Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

❒যশোর পৌরসভার কোনো সম্পৃক্ততা নেই : মেয়র

ফ্রিতে ময়লা ফেলার চুক্তি বাতিল করে কোটি টাকার বাণিজ্যের পথ খোলাসা

এখন সময়: শুক্রবার, ৯ মে , ২০২৫, ০৩:৪৯:০২ পিএম

সালমান হাসান রাজিব : বিভিন্ন সেবার বিপরীতে খাতওয়ারি ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করে যশোর পৌরসভা। খাত অনুযায়ী এই হোল্ডিং করের মধ্যে সড়কবাতি, পয়োনিষ্কাসন ও ময়লা-আবর্জনা অপসারণ উল্লেখযোগ্য। বছরে তিনবার পৌর নাগরিকদের এই কর গুণতে হয়। কিন্তু তারপরও বাসাবাড়ির ময়লা ফেলতে নাগরিকদের ব্যয় করতে হচ্ছে মাসে বাড়তি আরো দেড়’শ টাকা। এনজিও ও নিজেদের নিয়োগকৃত লোকদের মাধ্যমে ময়লা সংগ্রহের নামে এই টাকা আদায় করছেন পৌরসভার কাউন্সিলররা। 

জানা গেছে, পৌরসভার ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্টটির ইজারাগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান দ্য ইস্কেইট লিমিটেডে’র ফ্রিতে বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহের কথা ছিল। কিন্তু চাপ প্রয়োগ করে ইজারা চুক্তির এই শর্ত বাতিল করিয়েছেন কাউন্সিলররা। ফলে বিনা টাকায় ময়লা ফেলার সুযোগটি হারিয়েছেন নাগরিকরা। এতে ক্ষোভে ফুঁসছে তারা।

যশোর পৌরসভা সূত্র জানায়, শহরে মোট হোল্ডিং সংখ্যা ২৪ হাজার ৩৯টি। এর মধ্যে সরকারি হোল্ডিং ২৮৬টি ও ব্যক্তিগত ২৩ হাজার ৭৫৩টি। 

জানা যায়, ময়লা সংগ্রহের নামে শহরের অনেক এলাকায় এসব হোল্ডিং থেকে মাসিক ১৫০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। প্রত্যেক বাসাবাড়ি এই কার্যক্রমের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। অনেক হোল্ডিংয়ে একাধিক বাসাবাড়ি থাকে। বিশেষ করে ‘ডাবল ইউনিটের’ বহুতল ভবনের একেক তলায় দুটি করে ফ্লাট থাকে। এক্ষেত্রে তিনতলা একটি ভবনের ফ্লাট সংখ্যা হয় ৬টি। আর এই কার্যক্রম যদি পুরো পৌরএলাকায় সম্প্রসারণ করা যায়; আর প্রত্যেক ইউনিট থেকে দেড়’শ টাকা করে নেয়া হয়, তাহলে এই আদায়ের পরিমাণ অর্ধকোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। 

তবে, ময়লা ফেলতে নাগরিকদের এভাবে পকেট কাটা গেলেও বিড়ম্বনার ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখছেন না। এনজিও’র কর্মীদের মাধ্যমে নাগরিকদের অনেকে ডাস্টবিনে ময়লা ফেলাতে না চাইলেও বাধ্য করা হচ্ছে। এনজিও’র কর্মীদের কাছে ময়লা ফেলতে না দিলেও মাস গেলেই দেড়’শ টাকা ঠিকই আদায় করা হচ্ছে। 

