Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

যশোর কারাগারে ১০ দিনে তিনজনের মৃত্যু

এখন সময়: শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর , ২০২৫, ০১:৪৭:৩৪ এম

বিল্লাল হোসেন : যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দীদের মৃত্যু বাড়ছে। গত ১০ দিনে মারা গেছেন ৩ জন। মৃতরা হলেন- নড়াইলের কালিয়া উপজেলার গুরুগ্রাম এলাকার হেলালউদ্দিন মোল্যার ছেলে কয়েদি আফজাল মোল্যা (৬৫), যশোরের শার্শা উপজেলার আমতলা গ্রামের আক্কাস আলীর ছেলে ‘উদ্ভাবক’ মিজানুর রহমান (৫৪) ও কেশবপুর পৌর এলাকার আলতাপোল গ্রামের নাজির বিশ্বাসের ছেলে যুবদল নেতা ওয়ালিউর রহমান উজ্জল (৪০)। এর আগে গত সেপ্টেম্বর মাসে এক নারীসহ দুই কয়েদি মারা যান। তাদের প্রত্যেককে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়।
জানা গেছে, বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে আফজাল মোল্যার বুকে ব্যথা শুরু হয়। কারারক্ষীরা তাকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আনেন। রাত ১২ টা ১০ মিনিটে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার কয়েদি নম্বর ৯১০৩/এ। তিনি একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আফজালকে ২০২৫ সালের ২৩ অক্টোবর নড়াইল কারাগার থেকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে ২০১৫ সালের ১২ মে পর্যন্ত তিনি নড়াইল জেলা কারাগারে ছিলেন।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত ডা.শাকিরুল কবীর জানান, আফজাল মোল্যাকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন।
আফজাল মোল্যার মৃতদেহ নিতে হাসপাতালে আসা স্বজনরা অভিযোগ করেন, আফজাল মোল্যা কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হলেও সঠিক সময়ে চিকিৎসাসেবা মেলেনি। চিকিৎসা অবহেলার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।
গত ১২ ডিসেম্বর আপন শ্যালক সুজায়েতুজ্জামান প্রিন্স হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ‘উদ্ভাবক’ মিজানুর রহমান ওরফে মিজান (৫৪) আত্মহত্যাজনিত কারণে মৃত্যু হয়। কারাগারের কার্পেট তৈরির পুরাতন গোডাউনের সিলিংয়ের লোহার বিম’র সাথে রশি দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। মিজানুর রহমান শার্শা উপজেলার আমতলা গাতিপাড়ার আক্কাস আলীর ছেলে। প্রিন্স হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মিজানুর রহমান চলতি বছরের ২৪ জুলাই থেকে কারাগারের কপোতাক্ষ ৩ নম্বর কক্ষের বন্দি ছিলেন। তার কয়েদি নম্বর-৮৭০৯।
গত ৪ ডিসেম্বর কেশবপুরে যৌথবাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ আটক বহিষ্কৃত যুবদল নেতা ওয়ালিউর রহমান উজ্জলের (৪০) কারাগারে মৃত্যু হয়। ৫ ডিসেম্বর সাড়ে ১০ টার দিকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। উজ্জল কেশবপুর পৌর শহরের আলতাপোল গ্রামের নাজির হোসেন বিশ্বাসের ছেলে। তিনি কেশবপুর পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
গত ২০ বিকেলে সেপ্টেম্বর কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েন কয়েদি মেজবাহ উদ্দিন (৫৪)। তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে আনা হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার শাবলা গ্রামের আফতাব উদ্দিনের ছেলে। মেজবাহ উদ্দিন চেক জালিয়াতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন। তার কয়েদি নম্বর ৮০৭৫/এ।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর কারাগারে ফাতেমা খাতুন (৩৬) নামে এক নারী কয়েদির মৃত্যু হয়। তার কয়েদি নম্বর ১৪২/এ। তিনি যশোর শহরের রেলগেট পশ্চিম পাড়ার ভাদু মিয়ার স্ত্রী। মাদক মামলায় ২০ আগস্ট তাকে ঝিনাইদহ কারাগার থেকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। কারাগারে শ্বাসকষ্ট বেড়ে অসুস্থ হলে হাসপাতালে আনার পথে তিনি মারা যান।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার হাসপাতালের সহকারী সার্জন ডা. সাজ্জাদ হোসেন জানান, কারাগারে কার্ডিয়াক রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সিসিইউতে রেফার্ড করা হয়। মারা যাওয়া অধিকাংশ রোগী আগে থেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন। কারাগারে অবস্থানকালে নিয়মিত চিকিৎসা ও ওষুধ গ্রহণ করতেন তারা। এছাড়া মানসিক সমস্যায় ভুগতেন। তিনি আরও জানান, কারাগারে ৪৬ শয্যার হাসপাতালে গড় ৩২ জন নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকে। তাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিনামূল্যের ওষুধ সরবরাহ করা হয়। কোন রোগীর শারিরীক অবস্থা খারাপ মনে হলে জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার আবিদ আহমেদ জানান, কারাগারে অসুস্থ কয়েদি ও বন্দিদের চিকিৎসাসেবায় কারও অবহেলা নেই। অসুস্থ ব্যক্তিদের প্রশাসনিকভাবে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়। ৫ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে উজ্জলকে কারাগারে আনা হয়। সাড়ে ১০টার দিকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার নথিতে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন এমন একটি এমসি মেডিকেল সার্টিফিকেট ছিল। আরেকজন মিজানুর রহমান সকলের অজান্তে কারাগারের কার্পেট তৈরির পুরাতন গোডাউনের দরজা ভেঙে ভিতরে যায়। এরপর সিলিংয়ের লোহার বিম’র সাথে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। ঘটনাটি বুঝতে পেরে কারারক্ষীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আফজাল মোল্যা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে কারাগারের দায়িত্বরত চিকিৎসক তার সাথে ছিলেন। সাধ্যমত চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হলেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)