির সামনের রাস্তায় রেজাউল ইসলামকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। তার গলায় ৪ টি, ঘাড়ে ও বুকে ৫ টিসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ১৩ টি ধারালো অস্ত্রের কোপের চিহ্ন ছিল। এর আগে ১৯৮৯ সালে রেজাউলের বাবা ও ভাই খুন হয়েছিল।