বিল্লাল হোসেন: যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নের বারীনগর সাতমাইল এলাকায় মহাসড়কের পাশে একাধিক চোরাই তেলের দোকান বসানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চোরাই তেলের ব্যবসার মূলে রয়েছেন ৫ ভাইয়ের সিন্ডিকেট। প্রতিদিন অসংখ্য ট্যাংকলরিসহ বিভিন্ন গাড়ির চালকেরা এসব দোকানে কম দামে তেল বিক্রি করে। চোরাই তেলের ব্যবসা করে অসাধুরা লাভবান হচ্ছেন। স্থানীয় ক্যাম্পের পুলিশ বলছে, খুপড়ি দোকানে চোরাই তেলের ব্যবসা বন্ধে মাঝে একদিন অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, যশোর ঝিনাইদহ মহাসড়কের বারীনগর সাতমাইলের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে চোরাই তেলের দোকান। এলাকার প্রভাবশালীরা অবৈধ এই ব্যবসার সাথে জড়িত। তারা সড়কের পাশের সরকারি জমি দখল করে টিনের তৈরি এসব খুপড়ি দোকান ঘর গড়ে তুলেছে। ঘরের সামনে কিছু তেলের ড্রাম ও পাইপ ঝুলানো রয়েছে। এসব দোকানে ট্যাংকলরিসহ বিভিন্ন গাড়ির চালকরা কম দামে সেখানে তেল বিক্রি করে।
সূত্র জানায়, মালিককে না জানিয়ে চুরি করে চালকরা প্রতি লিটার তেল বিক্রি করে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে। এতে করে চোরচক্র ও চালকরা লাভবান হলেও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গাড়ির মালিকরা।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, বারীনগর সাতমাইলের বিভিন্ন স্থানে ৮ টি চোরাই তেলের দোকান রয়েছে। এরমধ্যে কাজী নজরুল ইসলাম কলেজের পাশে ১ টি, সাতমাইল বাজারে প্রবেশ মুখে ২ টি , মানিকদিহি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশেপাশ ৪ টি ও মানিকদিহি গ্রামের রাস্তায় ১ টি দোকান।
এলাকাবাসী আরও জানান, শাহবাজপুর গ্রামের আশানুর প্রথমে তেলের খুপড়ি দোকান বসিয়েছিলেন চুড়ামনকাটি উত্তরপাড়ার ঈদগাহ সংলগ্ন ফাঁকা জায়গায়। বর্তমানে তিনি দোকান বসিয়েছেন মানিকদিহি গ্রামের মধ্যে। মানিকদিহি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশপাশের দোকানগুলো আশানুরের অন্য ৫ ভাই মিলে নিয়ন্ত্রণ করছেন। তারা হলেন শাহবাজপুর গ্রামের আলতাফ, আনিসুর, আলী হোছেন, আখতার ও আনতার। এছাড়া সাতমাইল বাজারের প্রবেশ মুখে চোরাই তেলের দোকানের মালিক হলেন উত্তর ললিতাদহ (বেলেডাঙ্গা) গ্রামের রেজাউল ইসলাম ওরফে রেজা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রত্যেক দোকানে মাসিক বেতন দিয়ে ২/৩ জন করে কর্মচারী রাখা হয়েছে। তাদের কাজ হলো ট্যাংকলরি ও বিভিন্ন গাড়ির ট্যাংক থেকে তেল নামানো। রাত-দিন সব সময় চোরাই তেলের এসব দোকান খোলা থাকে। কর্মচারীরা তেল নামানোর কাজে ব্যস্ত থাকেন। আর মালিকরা খুব সতর্কতার সাথে দোকান পরিচালনা করেন। এভাবে প্রকাশ্যে চোরাই তেলের রমরমা ব্যবসা চললেও অসাধুরা অজ্ঞাত কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
মানিকদিহি এলাকয় সরেজমিনে দেখা গেছে, চোরাই তেলের প্রতি দোকানের সামনে রাখা আছে ড্রাম ও পাইপ। যা দেখেই চালকরা বুঝে নেন সেখানে তেল ক্রয় করা হয়। বিভিন্ন গাড়ির চালকরা এসব দোকানের সামনে গাড়ি থামানোর সাথেই কর্মচারীরা পাইপের সাহায্যে টাংকি থেকে তেল নামাচ্ছে। তেল বিক্রি করেই টাকা নিয়ে চালকরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। দোকানদারও চোরাই তেল বেশি সময় দোকানে রাখে না। মুুহূর্তের মধ্যে তেল বিক্রির জন্য পাঠিয়ে দেয়। সাতমাইল এলাকার চোরাই তেল দোকানের ২ জন কর্মচারীর সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তারা রাজি হননি। দোকান মালিকের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। কিন্তু মালিককে দোকানে পাওয়া যায়নি। সূত্র জানায়, মালিকরা খুব বেশি সময় দোকানে বসেন না। তারা বাইরে থেকে কর্মচারীদের দিয়ে দোকান পরিচালনা করে থাকেন। তারা মাঝে-মধ্যে এসে তেল ক্রয়-বিক্রয়ের খবর নিয়ে যান।
অন্য এক দোকানের কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চোরাই তেলের ব্যবসা করতে বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করতে হয়েছে। ফলে অনেকে দেখেও না দেখার ভান করেন।
হৈবতপুর ইউনিয়নের একজন জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ওই সব তেলের দোকানের সামনে বিভিন্ন গাড়ি এসে থামে। পরে দোকানের কর্মচারীরা ট্যাংক থেকে তেল নামানোর কাজে ব্যস্ত থাকে। মহাসড়কের পাশের ফাঁকা জায়গায় তৈরি করা খুপড়ি দোকানগুলোতে চোরাই তেলের রমরমা ব্যবসা করা হচ্ছে। এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাদের চোরাই তেলের ব্যবসায় শেল্টার দেন। তেলের ব্যবসা করে চোর চক্রের সদস্যরা আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছে।
চুড়ামনকাটি সাজিয়ালী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই আব্দুর রউফ জানান, চুড়ামনকাটি ও বারীনগর সাতমাইল এলাকায় চোরাই তেলের ব্যবসা সম্পর্কে শুনেছি। মাঝে একদিন অভিযানে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। চোরাই তেলের ব্যবসা বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।