বিল্লাল হোসেন : শীতকালে সর্দি-কাশি, জ্বর ইত্যাদি রোগের আশঙ্কা বাড়ে। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টি উপাদানে ঠাসা সিদ্ধ ডিম নিয়মিত খাওয়ার মোক্ষম সময় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তারা বলেছেন, ডিমে রয়েছে অত্যন্ত উপকারী একটি খনিজ উপাদান দস্তা। তাই শীতকালের সাধারণ সর্দিজ্বর থেকে বাঁচাতে ডিম খান। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের সুস্থ মানুষ দিনে দুই থেকে তিনটি সিদ্ধ ডিম খেতে পারেন।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক, মেডিসিন, হৃদরোগ, শিশু ও চক্ষু বিভাগের কয়েকজন
চিকিৎসক জানান- ডিম খেলে শরীরে তাড়াতাড়ি এনার্জি আসে। ডিমে থাকা ভিটামিন থেকেই মূলত এই এনার্জি বা শক্তি মেলে। এতে থাকা ভিটামিন বি খাদ্যকে এনার্জি বা শক্তিতে রূপান্তরিত করে। ডিমে থাকে ভিটামিন ‘এ’। যা দৃষ্টিশক্তিকে উন্নত করে। তাছাড়া ডিমে থাকা কেরোটিনয়েড আর ল্যুটেন চোখের এক বড় সমস্যা ম্যাকুলার ডিজেনারেশন হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। ডিমে থাকা ভিটামিন ‘ই’ কোষ আর ত্বকে থাকা ফ্রি র?্যাডিকেল ধ্বংস করে। তাই ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার হচ্ছে ডিম। নিয়ম মেনে প্রতিদিন ডিম খাওয়া প্রয়োজন।
শীতকালে ডিম খাবেন কেন : ডিমের মধ্যে ভিটামিন ডি, ভিটামিন-বি, ভিটামিন বি ১২, বায়োটিন, রিবোফ্লাভিন, থায়ামিন, প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং সেলেনিয়ামের মতো পুষ্টি রয়েছে। এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, ডিম পুষ্টির ভাণ্ডার। শীতকালে এই খাবারটি খেলে একাধিক রোগের ঝুঁকি এড়াতে পারবেন। ডিমে থাকা প্রোটিন শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সাহায্য করে। এর জেরে একাধিক রোগ বা সংক্রমণের ঝুঁকি শীতকালে সহজেই এড়ানো যায়।
প্রোটিন : ডিমে প্রচুর প্রোটিন থাকে একথা সবারই জানা। একটি মাঝারি আকারের ডিমে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। ‘অ্যান্টিবডি’ তৈরিতে প্রোটিন ব্যবহার করে শরীর। যা পরে বিভিন্ন রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে। আর সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখে।
ভিটামিন ডি : শীতকালে ডিম খাওয়ার আর একটি কারণ হলো ভিটামিন ডি। শীতের দিনের রোদের তেজ কম থাকায়, শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হয় না। তাই এই মৌসুমে শরীরে ভিটামিন ডির ঘাটতি তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু ডিম খেলে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। খুব কম খাবারেই ভিটামিন ডি পাওয়া যায়, তার মধ্যে ডিম হলো অন্যতম। প্রতিদিনের ভিটামিন ডি’য়ের চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণ করতে পারে একটি ডিম।
ভিটামিন বি সিক্স ও বি টুয়েলভ : এই দুটি ভিটামিনও প্রচুর পরিমাণে থাকে ডিমে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে জরুরি। আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার হলে শীতে সংক্রামক রোগগুলো দুরে থাকবে।
