ক্রীড়া প্রতিবেদক: দারুণ বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে অল্পে আটকে রাখলেন বোলাররা। ইনিংস বিরতিতে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তাসকিন আহমেদের চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস। ম্যাচ জেতার পর উদযাপন করার কথাও বললেন তিনি। কিন্তু তাওহিদ হৃদয়ের ঝড়ো ইনিংসের পরও বাকিদের ব্যর্থতায় জেগে উঠল শঙ্কা। শেষ পর্যন্ত দৃঢ়তা দেখিয়ে বাংলাদেশকে জেতালেন মাহমুদউল্লাহ।
ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কাকে ২ উইকেটে হারাল বাংলাদেশ। ১২৫ রানের লক্ষ্য ৬ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলল তারা।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনবারের দেখায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয় এটি। টানা দুই ম্যাচ হেরে সুপার এইট খেলার সম্ভাবনা অনেকটাই ম্রিয়মাণ হয়ে গেল লঙ্কানদের জন্য। সামনের ম্যাচগুলোর জন্য বড় প্রেরণা পেল বাংলাদেশ।
ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ২২ রানে ৩ উইকেট নেন রিশাদ হোসেন। তার পরপর দুই বলে দুই উইকেটেই বোলিংয়ে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু। পরে শঙ্কা ছাপিয়ে জয় পাওয়ার পর ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন তরুণ লেগ স্পিনারই।
তুলনামূলক ছোট লক্ষ্যে আরও একবার শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। প্রথম ওভারে রানের খাতা খোলার আগেই ধানাঞ্জয়া ডি সিলভার বলে মিড অনে ক্যাচ দেন সৌম্য সরকার। এ নিয়ে সবশেষ তিন ইনিংসে দুবার খালি হাতে ফিরলেন তিনি।
সব মিলিয়ে ৮৪ ম্যাচের ক্যারিয়ারে সৌম্যর ১৩তম শূন্য এটি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটিই সবচেয়ে বেশি শূন্যের রেকর্ড। ১৪৩ ইনিংসে আয়ারল্যান্ড অধিনায়ক পল স্টার্লিংয়ের শূন্যও ১৩টি।
পরের ওভারে নুয়ান থুশারার দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড হন আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান। চার নম্বরে নেমে নাজমুল হোসেন শান্তও টিকতে পারেননি। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ১৩ বলে ৭ রান করে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে চাপ সামাল দেন লিটন দাস ও হৃদয়। দুজন মিলে মাত্র ৩৮ বলে ৬৩ রান যোগ করেন। নবম ওভারে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে ইনিংসের প্রথম ছক্কা মারেন হৃদয়। এক ওভার পর মাথিশা পাথিরানার বল পুল করে ছক্কায় ওড়ান লিটন।
হাসারাঙ্গার পরের ওভারে তাণ্ডব চালান হৃদয়। পরপর তিন বলে ছক্কা মারেন তরুণ মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান। চতুর্থ বলেই অবশ্য প্রতিশোধ নিয়ে নেন হাসারাঙ্গা। সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন ২০ বলে ৪০ রান করা হৃদয়। রিভিউ নিয়ে তার বিদায় নিশ্চিত করে শ্রীলঙ্কা।
নিজের পরের ওভারে লিটনকেও ফেরান হাসারাঙ্গা। সবশেষ ৫ ইনিংসে ২০ ছুঁতে না পারা লিটন এদিন ২ চার ও ১ ছক্কায় করেন ৩৮ বলে ৩৬ রান। তখনও তেমন শঙ্কা জাগেনি বাংলাদেশের জয়ে।
