স্পন্দন ডেস্ক : ঘোষণা দিয়ে গিয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙার ঘটনাকে ‘অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত’ বলেছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়; আর ওই ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়েছে শেখ হাসিনার ‘উসকানিমূলক বক্তব্যকে’।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বলেছে, “পলাতক অবস্থায় ভারতে বসে জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে জনমনে গভীর ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।”
গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ অগাস্ট থেকে ভারতে অবস্থান করছেন। বুধবার ছিল তার সরকার পতন ও দেশত্যাগের ছয়মাস পূর্তির দিন।
এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ঘোষণা দেয়, রাতে ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা। বিষয়টি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া আসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে, যাদের নেতৃত্বে গত বছরের জুলাই-অগাস্টের গণ অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছিল।
সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এক ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, “হাসিনাকে বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ দেওয়াকে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ-বিরোধী জনগণের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ হিসেবে দেখি।”
পরে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফেইসবুকে আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, “আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।”
এর আগেই বুধবার বিকেলে আলোচিত কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ইলিয়াস হোসাইন ও পিনাকী ভট্টাচার্য ফেইসবুকে ‘ধানমন্ডি ৩২ অভিমুখে বুলডোজার মিছিল’ ঘোষণা করেন।
সেই আহ্বানে রাত ৮টা থেকেই বিপুল সংখ্যক মানুষ ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে জড়ো হয়। প্রথমে তারা ওই বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়, পরে আগুন দেয়।
এরপর মধ্যরাত থেকে শুরু হয় ক্রেন ও এক্সক্যাভেটর দিয়ে বাড়ি ভাঙার কাজ।সারারাতে ভবনটির অর্ধেকের বেশি ভেঙে ফেলা হয়।
কেবল ৩২ নম্বর নয়, ধানমণ্ডি ৫ নম্বরে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদন পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হল ঢাকার বাইরে খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, সিলেটে শেখ হাসিনার আত্মীয় এবং আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িসহ বিভিন্ন ভাস্কর্য।
এর মধ্যেই বুধবার রাত ৯টায় আওয়ামী লীগের ফেইসবুক পেইজে ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ুদেশের স্বাধীনতা কয়েকজন বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলবে এই শক্তি তাদের হয়নি। তারা একটি দালান ভেঙে ফেলতে পারবে, কিন্তু ইতিহাস মুছতে পারবে না।ইতিহাস কিন্তু প্রতিশোধ নেয়।”
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, গত ছয় মাসে ৩২ নম্বর বাড়িটিতে কোনো ধরনের আক্রমণ, ধংসযজ্ঞ হয়নি। বুধবার রাতে এটি ঘটেছে পলাতক শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে, যার দুটো অংশ আছে।
“একটা অংশ হলো, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা আত্মদান করেছেন শেখ হাসিনা তাদেরকে অপমান করেছেন, অবমাননা করেছেন। শহিদের মৃত্যু সম্পর্কিত অবান্তর, আজগুবি ও বিদ্বেষমূলক কথা বলে পলাতক শেখ হাসিনা জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে অবজ্ঞা করেছেন ও অশ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
“দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনা দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও অমানবিক প্রক্রিয়ায় নিপীড়ন চালিয়ে ক্ষমতায় থাকাকালীন যে সুরে কথা বলতেন গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়ার পরেও তিনি একই হুমকি-ধামকির সুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া প্রতিটি মানুষের বিরুদ্ধে কথা বলে চলেছেন, হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। শেখ হাসিনা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির হুমকি দিয়েছেন।”
মানুষের মনে জুলাই গণহত্যা নিয়ে যে ক্ষত রয়েছে, সে ক্ষততে শেখ হাসিনা ‘একের পর এক আঘাত করে চলছেন’ বলে মন্তব্য করা হয় বিবৃতিতে।
সেখানে বলা হয়, “তার এই সহিংস আচরণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।”
অন্তর্র্বতী সরকার দেশ ও জনগণের জানমালের রক্ষায় ‘সর্বোচ্চ সতর্ক আছে’ এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘সর্বাত্মকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার যথাযথ চেষ্টা করছে’ বলে দাবি করা হয় বিবৃতিতে।
সরকারপ্রধানের দপ্তর বলছে, “মানবতাবিরোধী অপরাধে একজন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি শেখ হাসিনা বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়ানো সম্ভব।
“সরকার আশা করে, ভারত যেন তার ভূখণ্ডকে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে এমন কাজে ব্যবহৃত হতে না দেয় এবং শেখ হাসিনাকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না দেয়। অন্তর্র্বতী সরকার ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় না।”
জুলাই হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত ছিল, তাদের বিচারকাজ ‘পুরোদমে’ এগিয়ে চলছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “এই বিচার নিশ্চিত করে গণহত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে অন্তর্র্বতী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কী কী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা সরকার খতিয়ে দেখবে।”