উৎপল বিশ্বাস, নেহালপুর : সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পুন:খনন প্রকল্পে স্বপ্ন বুনছে ভবদহের দুই লক্ষাধিক মানুষ। যশোরের ভবদহ জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৮ টি স্কেভেটর দিয়ে পাঁচটি নদীর ৮১.৫ কিলোমিটার খনন কাজ চলছে।
এ বছরের ২৪ অক্টোবর ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবদহের ২১ ভেল্ট স্লুইচ গেট থেকে পুন:খনন কাজের শুভ উদ্বোধন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। ওই সময় খনন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা। ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের আওতায় যশোর ও খুলনা অঞ্চলের হরিহর নদী (৩৫ কিমি), হরি-তেলিগাতী নদী (২০ কি.মি.), আপারভদ্রা নদী (১৮.৫ কি.মি.), টেকা নদী (৭ কি.মি.) ও শ্রী নদী (১ কি.মি.) সহ মোট ৫টি নদীর ৮১.৫ কি.মি. পুনঃখনন শুরু হয়।
সুত্র বলছে, টেকা নদীর ৭ কিলোমিটারের তলদেশ ৬৫ ফুট ও উপর অংশে ৯৮ ফুট, হরি নদীর ১৫ কিলোমিটারের তলদেশ ৮২ ফুট উপরি অংশ ১০৪ ফুট, তেলিগাতী নদীর ৫ কিলোমিটারের তলদেশ ৯৮ ফুট উপর অংশ ১৩১ ফুট, আপার ভদ্র নদীর ১৮ কিলোমিটারের তলদেশ ৪৯ ফুট, শ্রী নদীর ১ কিলোমিটারের তলদেশ ৩৯ ফুট উপর অংশ ৫৫ ফুট, হরিহর নদীর ৩৫ কিলোমিটারের তলদেশ ৩৯ ফুট উপর অংশ ৫৫ ফুটের খনন কাজ চলমান।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্তবর্তী সরকারের পানিসম্পদ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কর্মকর্তাদের নিয়ে দুই দফা ভবদহ অঞ্চল পরিদর্শন করতে এসে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান স্থায়ী সমাধানের। তারই ধারাবাহিকতায় জলাবদ্ধতার স্থায়ী সংকটের এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর যশোর ও খুলনার ভবদহ অঞ্চলের দীর্ঘ দিনের জলাবদ্ধতা নিরসনে বাপাউবো এবং সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ভবদহ পানি নিস্কাশন সংগ্রাম কমিটি ও স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘ ৪৪ বছর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই জনপদের মানুষ স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার। ভবদহ ¯¬ুইসগেট প্রস্তাবসহ নদী পানি ব্যবস্থাপনার প্রাকৃতিক ব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ এর কারণ। এই জনপদে ভবদহ ¯¬ুইসগেট একটি মরণফাঁদ।
ভবদহ পানি নিস্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন- জলাবদ্ধতা দূরীকরণে জনগণের উদ্ভাবিত টিআরএম প্রকল্প গণআন্দোলনে গৃহীত হলেও বিগত সরকার ২০১২ সালে সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর হামলার অজুহাতে বাতিল করে দেয়। নদী খনন, টিআরএম চালু, স্লুইসগেট খোলা, আমডাঙ্গা খাল খনন করা এই চারটি দাবি ছিলো। ইতোমধ্যে এই চারটি দাবি মেনে নিয়েছে পানি সম্পদ উপদেষ্টা।
ভবদহ পানি নিস্কাশন সংগ্রাম কমিটি আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী বলেন- এবার যেহেতু সেনাবাহিনীর অধীনে নদী খনন বাস্তবায়ন হচ্ছে এই কারণে একটু আশার আলো দেখছেন জলাবদ্ধবাসী। সরেজমিনে দেখা যায়, ১৮ টি স্কেভেটর দিয়ে নদী খনন কাজ চলছে। ভবদহ স্লুইচগেটের উজানে ও ভাটিতে ওই কাজ চলমান রয়েছে। ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতারা বলছেন, নদী খননের পাশাপাশি বিলে বিলে টিআরএম চালু করতে পারলে দীর্ঘমেয়াদী জলাবদ্ধতার সমাধান আসবে।