নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি মৌসুমে দ্বিতীয় বারের মতো যশোরাঞ্চলে তীব্র তাপদাহ বইছে। বুধবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এদিন বিকেল ৩টার দিকে যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমানঘাঁটির আবহাওয়া দপ্তর এ তাপমাত্রা রেকর্ড করে। তাপদাহে তীব্র গরমে প্রাণীকূলে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। বিশেষ করে চলতি বোরো সৌসুমে শুরু হওয়া ধান কাটার শ্রমিকেরা গরমে কাহিল হয়ে পড়ছে। এদিকে প্রচণ্ড রোদের তাপে যশোরঞ্চালে বেশকিছু সড়কে গলে যেতে দেখা গেছে পিচের রাস্তা।
যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমানঘাঁটির আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত মার্চের প্রথম সপ্তাহে থেকে তাপমাত্রায় পুড়তে থাকে যশোর। তাপমাত্রার পারদ ৪১ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে। সমগ্র মার্চ তাপমাত্রায় পুড়লেও এপ্রিল কিছুটা কমতে থাকে। চলতি মাসের প্রতি সপ্তাহে কম বেশি বৃষ্টি হওয়াতে তাপমাত্রা ২৮ থেকে ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। তবে বুধবার হঠাৎ করেই সকাল থেকে তাপমাত্রার পারদ উঠতে থাকে। যা সর্বোচ্চ উঠে দাঁড়ায় ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যদিও চলতি মৌসুমে গত ২৮ মার্চ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠে দাঁড়ায় ৪১ ডিগ্রী সেলিসিয়াসে। হঠাৎ করে তাপদাহে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিশেষ করে, মাঠে কাজ করা বোরো ধান কাটার কাজে নিয়েজিত কৃষক ও শ্রমিকেরা। এসব মানুষের গরমে নাভিশ্বাস উঠে যায়। চাইলেই গরমে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ নেই তাঁদের।
কৃষকেরা জানিয়েছে, জমিতে ধান পেকে গেছে; একটু বৃষ্টি বা ঝড় হলেই ধানের ব্যাপক ক্ষতি হবে। তাই গরমে কাহিল হলেও ক্লান্তিহীন পরিশ্রমে সোনার এ ফসল ঘরে তুলবেন তারা। এদিকে তাপদাহে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে এ দিন দুপুরে লোকজনের উপস্থিতি গত কয়েক দিনের চেয়ে কম দেখা গেছে।
মুজিব সড়কে ফলব্যবসায়ী মানিক বলেন, ‘১০টার পর থেকে আজ রোদের তাপ বেশি বোঝা যায়। দুপুরে সেই তাপমাত্রা দ্বিগুণ হয়। পিচের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে পিচের তাপের আঁচ মুখে লেগে ঝলছে যাচ্ছে।’ শহরের বেজপাড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা রজব আলী নামে এক রিকশাচালক বলেন, ‘মনে হচ্ছে আগুন উড়ছে। রিকশা চালাতে কষ্ট হচ্ছে, জীবিকার তাগিদে বের হতে হচ্ছে। পিচের তাপের আঁচ মুখে লাগছে, মনে হচ্ছে মুখ পুড়ে যাচ্ছে’। চৌগাছার বল্লবপুর এলাকার কৃষক শামীম হোসেন বলেন, ‘প্রচন্ড গরম। রোদের তাপ খুব। অল্প অল্প কাজ করে ছাঁয়াতে বিশ্রাম নিচ্ছি। তার পরেও আমরা এটা রহমত হিসাবে নিচ্ছি। কেননা, এবার আবহাওয়া ভালো থাকাতে ফসল ভালো হয়েছে। এখন সব মাঠেই পাকা ধান কাটা শুরু হয়েছে। এই সময়ে যদি ঝড় বা বৃষ্টি হলেও মাঠের ধান ঘরে তোলা কষ্ট হয়ে যাবে। তাই রৌদ্যজ্বল আবহাওয়া আমরা আরোও দুই থেকে তিন সপ্তাহ চাইছি।’
এদিকে, তাপমাত্রা বাড়ার ফলে যশোরের কিছু সড়কের পিচ গলে যাচ্ছে। স্থানে স্থানে গাড়ির চাকা দাগ বসে যাচ্ছে। পিচ গলে জায়গায় জায়গায় ঢিবি হয়ে যাচ্ছে। মণিরামপুর -কেশবপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক, খাজুরা বাসস্ট্যান্ড, যশোর নড়াইল মহাসড়ক, যশোর মাগুরা মহাসড়কে পিচ গলতে দেখা গেছে। যদিও গত বছর তীব্র তাপমাত্রার কারণে স্থানে স্থানে গাড়ির চাকা বা পথচারীর সেন্ডেল ও জুতার সঙ্গেও পিচ উঠে যাচ্ছে এমন খবর এখনো পাওয়া যায়নি।
যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমানঘাঁটির আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহ পর্যন্ত আবহাওয়া পরিস্থিতি এমনই থাকবে। এর মাঝে তাপমাত্রার পারদ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে পারে। আপাতত বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে কালবৈশাখী ঝড়ের বিষয়ে আগে থেকে বোঝা যায় না। দুই-এক ঘণ্টা আগে ঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়া যায়।