স্পন্দন ডেস্ক: দেশজুড়ে পলিথিন উৎপাদকদের বিরুদ্ধে রোববার থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ সচিব তপন কুমার বিশ্বাস।
তিনি বলেছেন, “পরিবেশ রক্ষায় ৩ নভেম্বর থেকে পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তাদের আর ছাড় দেওয়া যাবে না। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। মোবাইল কোর্টের যে আইন আছে, সেগুলো আপনারা জানেন।
“এ বিষয়ে সকল জেলা প্রশাসক এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
শুক্রবার সকাল ১০টায় পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
মনিটরিং কমিটির সদস্যরা জানান, তারা বেশ কিছু পলিথিন কারখানার সন্ধান পেয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় ৩ নভেম্বর থেকে অভিযান পরিচালনা করে সেগুলো সিলগালা ও জরিমানা বা শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
সচিব তপন কুমার বলেন, “১ ও ২ নভেম্বর সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় মোবাইল কোর্ট বন্ধ থাকলেও আমাদের মনিটরিং কার্যক্রম চলমান থাকবে।”
বাজারগুলোতে আপাতত জরিমানা করা হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, সতর্কতামূলক অভিযান নভেম্বরের প্রথম এক সপ্তাহ চলবে। এর পরের সপ্তাহ থেকে অভিযানে পলিথিনের ব্যাগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তপন কুমার বিশ্বাসের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং কমিটির সদস্যরা কৃষি মার্কেট পরিদর্শনের সময় ক্রেতাদের পলিথিন ব্যবহার না করে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারের অনুরোধ জানান।
একইসঙ্গে দোকানিদের পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর অভিযানে পলিথিন ব্যাগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে হুঁশিয়ার উচ্চারণ করা হয়।
২০০২ সালে আইন করে পলিব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়। তবে দুই দশক বাদে দেশের সব জায়গা পলিথিন ব্যাগে ছেয়ে গেছে। অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্বে আসার পর ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়।
পরে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নিষিদ্ধ পলিথিন ও পলিপ্রপাইলিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, মজুদ, পরিবহন, বিপণন ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে ১ নভেম্বর থেকে অভিযানে নামবে সরকার।
প্লাস্টিক ব্যাগ ‘ব্যবহার করা যাবে’
কৃষি মার্কেটে শুক্রবার আসা ক্রেতাদের অনেকের হাতে বাসা থেকে আনা ব্যাগ দেখা গেছে। তবে মাছ, মাংস নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছে ক্রেতা-বিক্রেতারা।
ক্রেতা রবিউল ইসলাম বললেন, “বাসা থেকে তো বাজারের ব্যাগ এনেছি। আলু-পেঁয়াজ এই ব্যাগেই নিব। তবে মাছ নিতে গেলে আমাকে ঠিকই পলিথিন নিতে হবে।
“আর মাছ বিক্রেতাওবা আমাকে মাছ দিবে কিসে? এসব ক্ষেত্রে পলিথিনের একটা বিকল্প দরকার আসলে।”
ক্রেতাদের হাতে বাসা থেকে আনা পলিপ্রোপিলিন ব্যাগ যেমন দেখা গেছে, তেমনই কৃষি মার্কেটেও প্লাস্টিক ব্যাগ বলে পরিচতি এই থলে বেচতে দেখা গেছে। আর তা দেখে মনিটরিং কমিটি বলেছে, “এটা যেহেতু বারবার ব্যবহার করা যায়, তাই আপাতত মানুষ এটা ব্যবহার করুতে থাকুক। তবে পলিথিন একেবারে বাদ দিতেই হবে।”
সুপার শপে কাপড়ের ব্যাগ ২৫ টাকা
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং কমিটি কৃষি মার্কেট পরিদর্শন শেষে মোহাম্মদপুরে ‘প্রিন্স বাজার’ ও ‘আগোরা’ সুপারশপে যান। এই চেইনশপ দুটিতে পলিথিনের ব্যবহার নেই, বিকল্প হিসেবে কাপড়ের ব্যাগ বেচা হচ্ছে। আর মাছ বা মাংসের ক্ষেত্রে তারা কাগজের টোঙা ব্যবহার করছেন।
প্রিন্স বাজার সুপারশপের ব্যবস্থাপক শামসুদ্দিন ওমর বলেন, “পরিবেশ যাতে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, আমরা সেভাবে কাজ করছি। আমরা আলাদা আলাদা আইডিয়া এনেছি। কেউ তিন হাজার টাকার শপিং করলে আমাদের পক্ষ থেকে দুইটা করে ব্যাগ দেই।
“আর কেউ পুরাতন ব্যাগ নিয়ে আসে বিক্রি করার জন্য, সেগুলো আমরা কিনে নেব। এরপর সেগুলো ওয়াশ করে আবার সেকেন্ড হ্যান্ড হিসেবে বিক্রি করব। মানে রি-ইউজ হচ্ছে।”
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং কমিটির সদস্য হিসেবে যুগ্মসচিব মোহাম্মদ রেজাউল করিম, উপসচিব রুবিনা ফেরদৌসী, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক রাজিনারা বেগম ও পরিচালক মোহাম্মাদ মাসুদ হাসান পাটোয়ারী পরিদর্শন দলে ছিলেন।