নিজস্ব প্রতিবেদক : কোটি ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ছাড়াই আসামি ধরতে গিয়ে ‘ভুয়া সিআইডি’ মনে করে যশোর সিআইডির চার সদস্যকে গণপিটুনি দিয়েছে জনতা। এদের মধ্যে শহিদুল ইসলাম নামে এক কনস্টেবলের অবস্থা গুরুতর। ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার সন্ধ্যার দিকে যশোর শহরতলীর রাজারহাট মোড়ে।
সিআইডি পুলিশের বিরুদ্ধে তুষার (২৫) নামে এক যুবককে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগ আনা হলেও তা অস্বীকার করেছে সিআইডি পুলিশ। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার সিআইডি পুলিশ আলাদা দুটি মামলা করেছে। উভয় মামলায় তুষার নামে ওই যুবককে আসামি করা হয়েছে। তিনি রাজারহাট এলাকার মাসুদ সরদারের ছেলে।
একটি মামলা করেছেন সিআইডির উপপরিদর্শক তরিকুল ইসলাম। এই মামলায় অজ্ঞাত ৫০/৬০জনকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় অভিযুক্ত তুষারকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে এবং সরকারি কাজে বাধা দেয়া হয়েছে। অপরটি করেছেন উপপরিদর্শক হাবিবুর রহমান। এটি মাদক আইনে মামলা হয়েছে।
সিআইডি পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে এসআই হাবিব, এসআই তরিকুল ইসলাম, এএসআই মো. জাহিদ হোসেন এবং কনস্টেবল শহিদুল ইসলাম নিয়ে গঠিত একটি দল রাজারহাট এলাকায় অভিযান চালান। এসময় তারা ওই এলাকার মাসুদ রানার ছেলে তুষারকে নিয়ে কাশ্মীরি বিরিয়ানি হাউজ নামে একটি দোকানের মধ্যে নিয়ে যান। সেখানে তাকে তল্লাশি করে। এক এক পর্যায়ে তার কাছ থেকে ২০ পিচ ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়া গেছে বলে দাবি করে সিআইডি। এসময় তুষার সিআইডি সদস্যদের ‘ভুয়া পুলিশ’ বলে চিৎকার শুরু করে। এসময় স্থানীয় কয়েকজন সিআইডি পুলিশদের উপর হামলা চালায়। পরবর্তীতে সংবাদ পেয়ে যশোর কোতয়ালি থানা পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। আহতদের মধ্যে কনস্টেবল শহিদুলের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রাজারহাট এলাকার চা দোকানি মোতাহার হোসেন বলেন, ‘কাশ্মীরি বিরিয়ানি হাউজের সামনে থেকে মারামারি করতে করতে আমার দোকানের সামনে চলে আসে। সিআইডি পুলিশ সদস্যরা ছিলেন সাদা পোশাকে। তারা যখন তুষারকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিলেন সে সময় তুষার বলতে থাকে, ‘আমার টাকা মোবাইল নিয়ে চলে যাচ্ছে ভুয়া সিআইডি। আমাকে বাঁচাও।’ সে সময় উপস্থিত কিছু মানুষ উত্তেজিত হয়ে তাদের উপর হামলা শুরু করে। ঘটনার সময় সিআইডির দু’ সদস্য পালিয়ে যায়। আর ঘটনাস্থলে দু’জনকে বেধড়ক পিটিয়েছে। পরে পুলিশ আসলে ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। কোতয়ালি থানার এসআই অনুপ কুমারসহ বেশ কয়েকজন সেখানে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং আহত কনস্টেবল শহিদুলকে উদ্ধার করে প্রথমে সিআইডি অফিসে এবং পরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
স্থানীয় কয়েকজন জানায়, তুষারের নামে আগের মাদকের কোন মামলা নেই। তবে মারামারিসহ কয়েকটি মামলা রয়েছে। সে ছাত্রলীগের কর্মী বলে বলতে থাকে অনেকে। সিআইডি সদস্যদের অফিশিয়াল কোন পোষাক বা ‘কোটি’ থাকতো তাহলে এই ধরণের ঘটনা ঘটতো না।
এদিকে অভিযুক্ত তুষারের দাবি ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করায় মারামারি সূত্রপাত হয়। তাকে একটি মোবাইল ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, হঠাৎ দুই ব্যক্তি তাকে ধরে কেয়া হোটেলের ভিতর নিয়ে যায়। এরপর পকেটে কি জানতে চাইলে তিনি পকেটে থাকা দুটি ফোন ও নগদ ৫ হাজার টাকা বের করে দেন। একপর্যায়ে ওই দুই ব্যক্তির একজন মোবাইল ও টাকা নিয়ে চলে যেতে গেলে তিনি প্রতিবাদ করেন। এসময় একজন তার হাত থাকা একটি পোটলা দেখিয়ে বলে ‘তোর কাছে ইয়াবা পাওয়া গেছে’। এসময় আমি তাকে ঘুষি মারলে স্থানীয়রাও মারপিটে অংশ নেয়।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিআইডি পুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার মোসাঃ সিদ্দিকা বেগম। তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যরা অভিযানে গিয়েছিলেন। তারা কাউকে অহেতুক ফাঁসাতে যাবে কেন? তুষার নামে একজনকে মাদকসহ আটক করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে মামলাও আছে।
তিনি আরো বলেন, এ ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকারি কাজে বাঁধা ও মাদক ব্যবসার অভিযোগে তুষারের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। অভিযুক্তদের ধরতে যশোর কোতয়ালি পুলিশ কাজ করছে।
এই ঘটনার পর থেকে রাজারহাট মোড়ে মোড়ে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই যারা নিয়মিত ওই বাজারে উঠাবসা করতেন, তারা ভয়ে অনেকেই মোড়ে আসছেন না। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, বুধবার রাতে আব্দুল খালেকের ছেলে শাওনকে আটক করে নিয়ে যায় সিআইডি পুলিশ। রাতেই তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানাগেছে।