নকিব সিরাজুল হক, বাগেরহাট : বাগেরহাট শহর দেশের প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও ৮০ ভাগ সড়কই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। খানাখন্দে ভরা নাজুক সড়ক অবকাঠামো। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় বাগেরহাট পৌরসভার অধিকাংশ সড়ক এখন ভয়াবহ দুরাবস্থার মধ্যে রয়েছে। সাড়ে ৬শ বছর আগে হযরত খানজাহানের (রহ;) সৃষ্ট খলিফাতাবাদ নগরের বাগেরহাট শহর ১৯৫৮ সালে পৌরসভায় রূপান্তরিত হয়। ১৫ দশমিক ৮৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই পৌরসভা ১৯৯১ সালে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়। পৌরসভার ৯ ওয়ার্ডের ১৭ মহল্লায় বর্তমানে বসবাস করেন প্রায় দুই লাখ মানুষ। ইউনোস্কো ঘোষিত মসজিদের এই শহর দীর্ঘদিন ধরে সড়কগুলো যান চলাচলের অযোগ্য থাকায় নাগরিক ভোগান্তির পাশাপাশি বাগেরহাট শহরের ব্যবসা-বাণিজ্যেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা থাকায় সামান্য বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে বাগেরহাট পৌর এলাকা।
বাগেরহাট পৌরসভার নূর মসজিদ থেকে এলজিইডি মোড়, রাহাতের মোড় থেকে মুনিগঞ্জ ব্রিজ, পুরনো বাজার থেকে সম্মিলনী স্কুল রোড, নূর মসজিদ থেকে সরকারি মহিলা কলেজ রোড, মুনিগঞ্জ থেকে হাঁড়িখালী রোড, সরকারি বালিকা বিদ্যালয় রোডসহ শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলো এখন অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচলেরও অযোগ্য। শুধু প্রধান সড়ক নয়, শহরের অভ্যন্তরীণ এলাকার রাস্তা, যেমন খারদ্বার, সাহাপাড়া, বাসাবাটি, দশানী, গোবরদিয়া, সোনাতলা, সরুই এলাকাতেও একই অবস্থা। এসব সড়কে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে, কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। ফলে সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত ছোট-বড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। শহরের পানি নিষ্কাশনের জন্য শহর রক্ষা বাঁধের নিচে কয়েকটি গেট থাকলেও, দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সেগুলো এখন কার্যত অকেজো। ফলে বৃষ্টির পানি নদীতে যেতে পারছে না। এছাড়া শহরের অভ্যন্তরের ড্রেনগুলো অধিকাংশ জায়গায় ময়লা-আবর্জনায় বন্ধ হয়ে আছে। যা নিয়মিত পরিষ্কার না হওয়ায় পানি চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে পড়েছে। সেই সাথে শহরের ভেতরে ছড়িয়ে থাকা পাঁচটি খালের অধিকাংশই প্রভাবশালীদের দখলে। অবশিষ্ট যেটুকু খাল রয়েছে, সেটিও আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি শেখ শাহেদ আলী রবি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাগেরহাট পৌরসভার সড়কগুলোর প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নতুন করে নির্মাণ না হওয়ায় পৌরসভার বাসিন্দাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা ও ক্ষোভ।
বাগেরহাট শহরের কলেজ রোডের বাসিন্দা মশিউর রহমান সেন্টু বলেন, পৌরবাসী বহুদিন ধরে শুধু শুনছি উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু কাক্সিক্ষত মানের উন্নয়ন এখনো চোখে পড়ছে না।
বাগেরহাট স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক ও পৌরসভার প্রশাসক ডা, ফখরুল হাসান বলেন, বাগেরহাট পৌরসভার রাস্তাঘাট সংস্কার ও নতুন করে নির্মাণের লক্ষ্যে বর্তমানে তিন প্রকল্পের আওতায় কাজ চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে পৌরসভার সড়ক সমস্যার অনেকটা সমাধান হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।