সুব্রত সরকার, মহম্মদপুর (মাগুরা) : মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার ঝামা মহেশপুর এলাকায় সুদের চাপ সইতে না পেরে কারবারীর সামনেই ইয়াসিন (৩০) নামে এক যুবক বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। সুমন মহেশপুর এলাকার আব্দুল গনি মোল্লার ছেলে।
জানা গেছে, ইয়াসিন ওই এলাকার আছাদুজ্জামান নুর নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা সুদে নেন ২০২২ সালে। সাপ্তাহিক কিস্তি আকারে প্রতি সপ্তাহে ১ হাজার টাকা করে সুদ প্রদান করে। এভাবে অন্তত ৪০ সপ্তাহ সুদের টাকা প্রদান করার পর ইয়াসিন সুদের টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। বিষয়টি ইয়াসিনের বাবা জানার পরে স্থানীয় মোক্তার নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে আছাদুজ্জামান নুরকে আসল টাকা পরিশোধ করে দেন। লেনদেন শেষ করার পরেও টাকার জন্য প্রায়ই ইয়াসিনকে চাপ দিতে থাকেন আছাদ। এরপর মসজিদের কাজ করার কথা বলে ইয়াসিনের মাধ্যমে তার শ্বশুরবাড়ি এলাকা থেকে ইট নেন আছাদ। ইটের টাকা চাইতে গেলে আছাদ ইয়াসিনকে বলে তোমার কাছে টাকা পাবো সেটি আগে পরিশোধ করো। এ বিষয় নিয়ে দু’জনের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। পরে ইয়াসিন আছাদের কাছে টাকা চেয়ে না পাওয়ায় উল্টো সুদের টাকা ফের দাবি করায় ঘটনার দিন বুধবার সন্ধ্যায় সুদের কারবারী আছাদের সামনেই ঝামা বাজারে ইয়াসিন বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এ সময় স্থানীয়রা তাকে অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
সরজমিন জানা যায়, ঝামা মহেশপুর এলাকার হাজী মৃত শমসের মোল্যার ছেলে আছাদুজ্জামান নুর দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় চড়া সুদে টাকা দিয়ে থাকেন। প্রতি সপ্তাহে গ্রাহকদের কাছ থেকে সুদের কিস্তির টাকা আদায় করেন আছাদ নিজেই। সুদের টাকার চাপ সইতে না পেরে কেউ কেউ এলাকা থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য ছেড়ে পালিয়েও গেছেন। স্থানীয় ওয়েল্ডিং ব্যবসায়ী শরাফত বিশ্বাস, আব্দুল্লাহ, স্থানীয় চা বিক্রেতা জাহিদুল ইসলাম বলেন, আছাদ বিভিন্ন লোকজনকে সুদে টাকা পয়সা দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন দীর্ঘদিন ধরে।
ব্যবসায়ী মো. মিরাজ হোসেন নামে এক ব্যক্তি আছাদের কাছে সুদে টাকা নিয়ে ব্যবসা করতেন। সুদের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়ে ব্যবসা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। কসমেটিকস ব্যবসায়ী সাদিক হোসেন বলেন, ২ লাখ টাকা সুদে নিয়ে ৭৫ হাজার টাকা লাভসহ আসল ২ লাখ টাকা পরিশোধ করার পরেও তার ৭০ হাজার টাকার একটি চেক এখনো আটকে রেখেছেন আছাদ। অভিযুক্ত আছাদুজ্জামান নুর আভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ইয়াসিন আমার কাছ থেকে সুদে কোনো টাকা নেয়নি। সে তার ব্যবসায়ের লভ্যাংশের টাকা দেয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছিল। আমি কাউকে কোনো সুদে টাকা দেইনি। মহম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।