Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

অচল কুয়েটে সেশনজট বাড়ছে

এখন সময়: শুক্রবার, ৯ মে , ২০২৫, ০৯:৩০:৪৫ পিএম

 

খুলনা প্রতিনিধি: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-কুয়েটে দীর্ঘ ৭৪ দিন পর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও ক্লাসে ফেরেননি শিক্ষকরা।

একাডেমিক কার্যক্রম চালু হওয়ার তৃতীয় দিনেও শিক্ষকরা তাদের কর্মবিরতিতে অনড় রয়েছেন। শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন।

এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরোদমে কবে নাগাদ ক্লাস শুরু হবে তা নিয়ে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা বাড়ছে। পাশাপাশি সেশনজট বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থী।

একই সাথে স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক এবং উন্নয়ন কার্যক্রম।

উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হযরত আলী শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। তবে এখনো কোনো ফলপ্রসূ সমাধান আসেনি।

মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আনিসুর রহমান ভুঞা এবং ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার জানান, তারা চেষ্টা করছেন যাতে দ্রুত সংকট নিরসন হয়ে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

কুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক মো. হযরত আলী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সংকট নিরসনের চেষ্টা করা হচ্ছে।”

মঙ্গলবার সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পাসে সুনসান নীরবতা। শ্রেণিকক্ষ ফাঁকা পড়ে আছে। শিক্ষকরা ক্লাসে না যাওয়ায় শিক্ষার্থীরাও আসেননি। হলের শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই নিজ নিজ কক্ষে অবস্থান করছেন।

কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীকে হলের সামনে আড্ডা দিতে ও ক্যাম্পাসের সড়কগুলোতে চলাচল করতে দেখা গেছে। ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসেনি। প্রধান গেইটে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে সাধারণ সভা করে শিক্ষক সমিতি। সভায় শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী শিক্ষার্থীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা।

মঙ্গলবার দুপুরে কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. ফারুক হোসেন বলেন, “১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের পর কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী কয়েকজন শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। আমরা এর বিচার দাবি করলেও কুয়েট প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শিক্ষকদের লাঞ্চিতকারীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাস-পরীক্ষা নেব না।”

ফারুক বলেন, সাত দিনের মধ্যে শাস্তি কার্যকর না হলে প্রশাসনিক কাজ থেকেও বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

এদিকে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় এরই মধ্যে দুই দফা ক্ষমা চেয়েছে শিক্ষার্থীরা।

কুয়েটের শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম, মো. ওবায়দুল্লাহ, শেখ মুজাহিদ, গালিব রাহাত, তৌফিক বলেন, শিক্ষকদের সঙ্গে তারা কোনো বিদ্বেষমূলক আচরণে যেতে চান না। এরই মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশে অনিচ্ছাকৃত যেকোনো ভুলের জন্য জন্য শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে। তারা চান, পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হোক।

শিক্ষার্থীরা বলেন, তারাও সব অন্যায়ের বিচার চান। পাশাপাশি ক্লাসটাও চলুক। না হলে বড় ধরনের সেশনজটে পড়তে হবে। এমনিতে কুয়েটে এক বছরেরও বেশি সেশনজট ছিল। এরপর আরও আড়াই মাস তারা পিছিয়ে গেছেন।

ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়; এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।

ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়। রাতে খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন।

এরপর আগের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আবাসিক হল খুলে দেয়ার দাবিতে ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে শিক্ষার্থীরা কুয়েটের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। উপাচার্যের পদত্যাগের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়া হয়। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগের ঘোষণা না আসায় ২১ এপ্রিল অনশনে বসেন শিক্ষার্থীরা।

এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সি আর আবরার ১৮ এপ্রিল সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে আসেন। তবে দীর্ঘ সময় বুঝিয়েও তিনি অনশন ভাঙাতে পারেননি।

এরপর দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়ার পাশাপাশি সব হল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ মে শুরু হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত আসে।

আমরণ অনশন কর্মসূচির তৃতীয় দিনে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন অনেক শিক্ষার্থী। উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন তারা।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) গঠন করা কমিটির তিন সদস্যও কুয়েট ক্যাম্পাসে যায়।

রাতে উপাচার্য ও উপ উপাচার্যের অপসারণের বার্তা দিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান।

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)