বাবুল আক্তার, চৌগাছা: সুজা উদ্দীন (৭৪)। প্রায় এক যুগ ধরে যশোরের চৌগাছা পৌরসভার আম্রকানন পাড়ায় বসবাস করছেন তিনি। সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। দশ বছর আগে চাকরি থেকে অবসর পেয়েছেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে ছাদ বাগানে অভ্যস্ত তিনি।
ইউটিউব দেখে পরীক্ষামূলকভাবে গতবছর নিজের দুইতলা ভবনের ছাদে কয়েকটি ছোট ক্যারেটে দেশি জাতের আদার কন্দ রোপণ করেন তিনি। এ বছরে মোট ৫১ টি ক্যারেটে আদা চাষ করেছেন সুজাউদ্দীনের ছাদ বাগানে।
এতে তার যৎসামান্য খরচ হলেও দেড়শ কেজি আদা উৎপাদন হবে বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি। তার এমন উপায়ে আদা চাষ দেখে আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে।
জানা যায়, স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় উপজেলার গ্রামীণ কৃষিতে আগ্রহ বাড়ছে আদা চাষে। বাড়ির আঙিনা, ছাদ, অনাবাদি ও পতিত জমিসহ বিভিন্ন জায়গায় বস্তা, ক্যারেটে কিংবা টবে মাটি ভরে আদা চাষ করা যায়। মসলা ও ভেষজ ওষুধ হিসেবে আদা ব্যবহার হওয়ায় এর দামও বেশ চড়া। তাই পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বাড়তি লাভের উদ্দেশ্যে সুজাউদ্দীনের আদা চাষ পদ্ধতি অনুকরণিয় দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বাড়ির ছাদে থরে থরে সাজানো রয়েছে ক্যারেট, বস্তাসহ বিভিন্ন ধরনের টব। সবুজ সতেজ চারা গুলো দোল খাচ্ছে মৃদ মন্দ বাতাসে।
তিনি জানান, সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পরে বাড়িতে বসে সময় কাটতে চায়না তার। অলস সময়ে মোবাইলে আদা চাষ দেখে উৎসাহ পান তিনি। প্রতি ক্যারেটে মাটি সংগ্রহ সহ অন্যান্য সকল কাজ নিজেই করেছেন। এর জন্য বাড়তি কোনো লেবার খরচ করতে হয়নি তার। তিনি জানান বাড়ির রান্নাঘরের উচ্ছিষ্টাংশ দিয়ে নিজেই তৈরি করেন জৈব সার। এই জৈব সার প্রয়োগ করে তিনি আদা চাষ করছেন। এর পরেও খাদ্যের ঘাটতি হলে সামান্য পরিমানে রাসায়নিক সার পানিতে মিশ্রন তৈরি করে দিলে উপকার হয়। সুজা উদ্দীনের গাছগুলো তরতাজা এবং সতেজ রয়েছে। বাড়ির ছাদ ছাড়াও সামনের আঙিনায় সারি সারি ক্যারেট বসিয়ে আদা চাষ কারর কথা ভাবছেন তিনি।
জুন মাসে আদার কন্দ রোপণ করেন তিনি। আবহাওয়া ঠিক থাকলে আর কয়েক মাসের মধ্যে ১শ’ ৫০ কেজির অধিক আদা পাবেন। যা পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে মোটা অংকের টাকায় বিক্রিও করতে পারবেন তিনি। উপজেলা কৃষি বিভাগ তার উৎপাদিত সকল আদা বীজ হিসেবে কিনে নেবেন বলে তিনি জানান।
এদিকে সুজা উদ্দীনের ব্যতিক্রমী আদা চাষ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসাব্বির হুসাইন এ সময় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শ ছাড়ায় ব্যতিক্রমী আদা চাষ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। প্রয়োজন হলে আমরা তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করবো। বর্তমানে তার আদার চারাগুলো বেশ ভালো হয়েছে। তিনি বলেন, বস্তা বা ক্যারেটে আদা চাষ করলে অনেক সুবিধা। মাটিতে আদা চাষ করলে অনেকসময় কন্দপঁচা রোগে আক্রান্ত হয়। এতে একটিতে হলে পুরো জমি নষ্ট হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে বস্তা পদ্ধতিতে চাষ করলে কোন কারণে একটি হলে শুধুমাত্র সেটি সরিয়ে নিলেই বাকি আবাদ ভালো থাকে। বস্তা বা ক্যারেটে আদা চাষে কীটনাশক এবং পানি লাগে অনেক কম। ফলে যে কোনো স্থানে এভাবে আদা চাষ করা সম্ভব।খুব সহজেই বাসার ছাদে, ব্যালকনি এবং বাড়ির সামনে পরিত্যক্ত স্থানেও চাষ করা যায়।