স্পন্দন ডেস্ক : অনশন ভাঙলেও দাবি আদায়ের ‘স্পষ্ট’ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।
তারা বলছেন, যক্তক্ষণ লিখিত ঘোষণা না আসবে, ততক্ষণ অবস্থান কর্মসূচি চলবে।
এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় কাকরাইলে আন্দোলনকারীদের সামনে তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় বাজেট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও তথ্য দেন অধ্যাপক ফায়েজ।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আবাসন সংকট নিরসনে শিগগিরই অস্থায়ী হল নির্মাণ শুরু হবে।
“আমরা ইউজিসির সদস্যরা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধিরা সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। আমাদের একটাই উদ্দেশ্য ছিল, সেটা হল, আমাদের প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে পড়ার টেবিলে ফেরানো।”
উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম বলেন, “বাজেট বাড়ানোর মাধ্যমে প্রথম দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
“আবাসন সংকটের কথা ভেবে খুব দ্রুত অস্থায়ী হলও নির্মাণ করা হবে। দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণ অতিদ্রুত বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে; কাজও চলছে।”
এসব ‘প্রতিশ্রুতির’ পর শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা অনশন ভাঙলেও অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে শুক্রবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে আসার কথাও বলেছেন তারা।
আবাসন বৃত্তি চালু, পূর্ণাঙ্গ বাজেট অনুমোদনসহ চার দাবিতে এদিন বিকালে কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অনশনে বসেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এর আগে করেন সমাবেশ। সমাবেশে যোগ দিতে সকালে বাসে করে কাকরাইলে আসেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় বর্তমান-সাবেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অংশগ্রহণে সমাবেশ শুরু হয়।
আন্দোলনকারীদের অবরোধের কারণে মৎস্য ভবন থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের চার দাবির মধ্যে রয়েছে-
১. আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে আবাসন বৃত্তি কার্যকর করতে হবে;
২. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করতে হবে;
৩. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে;
৪. শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
তিন দিনে যা ঘটেছে
নিজেদের দাবি দাওয়া নিয়ে বুধবার দুপুরে আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাস থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে ‘লং মার্চ’ শুরু করেন।
মিছিলটি গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজার, জিরো পয়েন্ট, সচিবালয়, শিক্ষা ভবন, হাই কোর্ট ও মৎস্য ভবন মোড়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়লেও তা উপেক্ষা করে কাকরাইল মসজিদের সামনে আসে।
একপর্যায়ে সেই মিছিল প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে এলে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন।
পরে ওইদিন বিকালে পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা যমুনায় যান।
সেখানে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ শিক্ষক প্রতিনিধিরা। বৈঠক শেষে উপদেষ্টা কথা বলতে আন্দোলনস্থলে এলে শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন। একপর্যায়ে ছুড়ে মারা একটি বোতল উপদেষ্টার মাথায় লাগে।
মাথায় আঘাতের পরে মাহফুজ বলেন, “আপনাদের অপকর্মের মাধ্যমে আপনারা পুলিশের অবস্থানকে নায্যতা দিলেন।”
আন্দোলনকারীদের দাবি সরকার বিবেচনা করছে জানিয়ে তিনি আন্দোলনস্থল ত্যাগ করেন। সরকারের তরফে দাবি পূরণের কোনো প্রতিশ্রুতি না আসায় আন্দোলনকারীরা রাতভর কাকরাইল মসজিদ মোড়ের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখান।
এরপর বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদদীন ফেইসবুক লাইভে এসে আন্দোলনে যোগ দিতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান। তার ডাকে সাড়া দিয়ে দিনভর অন্তত ৪০টি একতলা ও দোতলা বাসে করে শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মোড়ে আসেন। আর শিক্ষকদের অন্তত আটটি মিনিবাস ঘটনাস্থলে আসে।
দিনভর অবস্থান করে কোনো ফল না আসায় রাতে বৈঠক করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বৈঠক শেষে রাত ১২টার দিকে গণঅনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেন অধ্যাপক রইছ উদদীন। সেই সঙ্গে দাবি আদায়ে অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে দেন।