নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের প্রধান ফসল আমন ধানের চাল বাজারে এলেও এখনো কমেনি চালের দাম। এমনকি, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি প্রধান এ খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় একেবারেই বিপরীত। তবে নতুন আলু ও পেঁয়াজ বাজারে সহজলভ্য হওয়ায় দাম কমেছে পণ্য দুটির।
এদিকে, ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া, সয়াবিন তেলের সরবরাহ এখনও স্বাভাবিক হয়নি বাজারে।
খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে মিল পর্যায়ে চালের দাম বাড়তি। এর প্রভাবেই খুচরা ও পাইকারিতে দাম বেড়েছে। অন্যদিকে, চালকল মালিকদের দাবি, ধানের দাম বাড়ায় তারা চালের দাম বাড়িয়েছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিমণ ধান ১,১০০ থেকে ১,৫০০ টাকায় টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ধানের দাম বাড়ায় চালের দাম বেড়ে গেছে।
যদিও গত বছর এই সময়ে চালের দাম ১,০০০ থেকে ১,২০০ টাকার মধ্যে ছিল বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
যশোর শহরের বড় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে চালের দাম কেজিতে থেকে ২ টাকা থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এরমধ্যে মোটা চালের দাম ২ টাকা বেড়ে ৬০ থেকে ৬৪ টাকায় উঠেছে। মিনিকেট চাল ৭২-৭৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া, প্রতিকেজি নাজিরশাইল জাতের চালের দাম উঠেছে ৮০ টাকা পর্যন্ত।
বড় বাজারের মুদি দোকানী আশিষ দে বলেন, æদিনাজপুর এবং পাবনা, সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চল থেকে প্রধানত চাল আসে। ওই জায়গার সরবরাহকারীরাই গত এক সপ্তাহের তুলনায় বস্তাপ্রতি চালের দাম ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছেন।
ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে
বেশ কয়েক সপ্তাহ স্থিতিশীল থাকার পর হঠাৎ করেই ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায় কয়েকদিন আগেও যার দাম ছিল ১৮০ থেকে ১৯০ টাকার মধ্যে।
খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, মুরগির সরবরাহ কমেছে। যে কারণে দাম বাড়ছে। তবে সোনালি মুরগি আগের দাম প্রতিকেজি ৩২০ টাকা, কক প্রতিকেজি ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে মুরগি কিনতে এসে এক স্বাধীন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, মেসে আমরা অনেকটাই মুরগির মাংসের ওপর নির্ভরশীল। কিছুদিন আগেও দামটা কম ছিল, আমরাও একটু স্বস্তিতে ছিলাম। এখন দেখছি দাম আবার হুট করে বেড়ে গেছে।
সয়াবিনের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি
লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। এরপর এগারো দিন পেরিয়ে গেলেও বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি।
শহরের বিভিন্ন বাজার ও পাড়া মহল্লার দোকানের অধিকাংশে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, যেসব প্রতিষ্ঠান বোতলের সয়াবিন তেল বাজারে ছাড়ে, তারা সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। দাম বাড়ানোর পরও তারা তেল সরবরাহ করছে না।
এত আগে বাজারে হঠাৎ করে বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে গত ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এই দাম বাড়ানোর ফলে এখন বোতলের এক লিটার সয়াবিনের দাম নির্ধারিত হয়েছে ১৭৫ টাকা। আর খোলা সয়াবিনের দাম নির্ধারিত হয়েছে ১৫৭ টাকা।
তবে এ দামে হাতেগোনা কিছু বড় বড় দোকান ছাড়া তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বেশিরভাগ দোকানেই বোতলজাত সয়াবিন তেল নেই। দু-একটি দোকানে সীমিত পরিসরে বোতলজাত সয়াবিন তেল থাকলেও দাম রাখা হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা পর্যন্ত।
বড় বাজারের মুদি ব্যবসায়ী আমির খসরু বলেন, কোম্পানির তেল দেওয়ার কথা বললে, আটা-ময়দা-ডাল নেওয়ার বাধ্যতামূলক শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। তাছাড়া তেল দিচ্ছে না।
দাম কমেছে আলু-পেঁয়াজের
এদিকে, দীর্ঘদিন অস্থিতিশীল থাকা পেঁয়াজের বাজারে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। এক থেকে দেড় মাস আগেও দেশি ভালো মানের পেঁয়াজের কেজি ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। যা এখন অর্ধেকে নেমে এসে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে ।
কাঁচামাল ব্যবসায়ী শংকর কুমার জানান, দেশি হাইব্রিড পেঁয়াজের কেজি ৩০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে।
দাম কমেছে আলুরও। নতুন আলুর দাম ১২০ টাকা থেকে কমে ৬০ টাকায় নেমে এসেছে। বাজারে নতুন আলু আসায় পুরোনো আলুর দামও কেজিপ্রতি ১০ টাকার কমে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, শীতের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। ফলে কমতে শুরু করেছে সব ধরনের সবজির দর। গড়ে সবজির কেজি কেনা যাচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে।