বাগেরহাট প্রতিনিধি : আজ ১২ ডিসেম্বর বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে কচুয়া সদরসহ গোটা উপজেলা পাক বাহিনী ও তাদের দোসরদের কবল থেকে মুক্ত হয় । সরকারি ও বে-সরকারি ভবনসহ সর্বত্র উড়তে শুরু করে লাল সবুজের পতাকা ।
২ ডিসেম্বর কচুয়া উপজেলার ভাসা বাজারে রাজাকারদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। রাজাকারদের আকস্মিক আগমন ঠেকাতে আগে থেকে সেখানে ২৯ মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান করছিলেন। দুপুরের দিকে রাজাকারদের একটি বড় বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। এ অবস্থায় ২৯ মুক্তিযোদ্ধা রাজাকারদের প্রতিহত করতে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং তৎকালীন কচুয়ার অন্তর্গত সন্তোষপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের মূল ক্যাম্পে খবর পাঠানো হয়। মুক্তিযোদ্ধারা মূল ক্যাম্প থেকে ভাসা পর্যন্ত পৌছানোর আগে আলফাজ হোসেন ননী, ওমর আলী, আতাহার, আবেদ আলী ও আতিয়ার নামে ৫ মুক্তিযোদ্ধা রাজাকারদের হাতে শহিদ হন। এরপর রাজাকাররা উল্লাস করে পাকিস্তান জিন্দাবাদ সেøাগান দিতে দিতে কচুয়ায় ফিরে যায়। রাজাকারদের হাতে এ পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে মুক্তিযোদ্ধারা প্রস্তুতি নিতে থাকে। ইতোমধ্যে ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক ভাবে সহায়তা দানকারী ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। পরদিন ৭ ডিসেম্বর ভুটান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। ভারতের স্বীকৃতির পর গঠিত মিত্র বাহিনী পাক বাহিনীর উপর তীব্র আক্রমণ শুরু করে। বাগেরহাট সাব সেক্টর কমান্ডার তাজুল ইসলাম কচুয়া আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। ১২ ডিসেম্বর সকালে আগরতলা মামলার অন্যতম আসামি সাব- সেক্টর কমান্ডার তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা কচুয়ার দিকে অগ্রসর হয়। পাহারার দায়িত্বে থাকা রাজাকারদের দ্বারা কচুয়ার অদূরে মঘিয়া নামক স্থানে মুক্তিযোদ্ধারা বাধাগ্রস্ত হয়। এখানে যুদ্ধ শুরু হয়। রাজাকারদের গুলিতে সুলতান শহিদ হন। এরপর পরমুক্তিযোদ্ধা সম্মুখ যুদ্ধ শুরু করলে রাজাকাররা পিছু হটে। ধীরে ধীরে কচুয়ার সর্বত্র উড়তে থাকে মানচিত্র খচিত লাল সবুজের পতাকা। বিজয়ের আনন্দে উদ্বেলিত হয় মুক্তিযোদ্ধারা।
এ প্রসঙ্গে কচুয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার শিকদার হাবিবুর রহমান বলেন, চূড়ান্ত বিজয়ের ৪ দিন আগে জন্মস্থান কচুয়া পাক বাহিনী এবং তাদের দোসরদের হাত থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলাম। এ কারণে ১২ ডিসেম্বর আমাদের কাছে একটি ঐতিহাসিক দিন।