যশোর জেনারেল হাসপাতালে রোগীকে ধাক্কা দিলেন ডা. রাশেদ মোড়ল!

এখন সময়: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল , ২০২৪, ০৫:২৮:৩৭ এম

 

বিল্লাল হোসেন : বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ৫০ মিনিট। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে নাক কান গলা বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. রাশেদ আলী মোড়লের কক্ষের সামনে রোগী ও স্বজনদের চিৎকার চেচামেচি। সাংবাদিক পরিচয়ে কথা বলতেই বাঘারপাড়া উপজেলার আজমপুর গ্রামের তুহিন হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সেই সকাল ৮ থেকে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে আছি। দুপুর গড়িয়ে গেলেও ডাক্তার দেখাতে পারেননি। দায়িত্বরত ডা. রাশেদ আলী মোড়ল না দেখে কক্ষ থেকে বের হয়ে গেছেন। তিনি রোগীদের বলেছেন প্রায় ২ টা বাজে আর রোগী দেখবেন না।

এসময় উপস্থিত রোগীরা চিকিৎসা পাওয়ার জন্য অনুরোধ করলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে রূঢ় আচরণ করেন। দুইজন রোগীকে তিনি ধাক্কাও দেন। চিকিৎসকের এমন আচরণে রোগী ও স্বজনরা অবাক হন। এই ঘটনায় তারা হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের কক্ষের সামনে জড়ো হন। ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়কের কাছে অভিযোগ করেন।

সূত্র জানায়, ডা. রাশেদ আলী মোড়লের মত অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সরকারি হাসপাতালের অফিস টাইমের পরে চেম্বারে  আসেন। আর বেরিয়ে যান অনেক আগেই। বিশেষজ্ঞদের অনিয়মের কারণে রোগীরা উন্নত চিকিৎসা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, জেনারেল হাসাপাতালের চিকিৎসকদের নিয়ম মানতে বাধ্য করা হচ্ছে। কিন্তু যশোর মেডিকেল কলেজ (যমেক) থেকে আসা চিকিৎসকরা ইচ্ছামত হাসপাতালে আসা যাওয়া করেছেন। অন্য প্রতিষ্ঠানের হওয়ায় নিয়ম মানতে তাদের বাধ্য করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। ফলে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।

বৃহস্পতিবারও রোগী না দেখে নিজের ইচ্ছায় হাসপাতাল থেকে চলে গেছেন যমেকের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী। চিকিৎসা বঞ্চিত এক রোগী বিষয়টি তত্ত্বাবধায়কের এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছেন।

জানা গেছে, এখানে মোট চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৫৪টি। কর্মরত আছেন ৪৯ জন। শূন্য রয়েছে ৫ চিকিৎসকের পদ। এরমধ্যে সিনিয়র কনসালটেন্ট পদ ৩টি ও জুনিয়র কনসালটেন্ট পদ ২ টি। হাসপাতালের চিকিৎসকরা ছাড়াও যশোর মেডিকেল কলেজের (যমেক) ক্লিনিক্যাল চিকিৎসকদের এখানে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সেটা নামমাত্রে পরিণত হয়েছে। যমেকের অধ্যাপক সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপক পদধারী চিকিৎসকদের আসা যাওয়ার বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক কিছুই জানছেন না। তারা থাকেন যমেকের অধ্যক্ষের অধীনে। ফলে হাসপাতাল ত্যাগ করলে বা ছুটি নিলেও তত্ত্বাবধায়ককে কিছু জানানো হয়না। এর খেসারত দিতে হচ্ছে রোগীদের।

অভিযোগ উঠেছে, বর্তমানে সরকারি এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবায় রয়েছে নানা অনিয়ম। কর্মরত বিশেষজ্ঞরা শুধু খাতা কলমে রয়েছে। বাস্তবে তারা ঠিকমত দায়িত্ব পালন করেননা। তাদের অনিয়মের কারণে রোগীরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে অনেকেই সরকারি হাসপাতাল ছেড়ে ক্লিনিকে চলে যেতে বাধ্য হন। এতে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত বাণিজ্য আরও বেড়ে যায়। রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, ক্লিনিক বানিজ্য জমজমাট করার জন্য চিকিৎসকরা সরকারি হাসপাতালে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে থাকেন।

রোগীদের ভাষ্যমতে, যমেকের অর্থোপেডিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জি এম মোহাম্মদ আলী বৃহস্পতিবার হাসপাতালের বহির্বিভাগে দায়িত্ব পালনকালে সাড়ে ১২টার দিকে কক্ষ থেকে বের হয়ে যান। রোগী ও স্বজনেরা কক্ষের  সামনে চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষায় থাকতে থাকতে অতিষ্ট হয়ে যান। দুপুর ২ টা পর্যন্ত চিকিৎসককে না পেয়ে এক রোগী তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে গিয়ে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নালিশ করেন। পরে তত্ত্বাবধায়ক অন্য এক চিকিৎসককে দিয়ে রোগীদের চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করেন।

নাক কান গলার চিকিৎসক দেখাতে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা থেকে এসেছিলেন রাসেল হোসেন (২৪) ও  চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা গ্রামের শিশু নয়ন হোসেন (১৩)। চিকিৎসক  রাশেদ আলী মোড়ল তাদের ব্যবস্থাপত্র না দিয়ে বের হয়ে যান। আরেক রোগী খোকন হোসেন অভিযোগ করেন, চিকিৎসার অনুরোধ করলে ওই চিকিৎসক তাকেসহ ২ জনকে ধাক্কা দিয়েছেন। এতে ভুক্তভোগীরা ক্ষুব্ধ হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে ডা. রাশেদ আলী মোড়ল ফিরে এসে রোগীদের চিকিৎসা দেন।

হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আব্দুস সামাদ জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা হাসপাতালে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। অনেক কক্ষে অনারারী চিকিৎসক ও মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টরা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। এটা সত্যি দুঃখজনক। বিশেষজ্ঞদের অনিয়মে হাসপাতালের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।

হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানিয়েছেন, ডা. মোহাম্মদ আলী মেডিকেল কলেজের না হয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক হলে অনিয়মের অভিযোগে তাকে শোকজ করতেন। রোগী ফেলে চলে যাওয়ার ঘটনা অন্যায়। তিনি আরও জানান, যমেকের আরেকজন চিকিৎসক ডা.শওকত হোসেনের কার্ডিওলজি বিভাগে দায়িত্ব পালনের কথা। কিন্তু তাকে ফোন করেও হাসপাতালে আনা যায়না।  তার মতো মেডিকেল কলেজের অধিকাংশ চিকিৎসক হাসপাতালে ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেন না। বিষয়টি যমেকের অধ্যক্ষকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। এবার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হবে।