Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

বহুমুখী দক্ষতায় অনন্য অন্ধ আবুল বাশার

এখন সময়: মঙ্গলবার, ১৩ মে , ২০২৫, ০৩:০৪:৩৩ পিএম

শাহীন আলম তুহিন ,মাগুরা : আড়াই বছর বয়স থেকে আবুল বাশারের দুই চোখ অন্ধ। কিন্তু দৃষ্টিহীন হলেও দক্ষতার শেষ নেই তার। গাছে উঠে ডাব-নারকেল পাড়া। ধারালো দা দিয়ে ডাব কাটা। তাল গাছ কেটে রস বের করাসহ বাঁশ দিয়ে ঝুড়ি তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে দক্ষ। ধান চারা রোপণ, করাত দিয়ে গাছ কাটা ও নষ্ট টিউবয়েল মেরামতের কাজও তিনি করতে পারেন নির্বিঘ্নে।
৪৬ বছর বয়সী আবুল বাশার মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের বালিদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। ছোটবেলায় খেলা করার সময় বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি পুকুরে পড়ে যায় বাশার। সেই সময় তার দুটি চোখ অন্ধ হয়ে যায় । চিকিৎসরা জানিয়েছেন, তার চোখ আর ভালো হবে না। এভাবেই শৈশব, কৈশর যৌবন পেরিয়ে বাশার ধীরে ধীরে বড় হতে থাকেন। চোখে না দেখলেও বিভিন্ন কাজে দক্ষ হয়ে হঠেন। অনেকে যে কাজ করতে পারেন না আবুল বাশার অন্ধ হয়েও সেই কাজ করেন অনায়েশে।
আবুল বাশারের বাবা আবু তালেব বিশ্বাস (৭০) জানান, আড়াই বছর বয়সে পুকুরের পানিতে পড়ে যায় আবুল বাশার। তারপর থেকেই সে চোখে দেখে না। অনেক বড় চোখের চিকিৎসক দেখিয়েছি। কিন্তু তারা বলেছেন তার চোখ আর ভালো হবে না । পানিতে পড়ে গিয়ে তার চোখের মনিসহ অনেক অংশ নষ্ট হয়ে গেছে । ফলে চোখ আর ভালো হবে না । সে নিজের দক্ষতায় অনেক কাজ শিখেছে । সে বিবাহিত । তার ১ মেয়ে ২ ছেলে। তার নিজের কোন জমি নেই।  গ্রামের  মানুষের নারকেল গাছ, তাল গাছ পরিস্কার করে ও রস দিয়ে গুড় তৈরি করে তার সংসার চলে । ২ ছেলে লেখাপড়া করছে ,১ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে।  
মহম্মদপুর বালিদিয়া গ্রামের গোলজার আহমেদ জানান,আবুল বাশার ছোটবেলা থেকেই অন্ধ । সে অন্ধ অবস্থায় নানা ধরনের কাজ করে গ্রামবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে । অন্ধ অবস্থায় নারকেল গাছে ওঠে। তাল গাছে উঠে রস বের করে গুড় তৈরিসহ নানা কাজ করতে পারে। ।
আবুল বাশার বলেন,আমি ছোট থেকেই অন্ধ। চোখের চিকিৎসার জন্য খুলনা, ঢাকা অনেক স্থানে গিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখিয়েছি। কিন্তু তারা বলেছেন আমার চোখ কোনদিন ভালো হবে না । দৃঢ় মনোবল নিয়ে আমি ১০ বছর বয়স থেকে নারকেল গাছে ওঠা শিখেছি। তাল গাছে উঠে রস বের করা, বাঁ শ দিয়ে ঝুড়ি বোনা, ডাব কাটা, নষ্ট টিউবওয়েল মেরামতের কাজ রপ্ত করতে পেরেছি।  মনের জোরে বাড়িতে ও বিভিন্ন স্থানে চলাফেরা করি। বাইরে হাটে বাজারে যাওয়ার সময় নিজ ছোট ছেলের  সহযোগিতায় চলাফেরা করি । আমার কর্মদক্ষতা ২০১৪ সালে ইত্যাদিতে প্রচার করা হয় ।
তিনি বলেন, আমি অতি দরিদ্র একজন মানুষ। আমার নিজের ভিটেমাটি ছাড়া আর  কোন জমিজমা নেই । সামান্য অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করে যা পায় তাতে সংসার চলে না। ইত্যাদি অনুষ্ঠানের  মাধ্যমে আমি ১ লাখ টাকার একটি চেক পাই । সেই টাকা দিয়ে নিজের মেয়েকে বিয়ে দেই । বর্তমানে গ্রামের বিভিন্ন গাছ পরিস্কার করি ,ঝুড়ি বানাই এ সব কাজ করে কোন মতে সংসারে টিকে আছি ।
মহম্মদপুর বালিদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান বলেন,আবুল বাশার জন্মের আড়াই বছর থেকেই অন্ধ । সে অন্ধ অবস্থায় নানা কাজ করতে পারে । সে আমার ইউনিয়ন থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পায় । তার পরিবারের সার্বিক সহযোগিতার জন্য আমরা তার পাশে আছি । আগামীতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন সুযোগ-সুবিধা এলে বাশারকে দেয়ার জন্য চেষ্টা করবো ।

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)