বাগেরহাট প্রতিনিধি : চারটি সংসদীয় আসন বহাল রাখার দাবিতে রোববার (২৪ আগস্ট) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৮ঘন্টা বাগেরহাট জেলা সদরসহ ৯টি উপজেলায় সর্বাত্বক হরতাল ও মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি। কোন অপ্রতিকর ঘটনা ছাড়াই হরতাল ও অবরোধ চলাকালে জেলা শহরসহ ৯টি উপজেলার সদরে সব ধরনের যানবাহন চলাচল, দোকানপাট, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি অফিস ও স্কুল কলেজে ক্লাস বন্ধ ছিল। মোংলা বন্দরে জেটিতে পন্য ওঠানামা ও পরিবহনও বন্ধ ছিল। মোংলা ইপিজেড ও শিল্পাঞ্চালেও কোন কাজ হয়নি। মোংলা- খুলনা, মোংলা-ঢাকা, বাগেরহাট-ঢাকা, খুলনা-বাগেরহাট-বরিশার, সাইনবোর্ড-শরণখোলা মহাসড়কসহ জেলার সব উপজেলা সড়কগুলোতেও দূরপ্লøাসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এমনকি হরতাল ও মহাসড়ক অবরোধ চলাকালে জেলার ছোট বড় নদীর খেয়া ও সড়ক বিভাগের ফেরীও চলাচল করেনি। এরফলে মোংলা বন্দরসহ বাগেরহাট জেলা সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৮ঘন্টা সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। হরতাল ও মহাসড়ক অবরোধ নিয়ে ব্যপক প্রচারনা চালানোর ফলে লোকজন ঘর থেকে তেমটা বের হয়নি। তবে, এদিন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরিক্ষা থাকায় পরিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তাদের পায়ে হেটে পরিক্ষা কেন্দ্রে আসতে হয়েছে। একইদিন ঢাকায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিলসহ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বাগেরহাটের বিক্ষুব্দ জনতা।
হরতাল ও মহাসড়ক অবরোধ চলাকালে সাবেক সিনিয়র সচিব মশিউর রহমান, সাবেক সিনিয়র সচিব ড. ফরিদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় বিএনপির গবেষনা সম্পাদক শামিমুর রহমান শামীম, বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহবায়ক প্রকৌশলী এটিএম আকরাম হোসেন তালিম, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম, যুগ্ম আহবায়ক ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম, যুগ্ম আহবায়ক খাদেম নিয়ামুন নাসির আলাপ, সাবেক এমপি শেখ মুজিবর রহমান, বিএনপি নেতা প্রকৌশলী মাসুদ রানা, শেখ কামরুল ইসলাম গোরা, শেখ শাহেদ আলী রবি, সৈয়দ নাসির আহমেদ মালেক, জেলা যুবদলের সাবেক সাধারন সম্পাদক সুজন মোল্লা, জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা রেজাউল করিম, নায়েবে আমীর এ্্যাডভোকেট শেখ আব্দুল ওয়াদুদ, জামায়াতের জেলা সেক্রেটারী শেখ মোহাম্মদ ইউনুস, জেলা জামায়াতের যুব বিষয়ক সম্পাদক মঞ্জুরুল হক রাহাত, জেলা জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ আব্দুল আলীম দলীয় নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার হাজার হাজর নারীপুরুষদের নিয়ে জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
কর্মসূচি চলাকালে নের্তৃবৃন্দ বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন রয়েছে। বর্তমান সিইসি আওয়ামাীলীগ ও ভারতে গ্রেসক্রিপশন সংসদ নিবাচন বানচাল করতে কাজ করছে। ভারতের সিদ্ধান্তেই বাগেরহাটের আসন কমিয়ে তিনটি আসন করেছেন, যেটা বাগেরহাট জেলাবাসী কিছুতেই মেনে নিবে না। বাগেরহাটকে উন্নয়ন বঞ্চিত করতে পরিকল্পিক ভাবে একটি কমানোর প্রস্তাব করেছে নির্বাচন কমিশন। সোমবার শুনানীতে নির্বাচন কমিশন জেলার চারটি সংসদীয় আসন বহাল না করলে মঙ্গলবার থেকে অনিদৃষ্টকালের জন্য মোংলা আন্তজাতিক সমুদ্র বন্দরের পন্য ওঠানামা বন্ধ করে বাগেরহাট জেলাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন করে দেয়া হবে। এতে করে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে দেশের আমদানী রপ্তানী বানিজ্য বন্ধ হলে এর দায়দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকাকেই নিতে হবে। সিইসি তাঁর এমন হটকারী সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে অচিরেই নির্বাচন কশিশন অফিস ঘেরাও করে রাখা হবে বলেও হুশিয়ারী দেন বক্তারা।
গত ৩০ জুলাই দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন কমিশন আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি আসন কমিয়ে জেলায় তিনটি আসন করার প্রস্তাব দেয়। এরপর থেকেই বাগেরহাট জেলাবাসী ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। এরপর থেকে বিএনপি জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি গঠন করে লাগাতর কর্মসূচি পালন করে আসছে।