রোগের ঝুঁকি এড়ানো: প্রতিদিন ডিম খেলে হার্টের রোগ, স্ট্রোকসহ অন্যান্য রোগের ঝুঁকি সহজেই এড়ানো যায়। ডিমের কুসুমে ১৮৬-২০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে, যা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া ডিমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায় এবং চোখের সমস্যা প্রতিরোধ করে। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী ডিম।
যেভাবে ডিম খেলে পুষ্টিমান ঠিক থাকে-
হাফ বয়েল : ডিমের বাইরের সাদা অংশ ভালোভাবে সিদ্ধ হবে এবং ভেতরের কুসুম আধাসিদ্ধ থাকবে, এমন ডিমকেই স্বাস্থ্যকর বলেন চিকিৎসকরা। আগুনের তাপ ডিমের ভেতরে থাকা ক্ষতিকর জীবাণুদের মেরে কুসুমের সবটুকু পুষ্টিগুণকে ঠিক রাখে। লবণ পানিতে মিনিট পাঁচেক সিদ্ধ করলে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হাফ বয়েল ডিম মিলবে সহজেই।
ফুল বয়েল: একটি সিদ্ধ ডিম থেকে প্রায় ১২.৬ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। এছাড়া ফুল বয়েলড ডিম শুধু খাওয়াসহ সালাদ বা স্যান্ডউইচের সঙ্গে খাওয়া যায়। ফুল বয়েল ডিম সহজে হজম হয়। লবণ পানিতে মিনিট দশেক সিদ্ধ করলেই তৈরি হয়ে যায় সিদ্ধ ডিম।
তেলহীন পোচ: তেলবিহীন উপায়ে যদি ডিম পোচ বানানো যায় তাহলে স্বাদ ও স্বাস্থ্য দুই-ই রক্ষা হয়। তবে তেলবিহীন উপায়ে পোচ তৈরি করা একটু কঠিন। প্রথমে ডিমটা সাবধানে ভেঙে নিন একটি বাটিতে। এমনভাবে ভাঙতে হবে যেন কুসুম আস্ত থাকে, ছড়িয়ে না পড়ে। এর উপর স্বাদ অনুযায়ী গোলমরিচ ও লবণ ছিটিয়ে দিন। এবার একটি পাত্রে ভিনেগার দিয়ে অল্প পানি ফুটিয়ে তার মধ্যে সাবধানে ছেড়ে দিন এই ভাঙা ডিম। পোচ তৈরি হয়ে গেলে ঝাঁজর দিয়ে পানি ঝরিয়ে তুলে নিন। এমন পোচে তেল লাগে না বলে ডিমের সবটুকু পুষ্টিগুণ অটুট থাকে।
যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক রাসেল জানান, একটি ডিমে প্রোটিন থাকে ৬ গ্রাম। যা মানব দেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডিমের সাদা অংশে থাকে প্রোটিন ও কুসুমে থাকে ভালো ফ্যাট, আয়রন ও ভিটামিন। শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি, হাড় শক্ত করতে ও মেধার বিকাশে ডিম খুবই কার্যকর। ডিমে আরও আছে ভিটামিন এ, যা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে। আর কুসুমে থাকা ভিটামিন ডি, হাড়ের জন্য ভালো। শীতকালে নিয়ম করে
ডিম খাওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত জানান, শীতকালে প্রতিদিন ডিম খেলে শরীরে অনেক পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হয়। স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা না থাকলে দুটি ডিম দৈনিক খাওয়া যেতেই পারে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিরিন নিগার জানান, ডিম হল একটি পুষ্টির সমৃদ্ধ উৎস। যা অনেক ধরণের অপরিহার্য ভিটামিন ,খনিজ এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান ধারণ করে। তিনি বলেন ডিম উচ্চমানের প্রোটিন,পুষ্টিতে সমৃদ্ধ, চোখের স্বাস্থ্য, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা, ওজন নিয়ন্ত্রণ, হাড়ের স্বাস্থ্য,পেশী গঠন, স্বাস্থ্যকর চজুল ও ত্বক এবং সাশ্রয়ী ও বহুমুখী। শীতকালে সুস্থ-সবল থাকতে হলে প্রতিটি মানুষের দিনে কমপক্ষে একটি ডিম খাওয়া দরকার।