Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

স্ত্রীকে ভারতে পাচার ও হত্যার দায়ে স্বামী কামরুলের যাবজ্জীবন

এখন সময়: শনিবার, ১০ মে , ২০২৫, ১২:৫৫:১৮ এম

নিজস্ব প্রতিবেদক : স্ত্রীকে ভারতে পাচার ও হত্যার দায়ে স্বামী কামরুল ইসলামকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছে যশোরের একটি আদালত। মঙ্গলবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এবং মানব পাচার দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক গোলাম কবির এক রায়ে এ আদেশ দিয়েছেন। সাজাপ্রাপ্ত কামরুল ইসলাম যশোর সদরের বানিয়ারগাতি গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে। সাজাপ্রাপ্ত কামরুল ইসলাম কারাগারে আটক আছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল লতিফ লতা।
আদালত ও মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে যশোর সদরের বসুন্দিয়া গ্রামের মোল্লাপাড়ার ইশারত আলী মোল্লার মেয়ে সালমা খাতুনকে বিয়ে খরেন আসামির কামরুল ইসলাম। বিয়ের পর কামরুল কাজকর্ম তেমন একটা করতোনা। কামরুল তার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে ঢাকায় যেয়ে দুইজন একসাথে কাজকর্ম করবে বলে স্বজনদের জানায়। সালমার স্বজনেরা তার স্বামীর সাথে ঢাকায় পাঠাতে রাজি হয় না। ২০২২ সালের ১৫ এপ্রিল দুপুরে সালমাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় তার স্বামী কামরুল। এরপর থেকে দুইজনের মোবাইল ফোন বন্দ হয়ে যাওয়ায় সালমার স্বজনেরা খোঁজাখুঁজি করে উদ্ধারে ব্যর্থ হয়।
২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল সালমা ভারত থেকে মোবাইল ফোনে জানায় কামরুল তাকে ঢাকাতে না নিয়ে ভারতের গুজরাট রাজ্যের আনন্দ শহরে নিয়ে গেছে। এছাড়া তাকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়েছে বলে উদ্ধারের অনুরোধ করে। ৬ মে সালমা আবারও বাড়িতে ফোন করে জানায় কামরুল তাকে অপরিচিত ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দিয়েছে তারা তার উপর পাশবিক নির্যাতন করে। এদিন রাতে কামরুল তার শ্বশুর শহিদুলের কাছে ফোন করে জানায়, খুব বিপদে আছে। সালমার অবস্থা ভালো না। সে দেশে ফিরে আসছে। ৮ মে সালমার পিতা শহিদুল ইসলাম জামাই কামরুলের বাড়িতে যেয়ে মেয়ে সালমার খোঁজ জানতে চায়। এ সময় কামরুল মেয়ে সালমার খোঁজ না দিয়ে তার শ্বশুর শাহিদুলকে গালিগালাজ করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।
ভারতে পাচার মেয়ে সালমাকে উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে জামাই কামরুল ইসলামকে আসামি করে কোতয়ালি থানায় মানব পাচার দমন আইনে মামলা করেন।
মামলার তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, কামরুল ইসলাম ও সালমার সাথে ভারতের গুজরাটের আনন্দ শহরে তাদের পরিচয় হয়। পরে তার দেশে ফিরে বিয়ে করে। বিয়ের পর কামরুল ও তার স্ত্রী ঢাকায় চাকরি করার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে ভারতে গুজরাটে চলে যায়। গুজরাটের আনন্দ শহরে তাদের পূর্বপরিচিত জামাল মল্লিকের মাধ্যমে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। কামরুল ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ও সালমা একটি হোটেলে কাজ নেয়। কয়েক মাস যেতে না যেতে সালমা খাতুন তার পূর্ব পরিচিত জামাল মল্লিকের সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। কামরুল বাইরে কাজে গেলে সালমা তার প্রেমিক জামাল মল্লিকে বাসায় নিয়ে আসতো। কামরুল সালমাকে নিয়ে দেশে ফিরে আসতে চাইলে সালমা রাজি হয়না। এনিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। ৬ মে সন্ধ্যায় সালমার সাথে কামরুলের বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে পেঁয়াজ রসুন বাটা হামান দিস্তার ডাটি দিয়ে সালমার মুখে আঘাত করে। সালমা মেঝেতে পড়ে গেলে কামরুল তার ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর কামরুল নিহত সালমার পাসপোর্ট ও মোবাইল ফোন নিয়ে ঘরে লাশ ফেলে পালিয়ে দেশে ফিরে আসে।
মামলার তদন্তকালে সালমার পাসপোর্টের ছবি ভারতের গুজরাটের ভালেজ থানায় পাঠানো হয়। থানা কর্তৃপক্ষ সালমার লাশের ছবি হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে পাঠায়। একই সাথে জানানো হয়, সালমার লাশ গুজরাটের আনন্দ শহরের একটি খাল থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। এ ঘটনায় ভালেজ থানায় একটি নিয়মিত মামলা হয়।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ভারতের গুজরাট থেকে নিহত সালমার ময়না তদন্ত রিপোর্ট ও আটক আসামি কামরুল ইসলামের তথ্য ও সাক্ষীদের বক্তব্যে পাচার ও হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আদালতে চার্জশিট জমা দেন কোতয়ালি থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই অমিত কুমার দাস। দীর্ঘ সাক্ষী গ্রহণ শেষে আসামি কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে পাচার ও হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, ১ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)