সুব্রত সরকার,মহম্মদপুর ( মাগুরা) : মহম্মদপুর উপজেলার বড়রিয়ার মাঠ। সময় দুপুর আড়াইটা। সূর্যের আলোয় ঝলমলে মাঠের প্রতিটি কোণায় যেন উত্তেজনার ঢেউ। চারপাশে হাজারো মানুষের ভিড়। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সবার চোখে একটাই লক্ষ্য- ঘোড়ার গতিময় দৌড়। ২৮ পৌষ (১২ জানুয়ারি) বড়রিয়ার ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতার দিন। স্থানীয়দের ভাষায় এটি কেবল একটি মেলা নয়, এটি বড়রিয়ার প্রাণ। সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে থাকা ঘোড়াগুলো যেন একেকটি প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি শিল্পকর্ম। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ২০টি ঘোড়া। প্রতিটি ঘোড়া আলাদা। কারো গায়ের রং চকচকে কালো, কারো আবার গাঢ় বাদামি। দর্শকদের চিৎকার আর হাততালির মাঝে বাঁশি বাজতেই ঘোড়াগুলো দৌড় শুরু করে। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া একজন প্রতিযোগী বলেন, ‘এই ঘোড়াটি আমার সন্তানের মতো। প্রতিদিন ভোরে উঠে ওকে ট্রেনিং দেই। মেলার দিন শুধু ঘোড়া নয়, আমিও যেন দৌড়াই। ঘোড় দৌড়ের পাশাপাশি মেলায় দেখা মিলেছে নানা ধরণের স্টল। বাঁশি, মাটির হাঁড়ি-পাতিল, শিশুদের খেলনা এবং বাহারি পোশাকের দোকান। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা যায় খাবারের দোকানগুলোতে। স্থানীয় এক প্রবীণ বাসিন্দা আব্দুল জলিল (৮২) বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে এই মেলা দেখে আসছি। তখন মেলার মঞ্চ ছিল কাঁচা রাস্তা। এখন সব বদলেছে। কিন্তু মেলার আনন্দ বদলায়নি। এটা আমাদের ইতিহাস। জানা যায়, প্রায় ১৩০ বছর আগে শানু সরদার, ধনাউল্লাহ সরদার ও সোনাউল্লাহ সরদারসহ বেশ কয়েকজন এই মেলার সূচনা করেন। প্রথম দিকে কাঁচা রাস্তায় ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হত। এখন রাস্তাগুলো পাকা হয়ে যাওয়ায় প্রতিযোগিতা স্থানান্তরিত হয়েছে বড়রিয়া মাঠে। আয়োজকদের মতে, মেলা বিনোদনের স্থান নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন। যেখানে ঐতিহ্য, গল্প এবং মানুষের সম্পর্ক একে অপরের সাথে জড়িয়ে যায়। মেলার আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহাজান সর্দার জানান, আমরা চেষ্টা করেছি মেলাকে বড় পরিসরে আয়োজন করতে। ১৩০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে এই মেলা ও ঘোড় দৌড়ের আয়োজন করা হয়। আমি ৪০ থেকে ৪৫ বছর হচ্ছে এই আয়োজনের সাথে আছি। বড়রিয়া মেলার ঘোড় দৌড় কেবল একটি খেলা নয়। এটি মানুষের স্বপ্ন, ঐতিহ্য এবং ইতিহাসের মিশ্রণে তৈরি এক মহোৎসব। ধুলোমাখা মাটির গন্ধ, ঘোড়ার খুরের শব্দ, আর মানুষের উল্লাস মিশে তৈরি হওয়া এই মেলা কেবল কয়েকটি দিনের উৎসব নয়, এটি ১৩০ বছরের গল্প।রাত ১০ পর্যন্ত মেলা ঘুরে এসে প্রতিবেদন তৈরি করা পর্যন্ত মেলায় আইনশৃংখা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল।এবছর তেমনকোন অপ্রতিকর ঘটনা ঘটেনি। মহম্মদপুর থানার পক্ষ থেকে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা ছিল।