সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ

স্বামী-শাশুড়ির বিরুদ্ধে যৌতুক মামলা করে অপহরণ মামলার আসামি ছামিয়া

এখন সময়: শুক্রবার, ২৯ মার্চ , ২০২৪, ০১:০৪:৫০ পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বামী-শাশুড়ির বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা করে চরম বিপাকে পড়েছে এক সন্তানের জননী ছামিয়া খাতুন (১৯)। মামলাটি ভিন্নখাতে নিতে শাশুড়ি ছালেহা বেগম উল্টো তাকে অপহরণ ও জোর করে বিয়ের মামলায় ফাঁসিয়েছে। এমনিকি মামলায় তার পিতা-মাতা মামাসহ তার পক্ষের লোকজনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটি তদন্ত করছেন। যে কোন উপায়ে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন পক্ষে নেয়া হবে বলে প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে শাশুড়ি ছালেহা বেগম। এমন পরিস্থিতিতে ১৩ মাসের শিশু সন্তানকে নিয়ে পিতার বাড়িতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি।  মঙ্গলবার যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন অভিযোগ করেন।

কাশিমপুর ইউনিয়নের দৌলতদিহি গ্রামের হাফিজুর রহমানের মেয়ে ছামিয়া খাতুন লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি যশোরের চৌগাছা উপজেলার আফরা গ্রামের নুর আলমের ছেলে মাহবুব হাসান ওরফে রাসেলের সাথে আমার ১ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয় । বিয়ের পর বিভিন্ন সময় যৌতুক দাবি করে স্বামী ও শাশুড়ি। আমার সুখের কথা চিন্তা করে কৃষক পিতা ১টি খাট, ১ টি আলমারী, ১ টি সোফা সেট,  ১ ভরি ওজনের ১ টি সোনার চেন, ৮ আনা ওজনের ১ টি সোনার  আংটি, সোনার ২ টি রুলি, কানের দুল দেয়া হয়। যার আনুমানিক মূল্য ২ লাখ ত্রিশ হাজার টাকা। এছাড়া রাসেলের ব্যবসার জন্য নগদ ১ লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে প্রদান করে আমার পিতা। বিয়ের কয়েক মাস যেতেই স্বামী রাসেল আরও ২ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে আমার  ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। আমার অসহায় পিতা মা তার দাবিকৃত যৌতুকের টাকা না দিতে পারায় ২০২১ সালের ১ আগস্ট আমাকে মারপিট করে আমার বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বারংবার আমার পরিবারের সদস্যরা রাসেল ও তার পরিজনদের সাথে যোগাযোগ করলেও যৌতুকের টাকা ব্যতিত তারা আমাকে গ্রহণ করেননি। আমি বাধ্য হয়ে গত ২০২১ সালের ২৫ মে যশোরের

জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বামী মাহবুব হাসান রাসেল ও শাশুড়ি ছালেহা বেগমকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করি। এরপর ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর রাসেল আমাকে তালাক প্রদান করেন। তালাক প্রদানের সময় আমি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম। 

লিখিত বক্তব্যে সামিয়া আরো বলেন, তালাক দেয়ার পরও রাসেল গোপনে আমার পিতার বাড়িতে যাতায়াত করতেন। কিন্তু ভালোবাসার টানে আমি কিছুই বলতে পারিনি। গত ২০২২ সালের ৬ মার্চ   সকালে আমি চুড়ামনকাটি গ্রামে নানা বাড়ি বেড়াতে আসি। বিষয়টি জানতে পেরে রাসেলও সেখানে আসেন। কিন্তু রাসেলের মা ছালেহা বেগম ৯৯৯ এ কল করে জানান রাসেলকে অপহরণ করে আনা হয়েছে। সাজিয়ালী পুলিশ ক্যাম্পের এ এস আই তৌফিক এলাহী ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল আমার নানা বাড়িতে আসেন। অপহরণ করা হয়েছে কিনা পুলিশ তার কাছে জানতে চাইলে এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে রাসেল না বলে জানান। নিজের ইচ্ছায় আমাকে বিয়ে করছেন বলেও পুলিশকে জানায়।

পুলিশ সেখান থেকে চলে যাওয়ার পর ওই দিনই রাসেল  ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে পুনরায় রেজিস্ট্রি কাবিনমূল্যে দ্বিতীয় বারের মতো আমাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর আমাকে সেখানে রেখে রাসেল নিজের বাড়ি চলে যান। এরই মধ্যে গত ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল আমি কন্যা সন্তান প্রসব করি।

সন্তান জন্ম হওয়ার পর আমার স্বামী রাসেল আমাকেসহ আমার সন্তানকে দেখতে আসেননি। কোনো ভরণপোষণও দেননি। এমতাবস্থায় গত ২০২২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর পিতা পক্ষের লোকজনকে নিয়ে  আমি রাসেলের বাড়িতে গিয়ে তার বউ হিসেবে আরেক নারীকে দেখতে পাই। এ সময় আমাদেরকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনার পর রাসেল ও তার মা ছালেহা বেগমের বিরুদ্ধে  পারিবারির আদালতে আরও তিনটি মামলা দায়ের করি। এসব ঘটনায় রাসেল ও তার মা ছালেহা বেগম ক্ষুব্ধ হয়ে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে। তাদের ষড়যন্ত্র সফল করতে রাসেলকে মিথ্যা অপহরণ ও জোরপূর্বক বিয়ে দেয়ার নাটক সাজিয়ে আমিসহ আমার পিতা-মাতা ও পূর্বের মামলার সাক্ষী এবং ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ৩ মে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি কোতোয়ালি আদালত যশোরে একটি মামলা দায়ের করেন শাশুড়ি ছালেহা বেগম। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

 

লিখিত বক্তব্যে  ছামিয়া আরও বলেন, রাসেল নিজের ইচ্ছায় দ্বিতীয়বারের মতো আমাকে বিয়ে করেছেন। তাকে কোনো প্রকার জোর করা হয়নি। আমার দায়েরকৃত মামলা মীমাংসা করার কথা বলেও রাসেলকে চুড়ামনকাটি ডেকে আনা হয়নি। পিবিআই সঠিকভাবে তদন্ত করলে প্রকৃত সত্যতা জানতে পারবে। মূলত আমার দায়েরকৃত মামলা ভিন্নখাতে নিতে রাসেলের মা ছালেহা বেগম পরিকল্পিতভাবে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ছামিয়ার মা বিজলী বেগম, মামী পারভিনা বেগম।