নাম না প্রকাশ করার শর্তে যশোর পৌরসভায় কর্মরতদের বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন, ঝুমঝুমপুরে যশোর পৌরসভার ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান ‘দ্য ইস্কেইট লিমিটেডে’র কাছে ২০ বছরের জন্য ইজারা দেয়া হয়েছে। ইজারা চুক্তির শর্ত ছিল ওই প্রতিষ্ঠানটি পৌরসভার হোল্ডিংগুলো থেকে বিনা টাকায় ময়লা সংগ্রহ করবে। কিন্তু কাউন্সিলররা তাদের নিয়োগকৃত এনজিও’র মাধ্যমে ময়লা সংগ্রহের কাজটি ছাড়তে নারাজ। কারণ, এসব এনজিও’র কাছ থেকে তারা মোটা অংকের এককালীন টাকা পেয়েছেন। তাছাড়াও বাসাবাড়ি থেকে প্রতিমাসে ময়লা সংগ্রহ বাবদ আদায় করা অর্থের একটি অংশও তারা পেয়ে থাকেন। যার জন্য কাউন্সিলরদের কেউ কেউ এনজিও’র মাধ্যমে ময়লা সংগ্রহের কাজটি হস্তান্তর করছেন না।

সূত্র জানায়, পৌরসভার একটি সভায় কাউন্সিলরদের একটি অংশ ফ্রিতে দ্য ইস্কেইট লিমিটেডের মাধ্যমে বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহের বিরোধিতা করেন। তাদের বিরোধিতার মুখে পৌর কর্তৃপক্ষ ইজারা চুক্তির শর্তে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়। দ্য ইস্কেইট লিমিটেডের মাধ্যমে ময়লা সংগ্রহের প্রক্রিয়াটি কাউন্সিলরদের চাপে বাতিল করা হয়। 

পৌর এলাকার বাসিন্দাদের বাসাবাড়ির ময়লা ফেলার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে ডাস্টবিন রাখা আছে। প্রতিদিন ভোরে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ডাস্টবিন থেকে ময়লা তুলে নিয়ে যায়। নাগরিকদের দেয়া হোল্ডিং কর থেকে এ বাবদ টাকা নেয়া হয়। অথচ বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করে এনে ডাস্টবিনে ফেলার নামে মাসে ১৫০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।  

জানা গেছে, পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের একটি অংশে ‘সম্মিলনী সেবা সংস্থা’ প্রত্যেক বাড়ি থেকে মাসিক ১৫০ টাকায় ময়লা সংগ্রহ করছে। তাদের মাধ্যমে ময়লা ফেলতে না চাইলেও নাগরিকদের মাস শেষে দেড়শ’ টাকার একটি রশিদ ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন এনজিও’র মাধ্যমে এভাবে টাকা আদায় করা হচ্ছে।

নাগরিকদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন আন্দোলনের সাথে যুক্ত বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ যশোর জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, পৌরসভার ট্যাক্সে পয়োনিষ্কাসন, সড়কবাতি ও ময়লা-আবর্জনা অপসারণসহ বিভিন্ন খাতের উল্লেখ আছে। খাতওয়ারি বিভিন্ন কর প্রতিষ্ঠানটি আদায় করে থাকে। কিন্তু কাউন্সিলররা তাদের নিয়োগকৃত লোক ও এনজিও’র মাধ্যমে ময়লা সংগ্রহের নামে যেভাবে টাকা নিচ্ছে এটি একদমই ঠিক না। ট্যাক্স দেয়ার পরও নাগরিকরা কেন ময়লা ফেলার জন্য আবারো বাড়তি টাকা গুণবেন। এটি পৌরসভার নীতিমালার সাধে সাংঘর্ষিক। এটি বন্ধ করতে হবে। নাগরিকরা যেহেতু অসংগঠিত; দাবি আদায়ে তাদের কোনো সংগঠন নেই, যার কারণে এমটি হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।  

এ ব্যাপারে যশোর পৌরসভার মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা হায়দার গনী খান পলাশ জানান, কাউন্সিলরদের সম্পৃক্ততায় বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহের নামে টাকা আদায় চলছে। এর সাথে পৌরসভার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। 

যশোর পৌরসভার ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্টটির ইজরাগ্রহিতা প্রতিষ্ঠান দ্য ইস্কেইট লিমিটেডের যশোর ব্যবস্থাপক সোহেল রেজা জানান, বাসাবাড়ি থেকে তারা ময়লা সংগ্রহ করছে না। 

 

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)