মোজাফ্ফার আহমেদ, অভয়নগর (যশোর) : যশোরের অভয়নগর উপজেলার ফসলের মাঠজুড়ে এখন আমন ধানের সমারোহ। যতদূর দৃষ্টি যায় আদিগন্ত সবুজের গালিচা বিছিয়ে আছে যেন। এবছর আমনের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা। এবার উপজেলার ৭ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, আমন চাষের এবারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ৪৯০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬০ হেক্টর বেশি জমিতে আমনের চাষাবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে ধান ব্রি-৭৫, ব্রি-৮৭, ব্রি-৩২, ব্রি-৪৯সহ বেশ কয়েকটি আগাম জাতের আমন ধানের চাষ হয়েছে। এ ছাড়াও ব্রি-১১, গুটি স্বর্ণা, ব্রি-৩০, ব্রি-৩৯ ধানের চাষ করেছেন কৃষকেরা।
চাষিরা জানান, ধানের সবচেয়ে ক্ষতিকর রোগবালাই হচ্ছে মাজরা পোকা ও বাদামি ফড়িংয়ের আক্রমণ এবং গোড়াপচা রোগ। ধানে পোকা মাকড়ের আক্রমণও দেখা গেছে বেশ। মাজরা পোকা, পামরি পোকা, বাদামি ফড়িং ও গোড়াপচা রোগসহ নানাবিধ রোগ বালাই আক্রান্ত হচ্ছে ধান গাছ। তবে এ রোগগুলো এবার কম হওয়ায় বেশ ভালো ফসল আশা করছেন। প্রথমদিকে বৃষ্টিপাত না হলেও মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয়েছিল। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় অনেককে সেচ দিতে হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার ৬০০ কৃষককে ৫ কেজি করে ব্রি-৭৫ ও ব্রি-৮৭ ধান বীজ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিজনকে ১০ কেজি এমওপি ও ১০ কেজি ডিএপি সার দেয়া হয়। পাশাপাশি ২০০ চাষিকে হাইব্রিড ধানের বীজ দেয়া হয়েছে।
উপজেলার চলিশিয়া ইউনিয়নের একতারপুর গ্রামের শাহ আলম বলেন, পরামর্শ নেয়ার জন্য মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পাওয়া যায় না। কীটনাশকের দোকানদারদের পরামর্শ নিয়ে বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করে ফসলের রোগ বালাই দমন রাখার চেষ্টা করছি। এতে আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ফসলে খরচ একটু বেশিই হচ্ছে।
উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক বাবলুর রহমান বলেন, এবছর বৃষ্টি দেরিতে ও কম হওয়ায় বীজতলা তৈরি করতে এবং ধান রোপণে দেরি হয়েছে। ঠিকমত বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ দিতে হয়েছে। পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়েছে। সারের দাম আগের তুলনায় বেশি। ফলে খরচ একটু বেশি হয়েছে। তারপরেও ফসল ভাল হয়েছে। তাছাড়া সরকার ধানের দাম নির্ধারণ করে দেয়ায় ভাল দাম পাব বলে আশা করছি। খরচ বাদেও লাভ হবে।
এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন জানান, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ধান চাষ হয়েছে। বিশেষ করে ভবদহ অঞ্চলের জমিগুলাতে চাষ বেড়েছে। বৃষ্টি দেরিতে হওয়ায় বীজতলা ও ধান রোপণ করতে দেরি হয়েছে। তারপরও ফলন বেশ ভাল দেখা যাচ্ছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে বাম্পার ফলন হবে বলে আশা রাখছি।