Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

❒কৃষকের মাথায় হাত

যশোরে হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে উঠতি বোরো ধান, পাট ও সবজি ক্ষেত তছনছ

এখন সময়: শুক্রবার, ৯ মে , ২০২৫, ০৬:০৬:৪২ পিএম

স্পন্দন ডেস্ক: আধা ঘণ্টার শিলাবৃষ্টিতে যশোরে বোরো ধান, পাট ও সবজি ক্ষেত তছনছ হয়ে গেছে। কেটে রাখা ধান পানির নিচে, আর যে সকল ধান কাটা হয়নি অধিকাংশ শিলার আঘাতে ঝরে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা বলছেন, আকাশ থেকে বৃষ্টির সাথে শিলা পড়েছে বেশুমার। যেদিক দিয়ে গেছে, সর্বনাশ করে গেছে। ডানে-বাঁয়ে তেমন কিছুই হয়নি। ধানক্ষেত হয়ে গেছে যেন খড়ের ক্ষেত। পাট ক্ষেতে আগা ছিড়ে যেন ডাটা খাড়া হয়ে আছে। এর পাশাপাশি শিলায় আম, লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

বিমানবন্দর সংলগ্ন আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার দুপুর ২টার দিকে আকাশ অন্ধকার হয়ে আসে। শিলাবৃষ্টি শুরু হয় দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে। থেমে থেমে বৃষ্টি হয় বিকেল ৪টা ২০ মিনিট। বৃষ্টির পরিমাণ ৬ মিলিমিটার। সেইসাথে ৩৫ কিলোমিটার বেগে ঝড় হয়।

গত দুই সপ্তাহের তীব্র তাপদাহ শেষে সোমবার দুইটার দিকে আকাশ কালো মেঘে ঢাকা পড়ে। এরপর শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া। কালবৈশাখির ঝড়ের সঙ্গে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। একপর্যায়ে বৃষ্টি কম হলেও প্রচুর পরিমাণে শিলা পড়তে থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে শিলাবৃষ্টি কারণে যশোরে বোরো মৌসুমে উঠতি ধানের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে । সবচেয়ে বেশি ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে চৌগাছা, সদর ও বাঘারপাড়া উপজেলাতে। শেষ সময়ে ধানে শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াতে চিন্তিত হাজারোও চাষি। শিলাবৃষ্টিতে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

চৌগাছার সিংহঝুলী মাঠপাড়াতে গ্রামের কৃষক টনিরাজ জানান, তার জমির ক্ষেতে ধানগাছ শুধু দাঁড়িয়ে আছে, শিষ থেকে ধান ঝরে পড়ে রয়েছে মাটিতে। শিলার আঘাতে ঝরে পড়া ধানের ক্ষেতের মাটিতে সোনালী রঙের হয়ে আছে। টনিরাজ বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে ধান করেছিলাম। ১৫ কাঠা কেটেছিলাম। ২৫ কাঠা কাটা হয়নি। শিলাবৃষ্টির পর মাঠে গিয়ে দেখি একটি ধানও নেই। তিনি বলেন, এখনও জমির লিজের ২০ হাজার টাকা দিতে হবে খেত মালিকের। সব শেষ হয়ে গেছে।’

একই গ্রামের কৃষক শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন,  ‘এবার ১১ বিঘা ধান করেছিলাম। ৪বিঘা কাটা হয়নি, দেড় বিঘা কেটে খেতেই রেখেছিলাম। এই ধান সব শেষ হয়ে গেছে। যেগুলো কাটা হয়নি সব ঝরে গেছে। এতে সাড়ে তিন লাখ টাকার অধিক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।’

হৈবতপুরের আব্দুস সাত্তার জানান, শিলাবৃষ্টিতে তার ঘরের টিনগুলো ফুটো হয়ে গেছে। এছাড়া চুড়ামনকাটির আদর্শপাড়ায় দুটি ঘরের টিনের পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দোগাছিয়া গ্রামের কৃষক হাবিব জানান, বিঘা প্রতি  ৩০ মন পাওয়ার আশা ছিলো। হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে তার পাকা ধান অর্ধেকের বেশি ঝরে গেছে। শিলায় চুড়ামনকাটি ও হৈবতপুর মাঠে বিঘাবিঘা জমির পটলের ফুল নষ্ট ও আগা ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে।

যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী জানান, কয়েক মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে চাষিদের স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে। তারা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতির পরিমাণ এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, সিংহঝুলী, বলিদাপাড়া, ঝাউতলা, জামালতা, জগন্নাথপুর, কয়ারপাড়া মাঠের ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এসব এলাকার ২/৩ হাজার হেক্টর জমির বাসমতি ধানের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। বেশিরভাগ খেতেই বাসমতি ও মিনিকেট ধান সব ঝরে গেছে। এছাড়া পৌর এলাকার পাঁচনমনা, ইছাপুর, তারিনিবাস, কংশারীপুর, স্বরুপদাহ, চৌগাছা সদর ইউনিয়নের লস্কারপুর, পিতম্বরপুর, মন্মথপুর মাঠের ধানেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শুধু ধানেরই না এসব মাঠের পটল, কচুসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি, আম লিচুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া বাঘারপাড়াতে কৃষকের পাকা ধান কেটে স্তুপ করা গাদায় বজ্রপাতে কয়েকটি মাঠে আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আকস্মিক এই শিলাবৃষ্টিতে যশোরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চৌগাছাতে। মাঠে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ধানের ক্ষতি হয়েছে। এ বছর এক লাখ ৫৭ হজার ৫০ হেক্টর জমিতে ধানচাষ হয়েছিলো। এর মধ্যে সোমবার পর্যন্ত কাটা হয়েছে ৫১ ভাগ জমির ধান। এখন কেটে রাখা ধানক্ষেত থেকে পানি বের করার পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করছি, আজ থেকে আবহাওয়ার উন্নতি ঘটবে। তাই আমরা চাষিদের পাকা ধান দ্রুত কেটে নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।’

তিনি জানান, দুপুরের শিলা বৃষ্টিতে সদরসহ চার উপজেলায় ৪ হাজার ৯০১ হেক্টর জমির ধানের ক্ষতি হয়েছে। চৌগাছা উপজেলায়  ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ২০৪ হেক্টর জমির ধান, সদরে  ১ হাজার ৮৬০ হেক্টর ও শার্শা ও বাঘারপাড়া উপজেলায় ১ হাজার ৬৫৭ হেক্টর জমির ধান।

 

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)