বিল্লাল হোসেন : যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ওষুধ ও স্যালাইনসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রীর সংকট চলছে। ইতোমধ্যে নরমাল স্যালাইনের মজুদ ফুরিয়ে গেছে। ফলে জরুরি প্রয়োজনে ভর্তি রোগীদের জন্য বাইরে থেকে ওষুধ ও স্যালাইন কিনতে হচ্ছে স্বজনদের। ‘ইডিসিএল’ থেকে চাহিদার তুলনায় কম ওষুধ সরবরাহের কারণে এমন সংকট দেখা দিয়েছে।
কর্মকর্তারা বলেছেন, ইডিসিএলের ওষুধের সংকট রোববার নাগাদ কেটে যাবে। আর টেন্ডারের (দরপত্র) মাধ্যমে (এমএসআর) দামি ইনজেকশন, ওষুধ ও প্লাস্টার সামগ্রীর সংকট কাটিতে উঠতে আরও ১ মাস লাগতে পারে।
যশোরসহ নড়াইল, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ ও মাগুরার বহু মানুষ এই হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসেন। সরকারিভাবে এই হাসপাতালে ৮৪ প্রকারের ওষুধ সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে ইডিসিএল থেকে আসে ৪৪ প্রকার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্থানীয় অর্থে টেন্ডারের মাধ্যমে অবশিষ্ট ৪০ প্রকার ওষুধ কেনা হয়। কিন্তু বর্তমানে অতি প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী নেই। যেগুলোর সরবরাহ আছে সেগুলো দিয়ে জোড়াতালির মাধ্যমে চিকিৎসা চালানো হচ্ছে।
হাসপাতালের সার্জারি, মেডিসিন, হৃদরোগ, গাইনি, অর্থোপেডিকস, শিশু, পেইং ও লেবার ওয়ার্ডের একাধিক রোগী স্বজনরা জানিয়েছেন, হাসপাতাল থেকে যৎসামান্য ওষুধ দেয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ ওষুধ ও আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়।
জানা গেছে, সম্প্রতি ৪০ প্রকারের ওষুধ ও ইনজেকশনের চাহিদাপত্র পাঠানো হয় ইডিসিএলে। কিন্তু সেখান থেকে সব প্রকারের ওষুধ সররবাহ করা হয়নি। প্রয়োজনীয় অনেক ওষুধ না পেয়ে বিপাকে পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জরুরি বিভাগ ও প্লাস্টার কক্ষের ইনচার্জ মোফাজ্জেল হোসেন জানান, প্লাস্টারের ‘জিপসোনা’ ও ‘সপ্টরোল’ শেষ হয়ে গেছে ১ মাস আগে। যে কারণে রোগীর স্বজনদের বাইরে থেকে এগুলো কিনে আনতে বলা হচ্ছে। সরবরাহ না থাকায় তারা বিনামূল্যের প্লাস্টার সামগ্রী দিতে পারছেন না।
জানা গেছে. ইনজেকশন হাইড্রোকরটিসন ও সেফুরএক্সিম ৭৫০, ডায়াবেটিসের ট্যাবলেট কমেট, ডমপেরিডন, নরমাল স্যালাইনসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছুর মজুদ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। ফলে রোগীদের বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।
হাসপাতালের স্টোর কিপার সাইফুল ইসলাম জানান, চাহিদার অর্ধেক ওষুধ পাওয়া যায় না। চাহিদা পাঠানোর পর ইডিসিএল থেকে কিছু ওষুধ পাওয়া গেছে। সেগুলো শনিবার সার্ভে করার পর রোববার বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ফার্মেসিতে সরবরাহ করা হবে।
তিনি আরও জানান, গত অর্থ বছরের কেনা প্লাস্টার সামগ্রী আগস্ট মাসে শেষ হয়ে গেছে। নতুন অর্থ বছরের টেন্ডার হয়েছে। প্রশাসনিক অনুমোদনের পর ইনজেকশন,ওষুধ ও প্লাস্টার সামগ্রী কেনা হবে।
তিনি বলেন, ১ বছরের পরিবর্তে দেড় বছরের জন্য ‘জিপসোনা’ ও ‘সপ্টরোল’ কেনা সম্ভব। কিন্তু সেগুলো সংরক্ষণের জন্য জায়গার অভাব।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, চাহিদার তুলনায় অর্ধেক ওষুধ সামগ্রী সরবরাহ করে ইডিসিএল। যে কারণে সংকটের মুখে পড়তে হয়। ১ হাজার নরমাল স্যালাইনের চাহিদাপত্র পাঠানো হলেও তা দেয়া হয়নি। কবে বরাদ্দ পাওয়া যাবে তা ঠিক করে বলা সম্ভব না।
তিনি আরও জানান, চলতি অর্থ বছরের দরপত্র আহবান করে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। মূল্যায়ন কমিটির যাচাই-বাচাইয়ের পর প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য ফাইল প্রস্তুত। আগামী রোববার ফাইল পাঠানো হবে সংশ্লিষ্ট দফতরে। অনুমোদন হয়ে আসলে দরপত্রের মাধ্যমে ওষুধ কেনা হবে। আগামী ১ মাসের মধ্যে সংকট কেটে যাবে।