শাকিলা ইসলাম জুঁই সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা ‘ল কলেজে’র নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় আরো ১০ আইনজীবীকে বিবাদী শ্রেণিভুক্ত করার প্রার্থনা করা হয়েছে। বুধবার সাতক্ষীরা সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে এই দরখাস্ত করেন, অ্যাডভোকেট আব্দুস শাকুরসহ ১০ আইনজীবী। আদালত শুনানি শেষে আবেদন গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট শেখ ই,জে,এস হাসীব।
আদালতে দাখিলকৃত দরখাস্তের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, আমরা আইনজীবীগণ সাতক্ষীরা “ল” কলেজের বিগত ১৯ জুলাই ২০২৫ তারিখের প্রভাষক নিয়োগ পরীক্ষার্থী ছিলাম। আমরা লিখিত ও মৌখিক উভয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। কিন্তু পরীক্ষাকালীন সময়েই আমরা দেখি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২ সালের চাকুরির শর্তাবলী লঙ্ঘন করে নিয়োগ বোর্ড গঠন করা হয়। শিক্ষক প্রতিনিধি দুইজন উপস্থিত ছিলেন না। আর কয়েকজন সদস্য আইনে স্নাতকও নন, যা স্পষ্টতই বিধিবিরুদ্ধ।
পরীক্ষাকালীন সময়ে এক পক্ষকে সুযোগ দিয়ে পক্ষপাতমূলক আচরণ করা হয়, যা আমরা সাথে সাথেই কলেজের অধ্যক্ষকে অবহিত করি। আমাদের অভিযোগের ভিত্তিতে অধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট রবিউল ইসলাম খান নিজেই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করেন এবং ২৪ জুলাই ২০২৫ তারিখে লিখিতভাবে বোর্ড পুনর্গঠনের ঘোষণা দেন।
কিন্তু বিস্ময়ের বিষয়, ২০ জুলাই ২০২৫ তারিখে গোপনে বেআইনিভাবে বাতিলকৃত নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয় এবং ল কলেজ অধ্যক্ষের স্ত্রী অ্যাডভোকেট হাসনা হেনা, অ্যাডভোকেট ফেরদৌসি আরা লুসিসহ সাতজনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানানো হয়।
এরপর আমরা জানতে পারি, অধ্যক্ষ নিজেই আবার সেই প্রভাষক পদে নিয়োগ বাতিলপ্রাপ্তদের দিয়ে আদালতে মামলা করিয়ে, আমাদের কোনো জবাব বা অংশগ্রহণের সুযোগ না দিয়েই একতরফা রায় আদায়ের ষড়যন্ত্র করছেন।
আমরা মনে করি, এটি শুধুমাত্র অনিয়ম নয়, বরং একটি সুস্পষ্ট দুরভিসন্ধিমূলক (মেলাফাইড ইনটেনশন) পরিকল্পনা, যার মাধ্যমে প্রকৃত পরীক্ষার্থীদের অধিকার হরণ, ন্যায্য চাকরি থেকে বঞ্চিত করে, অবৈধভাবে একটি নিয়োগ চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চলছে।
আমরা এই অনিয়ম ও দুর্নীতির বিচার দাবি করছি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, যেন বিষয়টি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়।
এদিকে,গত সপ্তাহে একই আদালতে দেওয়ানি ৩২৯/২০২৫ নম্বরের একটি মামলা দায়ের করেন, অ্যাডভোকেট ফেরদৌসি আরা দিং। মামলায় সাতক্ষীরা ‘ল কলেজে’র অধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট রবিউল ইসলাম খান, কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলহাজ ডাক্তার মিনহাজউদ্দিনসহ ১০ জনকে বিবাদী করা হয়েছে। মামলায় বাদী পক্ষ অভিযোগ করেছেন সাতক্ষীরা ‘ল কলেজে’র অধ্যক্ষ ও কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতিসহ অন্যান্য সদস্যরা নিয়ম অনুযায়ী গত ২০ জুলাই তাদেরকে কলেজের পুর্নকালীন প্রভাষক পদে নিয়োগ প্রদান করেন। এরপর কোন রকম নোটিশ ছাড়াই ২৪ জুলাই তাদের সাতজনের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। যেটা সম্পুর্ণ বেআইনি।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা ‘ল কলেজে’র অধ্যক্ষ ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট রবিউল ইসলাম খান মামলার বিষয়টি অবগত আছেন মন্তব্য করে বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রভাষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ত্রুটি ছিলো। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ল কলেজের প্রভাষক হতে হলে তাকে ওই কলেজের প্রভাষক পদে নিয়মিতভাবে কমপক্ষে তিন বছর শিক্ষকতা করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে কিন্তু আমরা এটা উল্লেখ না করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ায় অনেকেই পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছিলেন। এবং যে সাতজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো তারা কেউ তিন বছরের নিয়মিত চাকরির মধ্যে নেই। যে কারণে তাদের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।
নিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে বিষয়টি আগে কেনো দেখা হয়নি এমন জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা ও নিয়োগ প্রদান সবই করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বোর্ড।