বাবুল আক্তার, চৌগাছা: ‘‘যশোরের যশ- খেজুরের রস’’- এটি কয়েকবছর আগেও বাস্তব ছিল কিন্তু এখন সেটি প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। কমে যাচ্ছে খেজুর গাছ। কমেছে রসের উৎপাদনও। যশোরের ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস ও গুড় শিল্পের টেকসই সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে চলতি বর্ষা মৌসুমে জেলায় ১ কোটি খেজুর বীজ বপনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে প্রশাসন। সে আলোকে চৌগাছায় ১০ লাখ খেজুর চারা ও বীজ রোপন কর্মসূচি গ্রহন করা হয়। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) উপজেলার সাঞ্চডাঙ্গা গ্রামের বেলন বিলের খেজুর গাছের চারা রোপন কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়েছে।
কর্মসূচির উদ্বোধন করেন যশোরের এডিসি (শিক্ষা) খালেদা খাতুন রেখা। চারা রোপন কর্মসূচির উদ্বোধনের পূর্বে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সামহার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন এডিসি খালেদা খাতুন রেখা।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন উপজেলা কমিশনার (ভূমি) গুঞ্জন বিশ্বাস, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসাব্বির হুসাইন, চৌগাছা থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী, ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হবিবুর রহমান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল কদর প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এডিসি সেলিনা খাতুন বলেন, সম্প্রতি যশোরের খেজুরগুড়ের জিআই সনদ লাভের পরিপ্রেক্ষিতে খেজুর গুড়ের যথার্থ গুণগত মান নিশ্চিতকরণ এবং খেজুর গাছের চারা আরো সহজ লভ্য করার লক্ষ্যে দায়বদ্ধতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সেকারণেই যশোরের প্রতিটি উপজেলায় এই কর্মসূচির অধীনে খেজুর বীজ বপন করা হবে। ১ কোটি খেজুর বীজের পাশাপাশি জেলায় প্রায় ১৫ হাজার খেজুর গাছের চারা রোপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
যশোরের ৮টি উপজেলার মধ্যে চৌগাছায় ১০ লাখ করে বীজ রোপন করা হবে। তিনি বলেন, হারানো ঐতিহ্য ফেরাতে চৌগাছায় স্বরুপদাহ ইউনিয়নের সাঞ্জডাঙ্গা গ্রামের বেলন বিলের সরকারি জমিসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পর্যায়ক্রমে প্রায় এই বীজ ও চারা রোপন করা হবে।
তিনি বলেন এই চারা রোপন করা হচ্ছে কিন্তু এই চারা দেখ ভালের দায়িত্ব উপজেলার সকল মানুষের। এটা জাতীয় সম্পদ কিন্তু ভোগ করবে এই উপজেলার মানুষ। তিনি বলেন, যেহেতু এই ইপজেলার মানুষ এই গাছের সুবিধা ভোগ করবেন; সেহেতু এই উপজেলার মানুষকেই এই গাছ যত্ন নিয়ে বড় করে তুলতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইউপি সদস্য ও সরকারি বেসরকারি দায়িশিল পর্যায়ের ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিন সাঞ্চডাঙ্গা বেলন বিলে ৩ হাজার চারা ও ৫ লাখ বীজ রোপন করা হয়েছে। চারা ও বীজ রোপনের কাজে সহযোগিতা করেছে উপজেলার স্কাউট সদস্যরা এবং ১১ টি ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ সদস্য।
উল্লেখ্য ২০২১ সালে তৎকালিন চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলাতানা যশোরের খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য রক্ষায় চৌগাছায় খেজুর চারা ও বীজ বপনের কর্মসূচি গ্রহন করেন। এর পরে ঐতিহ্য রক্ষার প্রচারণায় উপজেলায় খেজুর মেলা, গাছি সমাবেশ, উপজেলার গাছিদের নিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।