নূরুল হক, মণিরামপুর: অনুকূল আবহাওয়া, সার এবং কীটনাশক কৃষকের নাগালের মধ্যে থাকায় এবার মণিরামপুরে বোরা ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের বাজার দর মোটামুটি ভাল থাকায় চাষিরা আশার আলো দেখছেন। তবে ধানকাটা ভরা মৌসুম বর্তমান শ্রমিকের তীব্র সংকটের কারণে উচ্চ মূল্যে শ্রমিক কিনে চাষিরা ক্ষেত থেকে ধান ঘর তুলতে হিমশিম খাচ্ছে। শ্রমিক সংকটের মুহূর্তে উপজেলার হানুয়ার বটতলা মোড় বসছে ধানকাটা শ্রমিকের জমজমাট হাট। প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে সকাল সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত এ হাটে বিভিন্ন এলাকার চায়ের দোকানি, ভ্যানচালক এমনকি অনেক শিক্ষার্থীরাও অংশ নিয়ে উচ্চমূল্যে মজুরিতে ধান কেটে বাড়তি রোজগার করছেন। শ্রমিকদের সাথে কথা বলে বটতলা এ হাটের খবর জানাগেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসারের দেয়া তথ্যমতে, এবার মণিরামপুর উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২৮ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমি। কিন্তু ভবদহের জলাবদ্ধতার কারণে এবার চাষ হয় ২৬ হাজার নয়শ’ হেক্টর জমি। তবে মৌসুমের শুরুতে অনুকূল আবহাওয়া এবং বীজ, সার, কীটনাশক ও সেচ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় গত কয়েক বছরের তুলনায় ধানের ফলন হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ। বর্তমান ধানে পেঁকে যাওয়া এবং আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে ধান ঘরে তোলার জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।
এ দিকে ধানকাটা মৌসুমের শুরুতে বাজার দর ভাল থাকায় চাষীরা আশার আলো দেখত শুরু করছে। কিন্তু বর্তমান শ্রমিকের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। আর এ সুযোগে উপজেলার হানুয়ার বটতলায় শুরু হয়েছে মৌসুমি শ্রমিকের জমজমাট হাট। প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত এ হাট বিভিন্ন এলাকার চায়ের দোকানী, ভ্যানচালক এমনকি শিক্ষার্থীসহ হাজার শ্রমিক অংশ নিয়ে উচ্চমূল্যে মজুরি (ধানকাটা শ্রমিক) বিক্রি করে বাড়তি রোজগার করছেন। সকাল সাতটা থেকে বেলা ১২ টা পর্যন্ত জনপ্রতি ধানকাটা শ্রমিকর মূল্য দিতে হচ্ছে আটশ’ থেকে শুরু করে বার’শ টাকা পর্যন্ত। কোনো উপায়ান্ত না পেয়ে চাষিরা উচ্চ মূল্যে শ্রমিক নিতে বাধ্য হচ্ছেন। চালুয়াহাটি গ্রামের প্রান্তিক চাষি ওয়াদুদ হাসান বলেন, ধান পেকে যাওয়ায় শ্রমিকের তীব্র সংকটের জন্য বটতলা হাট থেকে জনপ্রতি সাড়ে আট’শ টাকা হার কয়েকজন শ্রমিক এনে ধান কাটা শুরু করছি। আবার খেদাপাড়া এলাকার চাষি সাহান মোড়ল জানান, তিনি প্রায় ২০ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন। তিনি জনপ্রতি এক হাজার টাকা মজুরি দিয়ে শ্রমিক নিয়ে ধানকাটা শুরু করেন। হাটে অংশ নেয়া চায়ের দোকানী সিরাজুল ইসলাম, আবদুর রউফ জানান, সারাদিন চা বিক্রি করে পাঁচ’শ টাকা রোজগার করা সম্ভব হচ্ছেনা। ফল পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা ধান কেটে আট থেকে হাজার টাকা রোজগার করা যাচ্ছে। এ ছাড়া শামছুর রহমান, শিমুল হাসান, মিরাজুল ইসলাম, আনিচুর রহমান, মফিজুর রহমানসহ অনেক শিক্ষার্থীরা এখন ধান কেটে বাড়তি রোজগার করছে।
মণিরামপুর পৌরশহর, রাজগঞ্জ, চিনাটালা, নেহালপুর, ঢাকুরিয়া, কুয়াদা, খেদাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ধানের বাজার মূল্য বেশ ভাল। এক আড়তদার জানান, মোটা জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে একহাজার দুই’শ টাকা। অন্যদিক ব্রি ২৮, ব্রি-৬৩ সহ বিভিন্ন চিকন ধান বিক্রি হচ্ছে ১৪ থেকে ১৭’শ টাকা মন দর। বেগমপুর গ্রামের চাষি মতিয়ার রহমান জানান, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ধানের ফলন হয়েছে খুব ভাল।
এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে উল্লেখ করে উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদা আক্তার বলেন, ইতোমধ্যে উপজেলার প্রায় ৭০ ভাগ ধান ক্ষেত থেকে চাষীরা ঘরে তুলে ফেলেছেন। যদি আবহাওয়া অনুকূল থাকে তাহলে আগামি ১০ দিনের মধ্যে বাকি ধান ঘর উঠানো সম্ভব হবে।