নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরের বকুলতলায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি ম্যুরাল অপসারণ করে সেখানেই ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’-এর ভিত্তিপ্রস্তর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে। সোমবার (১৪ জুলাই) যশোরের জেলা প্রশাসক মো: আজাহারুল ইসলাম স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। আগামি ৫ আগস্ট স্মৃতিস্তম্ভটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিভাগের ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পের আওতায় স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ হচ্ছে। স্মৃতিস্তম্ভের উচ্চতা হবে ১৮ ফুট এবং প্রস্থ ৬ ফুট। স্তম্ভের বিভিন্ন অংশে খোদাই করা হবে ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই আন্দোলনের সময় রাজপথে উচ্চারিত উদ্দীপনামূলক স্লোগানসমূহ, যা প্রতিবাদ, সাহস এবং জনগণের প্রতিরোধের শক্তির স্মারক হিসেবে ইতিহাসে অম্লান হয়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিন শহরের বকুলতায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ম্যুরালটি আংশিক ভাঙচুর করে ইসলামিক গ্রাফিতি সেঁটে দেন বিক্ষুদ্ধ ছাত্র জনতা। আর চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি হাতুড়ি-শাবল ও একটি এস্কেভেটর দিয়ে ভাঙার চেষ্টা শুরু করে। ওই সময় সম্পূর্ণ ভাঙতে পারেনি বিক্ষুব্ধরা। সর্বশেষ তৃতীয় দফায় শনি ও রোববার পৌরসভার এস্কেভেটর দিয়ে ম্যুরালটি সম্পূর্ণ অপসারণ করা হয়। ২০১২ সালে যশোরবাসীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২৯ লাখ ৯ হাজার ৯৫ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় ম্যুরালটি।
সোমবার জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধারা, নিহত যোদ্ধাদের পরিবার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। শুরুতেই নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো: আজাহারুল ইসলাম বলেছেন, সারাদেশের মতো যশোরেও জুলাই যোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে। ১৯৭১ সালে রক্তের বিনিময়ে আমরা বহিরাগত শক্তির বিরুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাইয়ে দেশের ভেতরের এক ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। রক্তের বিনিময়ে নতুন এক ইতিহাস রচিত হয়েছে। এ স্মৃতিস্তম্ভ আমাদের সেই সাহস, ত্যাগ আর প্রত্যয়ের কথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মনে করিয়ে দেবে। অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাসার, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, জামায়াতে ইসলামীর জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আবু জাফর সিদ্দিকী, নাগরিক পার্টির নেতা নুরুজ্জামান, জুলাই আন্দোলনে নিহত আব্দুল্লার পিতা আব্দুল জব্বার, জুলাই যোদ্ধা মাসুম বিল্লাহ ও আহাদ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম, যশোর পৌরসভার প্রশাসক (উপসচিব) মো: রফিকুল হাসান, যশোর প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাস্টার মোহাম্মদ শামস গোলাম হোসেন, কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার নুরশেদ আহমেদ ভূঁইয়া, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন প্রমুখ। সার্বিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের নেতা সোহানুর রহমান সোহাগ। অনুষ্ঠানের শেষাংশে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয়।