নানা অনিয়মে সুনাম হারাচ্ছে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল

এখন সময়: শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪, ১১:০১:১২ এম

বিল্লাল হোসেন : যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাসেবায় অনিয়ম বাড়ছে। এখানে চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে রোগীদের অভিযোগের শেষ নেই। যে কারণে সরকারি এই হাসপাতাল চিকিৎসাসেবায় সুনাম হারাচ্ছে। একাধিকবার এ হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত হাসপাতাল গড়ার নির্দেশ দিলেও মানা হয়নি।

বিগত দিনে চিকিৎসায় অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হলেও চিকিৎসাসেবার মান উন্নত হয়নি। চিকিৎসক সেবিকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিজেদের ইচ্ছামাফিক হাসপাতালে আসছেন যাচ্ছেন। প্রয়োজনের সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা মেলেনা। সেবার পরিবর্তে বাণিজ্যিক মানসিকতা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে সরকারি এই হাসপাতালের প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন মানুষ। অথচ যশোরসহ আশপাশের কয়েকটি জেলা ও উপজেলার রোগীদের আশা ভরসার স্থল হলো এ হাসপাতালটি। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে  প্রতিদিন দ্বিগুণের বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা নেন গড়ে প্রতিদিন ৯ শ থেকে ১ হাজার রোগী।  এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা মানুষের  হাসপাতাল নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। বিনা চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু, প্রয়োজনের সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা না মেলা, নিয়মবহির্ভুতভাবে ইন্টার্ন চিকিৎসক রোগির অস্ত্রোপচার ও রেফার করছেন। 

কমিশন বাণিজ্য, চিকিৎসক সেবিকার দুর্বব্যবহার ও দায়িত্বে অবহেলা, চাকরিভাড়া দেয়া, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, দালালের উৎপাতসহ নানাভাবে নাজেহাল হচ্ছেন রোগি ও স্বজনেরা। এসব অনিয়মের ঘটনায় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও কর্তৃপক্ষ নিরব থাকেন। দুএকজনকে শোকজ ও তদন্ত কমিটি গঠন করেই যেন দায়িত্ব শেষ করা হয়। আলোচিত কোনো ঘটনারও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়না। যে কারণে এখানে চিকিৎসাসেবায় দিনে দিনে অনিয়ম বাড়ছে। 

রোগী ও স্বজনদের ভাষ্যমতে, বেলা ১ টার পর  হাসপাতালে কোনো বিশেষেজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা মেলেনা। ইন্টার্নরা যেন রোগিদের শেষ ভরসা। বিশেষজ্ঞদের অবহেলায়  রোগীর ভাগ্যে ফলোআপ চিকিৎসা জোটেনা ঠিকমতো। ইন্টার্ন চিকিৎসক ওয়ার্ড রাউন্ডে এসে রোগীর ব্যবস্থাপত্রে  লিখে দেন “রিপিট অল”। অর্থাৎ আগে যে চিকিৎসা ছিলো তাই চলবে।

এদিকে বিগত দিনে চিকিৎসকের অবহেলার কারণে তার স্বজনরা অপ্রীতিকর  ঘটনা ঘটালে চিকিৎসকরা রোগীদের চিকিৎসার প্রতি মোটেও আন্তরিক নয়। যে কারনে সরকারি এ হাসপাতালের প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলছেন। অথচ যশোর ছাড়া ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইলসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ উন্নত চিকিৎসাসেবা পাওয়ার আশায় এখানে আসেন। কিন্তু তারা ন্যায্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এদিকে হাসপাতালে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি সংকট রয়েছে। যা সচল করতে কোন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দীর্ঘদিন ধরে শুন্য থাকায় সংকট চলছে। 

এখানকার বাথরুমগুলোর নোংরা পরিবেশ, কয়েকটি ওয়ার্ডে দুর্গন্ধে রোগীদের নাভিশ্বাস হলেও সহসা পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটে না। হাসপাতালের পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডের রোগীরা বাথরুমের দুর্গন্ধে রীতিমতো দিশেহারা অবস্থা। অনেক কস্ট করে সেখানে থেকে তারা চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছেন। রোগীর স্বজনেরা জানান, সরকারি হাসপাতালে এতো নোংরা পরিবেশ থাকাটা মোটেও ঠিক না। হাসপাতালের পরিবেশ রক্ষায় কর্মকর্তাদের নজর দেয়া প্রয়োজন। নতুবা এমন পরিবেশে রোগীর সাথে আসা স্বজনেরাও অসুস্থ হয়ে যাবে। 

এদিকে, রোগীর স্বজন আলী হামজা, ইসমাইল হোসেন, গোলাম মোর্তজাসহ অনেকেই জানান, বর্তমানে এ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবায় নানা অনিয়ম বেড়েছে। টাকা ছাড়া কোন কাজ করতে চাননা কেউ। সরকারি অনেক ওষুধও রোগীদের ভাগ্যে জুটছে না। প্রয়োজনের সময় চিকিৎসককে ডেকেও পাওয়া যায়না। ফলে চিকিৎসা নিতে এসে অবহেলার শিকার হচ্ছেন রোগীরা। 

 হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা.আব্দুস সামাদ জানান, সরকারি হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সকল ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। সকল কর্মকাণ্ড নিয়মের মধ্যে পরিচালনা করার চেষ্টা অব্যাহত আছে।