Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পথ খোঁজার প্রতিশ্রুতি ১১ পশ্চিমা দেশের

এখন সময়: বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর , ২০২৫, ১০:২৪:৪৪ পিএম

 

স্পন্দন ডেস্ক: বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গারা যে নিজেদের মাতৃভূমি মিয়ানমারের রাখাইনে ফিরতে চায়, সে কথা তুলে ধরে তাদের প্রত্যাবাসনের পথ খুঁজে বের করার অঙ্গীকার জানিয়েছে পশ্চিমা বিশ্বের ১১ দেশ।

রোহিঙ্গা সংকটের আট বছর পূর্তিতে সোমবার ঢাকায় দেশগুলোর মিশন এক যৌথ বিবৃতিতে এ সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ফ্রান্স দূতাবাস তাদের এক্স হ্যান্ডেল ও ফেইসবুক পেইজে ওই যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে। ফ্রান্স ছাড়াও বিবৃতিদাতা দেশগুলোর মধ্যে আছে অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, যুক্তরাজ্য, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড ও ফিনল্যান্ড।

দেশগুলো বলছে, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে চলমান মানবিক সংকটের সমাধানে আগামী মাসে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠেয় উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আট বছর পূর্তিতে (রোহিঙ্গা সংকটের) আমরা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সেই কর্মকাণ্ডকে স্মরণ করি, যার ফলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ব্যাপকভাবে বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন, এবং বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরে নতুন নতুন আগমন অব্যাহত রয়েছে।

“রোহিঙ্গারা তাদের চলমান দুঃখ-কষ্ট ও বাস্তুচ্যুতির মধ্যেও যে দৃঢ?তা ও সহনশীলতা দেখিয়েছে, আমরা তা স্বীকার করি, বিশেষ করে যখন রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা ও মানবিক পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে।”

দেশগুলো বলছে, “আমরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই, যারা রোহিঙ্গাদের–নতুন যারা আসছে তাদেরসহ–আশ্রয় ও নিরাপত্তা দিচ্ছে এবং জীবন রক্ষায় মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।”

বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা নিজেদের মাতৃভূমিতে ফিরতে চায়, সে কথা তুলে ধরে এগারো দেশ বলছে, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের প্রত্যাবাসনের পথ খুঁজে বের করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে সীমান্ত পেরিয়ে বাস্তুচ্যুতি এখনও অব্যাহত রয়েছে।

“অনেক রোহিঙ্গা রাখাইনেই অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত। তাছাড়া মিয়ানমারে এখনও এমন পরিবেশ তৈরি হয়নি যাতে করে সেখানে তাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, মর্যাদার সঙ্গে ও টেকসইভাবে প্রত্যাবাসন সম্ভব।”

দেশগুলো বলছে, “এই শর্তগুলো (প্রত্যাবাসনের) কেবল তখনই পূরণ হতে পারে, যখন বাস্তুচ্যুতির মূল কারণগুলো সমাধান করা যাবে। আর সেজন্য প্রয়োজন একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল মিয়ানমার।

“তাই আমরা স্বীকার করি, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য এখনই কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির সহায়ক প্রচেষ্টাকে জরুরি ভিত্তিতে সমর্থন করা প্রয়োজন বলে আমরা সকল পক্ষকে জোর দিয়ে অনুরোধ করছি।”

বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সেই ঢলের শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট; এরপর কয়েক মাসের মধ্যে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে ওই এলাকার ক্যাম্পে বসবাস করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।

জাতিসংঘ সে সময় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর এই হত্যা ও নির্যাতনকে চিহ্নিত করেছিল ‘জাতিগত নিধনের ধ্রুপদী উদাহরণ’ হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারও রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো ওই হত্যাযজ্ঞকে ‘জেনোসাইড’ হিসাবে বর্ণনা করেছে।

বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দেওয়ার পর থেকে কক্সবাজার ও উখিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বাঁশ আর প্লাস্টিকের খুপড়ি ঘরে বসবাস শুরু করে রোহিঙ্গারা। উখিয়ার কুতুপালং পরিণত হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় মিয়ানমারের অং সান সু চি সরকার। ওই বছর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতেও সই করে।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা চলার এক পর্যায়ে ২০১৯ সালে দুই দফায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের প্রতিশ্রুতিতে রোহিঙ্গারা আস্থা রাখতে না পারায় সেই চেষ্টা ভেস্তে যায়।

এরপর আসে করোনাভাইরাস মহামারী, রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগে ঢিল পড়ে। বিশ্বজুড়ে সেই সঙ্কটের মধ্যেই ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সু চির দ্বিতীয় দফার সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন সামরিক জান্তা জেনারেল মিন অং হ্লাইং।

এখন পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আর সেভাবে আলোচনায় নেই।

সামরিক জান্তা মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলের কয়েক দিন আগে চীনের নেতৃত্ব প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছিল। তার চূড়ান্ত ফল আর পাওয়া যায়নি।

ওই সময় বাংলাদেশ আশা করেছিল, ২০২১ সালের দ্বিতীয়ার্ধে হয়ত প্রত্যাবাসন শুরু করা যাবে। সেই পরিকল্পনা আর আলোর মুখ দেখেনি।

মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে ১১ দেশের বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা ক্রমবর্ধমান সহিংসতা (মিয়ানমারে) এবং সামরিক শাসন ও অন্যান্য সশস্ত্র পক্ষের দ্বারা সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানাই। এবং অবিলম্বে সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ করতে এবং মানবিক সহায়তার নিরাপদ ও বাধাহীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে পুনরায় আহ্বান জানাচ্ছি।

“আমরা আরও আহ্বান জানাই, (মিয়ানমারের) সামরিক শাসক যেন অন্যায়ভাবে সেখানে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দেয়। আমরা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন এবং অন্যান্য গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে দৃঢ?ভাবে সমর্থন দিতে প্রতিশ্রুতিব্ধ।”

যৌথ বিবৃতি দেওয়া দেশগুলো বলেছে, “আমরা বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব, যাতে মিয়ানমারের পরিস্থিতি ও বাংলাদেশে সম্পর্কিত মানবিক সংকটের দিকে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত থাকে। এর মধ্যে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে আসন্ন উচ্চ-পর্যায়ের সম্মেলনও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

“আমরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি টেকসই সমাধানের জন্য অ্যাডভোকেসি করব। যেমন—রোহিঙ্গাদের আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধি করা, বিশেষ করে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মানবিক সহায়তার তহবিল কমে আসার প্রেক্ষিত্রে তাদের ভবিষ্যতে মিয়ানমারে ফেরার জন্য প্রস্তুত করা। আমরা কক্সবাজারের স্থানীয় বাংলাদেশি জনগণকেও সমর্থন অব্যাহত রাখব, যারা উদারতার সঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন।”

বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা রোহিঙ্গাদের অর্থবহ অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার গুরুত্ব তুলে ধরছি। যাতে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণে ক্ষমতাবান হতে পারে এবং বাংলাদেশে অবস্থানকালে নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও গঠনমূলক জীবন যাপন করতে পারে।

“আট বছর পরও এ সংকটের দীর্ঘমেয়াদি টেকসই সমাধান খুঁজে বের করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও বাংলাদেশের পাশে অটলভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা এই সংকটের মূল কারণগুলো সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

রোহিঙ্গা সংকটের আটবছর পূর্তিতে কক্সবাজারে চলছে রোহিঙ্গা অংশীজন সংলাপে। সেখানে এ সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য সাত দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেছেন, “রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান নিপীড়ন ও বাস্তুচ্যুতি থামাতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।”

মুহাম্মদ ইউনূস উত্থাপিত সাত দফা প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ প্রণয়ন; দাতাদের অব্যাহত সমর্থন; মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ও আরাকান আর্মির কাছে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও জীবিকা নিশ্চিত করার আহ্বান; রোহিঙ্গাদের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ ও অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা; আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা; গণহত্যার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক আদালতে জবাবদিহিতা ত্বরান্বিত করা।

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)