শেখ কাজিম উদ্দিন, বেনাপোল (যশোর): ভারতে পাচারের শিকার হওয়া ১৭ কিশোর-কিশোরী দীর্ঘদিন পর বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে স্বদেশে ফিরেছে। বুধবার সন্ধ্যায় ভারত-বাংলাদেশ সরকারের দেয়া ট্র্যাভেল পারমিটের মাধ্যমে হরিদাস বর্ডার দিয়ে ‘পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ’ তাদেরকে বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
তারা বিভিন্ন সময়ে দালালের প্রলোভনে পড়ে অবৈধভাবে সীমান্ত পথে ভারতে পাচার হয়। পরে তারা ভারতীয় পুলিশের হাতে আটক হলে আদালতের নির্দেশে জেলখানায় পাঠানো হয়। সেখান থেকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এনজিও সংস্থা আদালতের মাধ্যমে তাদের মুক্ত করে নিরাপদ আবাসস্থলে রাখে। অবশেষে ভারত-বাংলাদেশের এনজিও সংস্থার যৌথ উদ্যোগ ও দুই দেশের সরকারের দেয়া ট্র্যাভেল পারমিটের মাধ্যমে তাদের এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন হয়।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইলিয়াছ হোসেন মুন্সী জানান, দেশে ফেরার পর ইমিগ্রেশনে তাদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই ও আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাসেল মিয়া জানান, থানার আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদের স্ব-স্ব পরিবারের কাছে হস্তান্তরের জন্য বাংলাদেশের এনজিও সংস্থা- জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার ৫ জন, রাইটস যশোর ৭ জন ও জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি ৫ জনকে গ্রহণ করেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ারের ফিল্ড ফ্যাসিলিটেটর শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, ভারতে পাচারের শিকার এ কিশোর-কিশোরীরা চাইলে পাচারকারী দালালদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে মানবাধিকার সংস্থাগুলো পূর্ণ সহযোগিতা করবে।
স্বদেশে ফেরত আসা ১৭ জন হচ্ছে- গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার মৌচাক ঠাকুরপাড়া ফলকা হাজীবাড়ির দেলোয়ার হোসেন সরদারের মেয়ে অবন্তি দাস ওরফে দীপা মনি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদরের আলীনগর রেলবাগান এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে মুঈন খান, হবিগঞ্জ জেলা সদরের দক্ষিণ তেঘরিয়া এলাকার মাহবুব আলমের ছেলে নূর আলম, গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়ার ভাঙ্গারহাট কালিকাবাড়ি এলাকার দিলিপ কুমার মন্ডলের ছেলে হৃদয় মন্ডল, কুষ্টিয়া জেলা সদরের ষষ্টিপুর বেলঘরিয়া গ্রামের ইউসুফ শেখের ছেলে ইমরান শেখ, লক্ষ্মীপুর জেলা সদরের পশ্চিম লক্ষ্মীপুর এলাকার ইউসুফ আলীর ছেলে মেহেদী হাসান, খুলনা জেলা সদরের দক্ষিণ টুটপাড়া ২নং ক্রস রোডের বাসিন্দা ইয়াসিন আরাফাত বসু মোল্লার ছেলে নাহিদ মোল্লা, নড়াইল জেলার কালিয়া থানার নওগ্রামের গিয়াস শেখের ছেলে ফয়সাল শেখ, বাগেরহাট জেলার শরণখোলা থানার জনতা বাজার মলিয়া রাজাপুর গ্রামের বিল্লাল হাওলাদারের ছেলে রানা হাওলাদার, লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ থানার চামটাহাট মৌজা সেকহাটি গ্রামের মহীন্দ্রনাথ রায়ের মেয়ে মল্লিকা রাণী, কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের জয়সাইলি চৌদ্দসাটা এলাকার কামাল উদ্দিনের মেয়ে শামিমা আক্তার, রাঙ্গামাটি জেলা সদরের চম্পাদক নগরের সইদুল ইসলামের মেয়ে সারা জান্নাত ওরফে শান্তা আক্তার, লক্ষ্মীপুর জেলা সদরের পশ্চিম লক্ষ্মীপুর এলাকার ইউসুফ আলীর মেয়ে ইমু আক্তার, পাবনা জেলার সাঁথিয়া থানার জরযাছার চন্দ এলাকার আমিরুল ইসলামের মেয়ে মিথিলা ওরফে সুমাইয়া আক্তার, বাগেরহাট জেলার শরণখোলা থানার জেনেরপাড়া নালবুনিয়া গ্রামের মন্টু জমাদ্দারের ছেলে সাইম জমাদ্দার, নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর থানার পানিহারা মনপুর গ্রামের সাহানু সরদারের ছেলে কমল সরদার ও পাবনা জেলার সাঁথিয়া থানার বনগ্রাম ভাটুমিয়াপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের মেয়ে নুরজাহান খাতুন।
তারা যেসব আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলো- নদীয়া জেলার চিলড্রেন গার্লস হোম, নদীয়া জেলার ঘূর্ণী জুভেনাইল অবজারভেশন বয়েজ হোম, বিরামপুরের কেদাই কাজী নজরুল ইসলাম চিলড্রেন হোম, বারাসাতের কিশলয় চিলড্রেন হোম, উত্তর ২৪ পরগনার আরকেভি মিশন হোম, কুচবিহারের শহীদ বন্ধনা স্মৃতি আবাস, লিলুয়াহ এর এএমএম হোম, সল্টলেকের সুকণ্যা হোম, উত্তর ২৪ পরগনার এশিয়ান সহযাত্রী সৃষ্টী হোম, বহরমপুর মেন্টাল হাসপাতাল ও লিলুয়াহ এর এসএমএম হোম।