Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

❒শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি, হাড় শক্ত ও মেধার বিকাশে ডিম খুবই কার্যকর

সুস্থ সবল থাকতে দিনে কমপক্ষে একটি ডিম খাওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

এখন সময়: সোমবার, ২ জুন , ২০২৫, ০৪:৫০:৪৪ পিএম

 

বিল্লাল হোসেন:  শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি, হাড় শক্ত ও মেধার বিকাশে ডিম খুবই কার্যকর। ডিমে থাকা ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে ও কুসুমে থাকা ভিটামিন ডি হাড়ের জন্য খুই ভালো। ডিমে থাকা ৫ গ্রাম কোলেস্টেরলের মধ্যে ৩.৫ গ্রাম উপকারী ও ভালো কোলেস্টেরল। যা মানুষের হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিমের লিউটিন ও জিয়াজ্যান্থিন চোখের ছানি পড়া রোধেও সহায়তা করে। সুস্থ-সবল থাকতে হলে প্রতিটি মানুষের দিনে কমপক্ষে একটি ডিম খাওয়া দরকার।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক, মেডিসিন, হৃদরোগ, শিশু ও চক্ষু বিভাগের কয়েকজন 

চিকিৎসক জানান, ডিম খেলে শরীরে তাড়াতাড়ি এনার্জি আসে। ডিমে থাকা ভিটামিন থেকেই মূলত এই এনার্জি বা শক্তি মেলে। এতে থাকা ভিটামিন বি খাদ্যকে এনার্জি বা শক্তিতে রূপান্তরিত করে। ডিমে থাকে ভিটামিন এ। যা দৃষ্টিশক্তিকে উন্নত করে। তাছাড়া ডিমে থাকা কেরোটিনয়েড আর ল্যুটেন বয়স হয়ে গেলে চোখের এক বড় সমস্যা, ম্যাকুলার ডিজেনারেশন হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। ডিমে থাকা ভিটামিন ই কোষ আর ত্বকে থাকা ফ্রি র‌্যাডিকেল ধ্বংস করে। তাই ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। এছাড়াও নতুন কোষ তৈরি হতেও সাহায্য করে থাকে। নিয়মিত ডিম খেলে ব্রেস্ট ক্যানসারের সম্ভাবনা কমে যায়। পেশী ব্যথায় অনেকেই ভোগেন। ডিমে থাকা ভিটামিন ডি পেশী মজবুত করে। নারী স্বাস্থ্যের উন্নতিতে জন্য প্রতিদিন ৫০-৬০ শতাংশ প্রোটিন দরকার হয়। যা ডিম থেকেই পাওয়া যায়। একটি ডিম থেকে ৬.৫ গ্রাম প্রোটিন মেলে। এছাড়া ডিম খেলে হার্টে রক্ত জমাট বাঁধে না। ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। ডিম কোলেস্টেরল বাড়ায় না। বরং ডিম কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।  কারণে ডিমে রয়েছে ওমেগা ৩। আবার ডিম এইচডিএল বা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় প্রায় ১০ শতাংশ। ডিম লিপিড প্রোফাইলও নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাছাড়া ডিম লোহিত রক্তকণিকা বাড়াতেও সাহায্য করে।  শরীরের সার্বিক সুস্থতায় কোলাইন খুবই প্রয়োজন। কোলাইনের ঘাটতি হলে লিভারের নানা সমস্যা বা নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার হয়। ডিমে প্রায় ৩০০-৩৫০ মাইক্রোগ্রাম কোলাইন থাকে। তাই ডিম খেলে লিভার ও স্নায়ু ভালো থাকে। প্রোটিনের মূল উৎস হলো অ্যামিনো অ্যাসিড। প্রোটিন তৈরিতে প্রায় ২১ ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড লাগে। যার মধ্যে ৯টি শরীরে তৈরি হয় না। এজন্য বাইরে থেকে প্রোটিন গ্রহণ করতে হয়। যা মেলে ডিম থেকে।  ডিম হলো সালফারের উৎস। নখকে সুন্দর ও সাদা রাখতেও সাহায্য করে সালফার।

অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতায় নারী ও শিশুরা বেশি ভোগে। শরীরে পর্যাপ্ত আয়রন থাকলে অ্যানিমিয়া হয় না। আর ডিমে থাকে আয়রন। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ডিম দুর্দান্ত কার্যকরী। ঘন ঘন সর্দি-কাশি বা জ্বরে ভুগতে না চাইলে রোজ ডিম খান। ডিমে থাকা জিংক ইমিউনিটি সিস্টেমকে অনেকটাই শক্তিশালী করে। হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য উন্নত করে ডিম। হাড় মজবুত করে ফসফরাস। এই উপাদানটি আবার দাঁতও মজবুত করতে সাহায্য করে।  অনেকেই মনে করেন ডিম বোধ হয় ওজন বাড়ায়। বিশেষ করে ডিমের কুসুম ওজন বাড়িয়ে দেয়! তবে এ ধারণা ভুল। বরং ডিম খেলে ওজন কমে। কারণ ডিম অতিরিক্ত ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। একটি ডিম শরীর থেকে ৪০০ ক্যালোরির কমাতে পারে।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রওশন আলী জানান, বয়সের ভারে হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে এখন নিয়মিত ডিম খান। ডিম খাওয়ার ফলে তিনি শারীরিকভাবে অনেকটা সুস্থতা বোধ করেন। হাড়ের জয়েন্টের ব্যথা অনেকটা কম।

মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রেহেনা বেগম জানান, শারীরিকভাবে প্রচন্ড দুর্বল লাগতো। প্রতিদিন একটি করে ডিম খেয়ে এখন অনেকটা সবল মনে হয়।

যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক রাসেল জানান, একটি ডিমে প্রোটিন থাকে ৬ গ্রাম।  যা মানব দেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডিমের সাদা অংশে থাকে প্রোটিন ও কুসুমে থাকে ভালো ফ্যাট, আয়রন ও ভিটামিন। শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি, হাড় শক্ত করতে ও মেধার বিকাশে ডিম খুবই কার্যকর। ডিমে আরও আছে ভিটামিন এ, যা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে। আর কুসুমে থাকা ভিটামিন ডি, হাড়ের জন্য ভালো। তাই প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। 

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত জানান,  প্রতিদিন ডিম খেলে শরীরে অনেক পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হয়। তবে অতিরিক্ত ডিম খাওয়া উচিত নয়। স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা না থাকলে একটি বা দুটি ডিম দৈনিক খাওয়া যেতেই পারে। একটি ডিমে ৭৫ ক্যালরি, ৫ গ্রাম চর্বি, ৬ গ্রাম প্রোটিন, ৬৭ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম, ৭০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম এবং ২১০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল রয়েছে। এ ছাড়া ডিম ভিটামিন এ, ডি, এবং বি ১২ এর একটি বড় উৎস। একটি ডিম সকালের নাস্তা বা রাতের খাবারের জন্য স্বাস্থ্যকর বিকল্প। তিনি আরও জানান, রোগীদের শরীরে এনার্জির কথা বিবেচনা করে প্রতিদিনের নাস্তায় একটি করে ডিম দেয়া হয়।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিরিন নিগার জানান, ডিম হলো একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ উৎস। যা অনেক ধরণের অপরিহার্য ভিটামিন ,খনিজ এবং  অন্যান্য পুষ্টিকর  উপাদান ধারণ করে। তিনি বলেন ডিম উচ্চমানের প্রোটিন,পুষ্টিতে সমৃদ্ধ, চোখের স্বাস্থ্য , মস্তিষ্কের কার্যকারিতা, ওজন নিয়ন্ত্রণ, হাড়ের স্বাস্থ্য,পেশী গঠন, স্বাস্থ্যকর চজুল ও ত্বক এবং সাশ্রয়ী ও বহুমুখী। সুস্থ-সবল থাকতে হলে প্রতিটি মানুষের দিনে কমপক্ষে একটি ডিম খাওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন।

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)