৪ ওভারে ১৮ রানের সমীকরণে পাথিরানার শর্ট বলে ডিপ থার্ড ম্যানে ক্যাচ দেন সাকিব আল হাসান। মাহিশ থিকশানার দুর্দান্ত ক্যাচে ১৩ বলে ৭ রান করে ফেরেন সাকিব।
পরের ওভারে অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে রিশাদ হোসেন ও তাসকিন আহমেদের বিদায় দেখেন মাহমুদউল্লাহ। পরপর দুই বলে দুজনকে ফেরান থুশারা। শেষ দুই ওভারে জয়ের জন্য বাকি থাকে ১১ রান।
মূল বোলারদের কোটা পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় দাসুন শানাকাকে বোলিংয়ে আনেন হাসারাঙ্গা। প্রথম বলেই তিনি করেন নিচু ফুল টস। নিজের আয়ত্বে পেয়ে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মারেন মাহমুদউল্লাহ। ম্যাচ চলে আসে হাতের নাগালে।
ওভারের শেষ বলে মিড অফের দিকে খেলে দ্রুত রানের জন্য ছোটেন দুই ব্যাটসম্যান। বল সোজা হাসারাঙ্গার হাতে যাওয়ায় পিচের মাঝে দাঁড়িয়ে পড়েন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু স্টাম্পে লাগাতে পারেননি হাসারাঙ্গা। ওভার থ্রোয়ে নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের জয়।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাথুম নিসাঙ্কার ঝড়ে দারুণ শুরু করে শ্রীলঙ্কা। প্রথম ৬ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৫৩ রান করে ফেলে তারা। পঞ্চম ওভারে সাকিবের বলে ৪টি চার মারেন নিসাঙ্কা।
এরপর থেকেই ধীরে ধীরে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু। পরের ১৪ ওভারে মাত্র ৭০ রান খরচায় আরও ৭ উইকেট নেয় তারা। নিসাঙ্কার ২৮ বলে ৪৭ রান ছাড়া শ্রীলঙ্কার আর কেউই তেমন কিছু করতে পারেননি।
বাংলাদেশের প্রথম বিশেষজ্ঞ লেগ স্পিনার হিসেবে বিশ্বকাপ খেলতে নেমেই বাজিমাত করেন রিশাদ। প্রথম দুই ওভারে উইকেট না পেলেও ১৫তম ওভারে পরপর দুই বলে চারিথ আসালাঙ্কা ও হাসারাঙ্গাকে ফেরান রিশাদ।
নিজের শেষ ওভারে ধানাঞ্জয়াকে স্টাম্পিং করে শ্রীলঙ্কাকে আরও চাপে ফেলে দেন তরুণ লেগ স্পিনার।
রিশাদ ছাড়াও মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিনরাও করেন দারুণ বোলিং। চোট কাটিয়ে ফেরা তাসকিন ২৫ রানে নেন ২ উইকেট। নিজের প্রথম বলেই উইকেট পাওয়া মুস্তাফিজের ৩ শিকার ধরতে ৪ ওভারে খরচ মাত্র ১৭ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১২৪/৯ (নিসাঙ্কা ৪৭, কুসাল ১০, কামিন্দু ৪, ধানাঞ্জয়া ২১, আসালাঙ্কা ১৯, হাসারাঙ্গা ০, ম্যাথিউস ১৬, শানাকা ৩, থিকশানা ০, পাথিরানা ০*, থুশারা ০*; তানজিম ৪-০-২৪-১, সাকিব ৩-০-৩০-০, তাসকিন ৪-০-২৫-২, মুস্তাফিজ ৪-০-১৭-৩, রিশাদ ৪-০-২২-৩, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৪-০)
বাংলাদেশ: ১৯ ওভারে ১২৫/৮ (তানজিদ ৩, সৌম্য ০, লিটন ৩৬, শান্ত ৭, হৃদয় ৪০, সাকিব ৮, মাহমুদউল্লাহ ১৬*, রিশাদ ১, তাসকিন ০, তানজিম ১*; ধানাঞ্জয়া ***, থুশারা ৪-০-১৮-৪, থিকশানা ৪-০-২৫-০ হাসারাঙ্গা ৪-০-৩২-২, পাথিরানা ৪-০-২৭-১, শানাকা ১-০-১১-০)
ফল: বাংলাদেশ ২ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রিশাদ হোসেন।