যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে আগে গালমন্দ পরে সেবা!

এখন সময়: শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল , ২০২৪, ০৪:৪৮:২৬ পিএম

 

বিল্লাল হোসেন: বুধবার বেলা সাড়ে ১১ টা। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের পুরুষ সার্জারী ওয়ার্ডের মেঝেতে এক রোগী শারীরিক যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন। স্বজনরা তার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে ছুটে যান দায়িত্বরত সেবিকার কাছে। রোগীর সমস্যা জানার পর সেবিকা বলেন, যান আসছি। ১৫ মিনিটেও রোগীর কাছে যাওয়ার সময় হয়নি তার। দুইজন স্বজন ফের যান সেবিকার কাছে। এবার তারা গালমন্দের শিকার হন। সেবিকা তাদের ওপর চোখ রাঙিয়ে উচ্চস্বরে বলেন ‘আমি কি বসে আছি, দেখছেন না কাজ করছি। আপনাদের ইচ্ছামতো চলতে হবে নাকি। যান সময় হলে আসবো।

মেডিসিন ওয়ার্ডে গিয়ে চোখে পড়ে এক বৃদ্ধ রোগী শ্বাসকষ্টে ছটফট করছেন। স্বজন হিসেবে রোগীর পাশে ছিলো দুই নারী। এরমধ্যে একজন সেখানে দায়িত্বরত ইন্টার্ন চিকিৎসকের কক্ষে গেলেন।  কথা বলা মাত্র ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বলে উঠলেন ‘আপনার রোগীর কাছে গিয়ে কি বসে থাকবো। চিকিৎসা চলছে অপেক্ষা করেন ঠিক হয়ে যাবে। কথা প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী জানান, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে এসেছি বলে আমাদের মানুষ মনে করছেন না। রোগীর প্রয়োজনে এক থেকে দুই বার ডাকলেই চিকিৎসক-সেবিকা  রেগে যাচ্ছেন।

এদিকে, শিশু ওয়ার্ডে এক পিতা তার দেড় বছরের মেয়েকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। শ্বাস কষ্ট ও জ্বরে আক্রান্ত শিশুটি কান্নাকাটি করছে। চিকিৎসক নির্দেশনা দিয়েছেন ওজন পরিমাপ করার জন্য। তারপর ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ লিখবেন। ওই পিতা এক সেবিকাকে বিষয়টি জানান। তিনি আরেক সেবিকাকে বলেন, দেখোতো কি বলছে। উত্তরে ওই সেবিকা  তাকে বললেন- দাঁড়াতে বলেন পরে দেখছি। মেয়েকে কোলে নিয়ে ১৫ মিনিট সেখানে দাঁড়িয়ে থাকলেন পিতা। তবুও সেবিকা আসলেন না। আবার ডাকতেই রাগন্বিত ভাব দেখালেন সেবিকা। হতাশ পিতার সাথে কথা হলে জানান, মেয়েটা অসুস্থ হওয়ায় এমনিতেই মন খারাপ। চিকিৎসার জন্য এসে আরও মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে প্রতিদিন সরকারি এই হাসপাতালে অসংখ্য রোগীর স্বজনের উপর রাগ দেখান চিকিৎসক সেবিকা ও কর্মচারীরা। আর ভুক্তভোগীরা অসহায়ের মতো তা সহ্য করেন। একাধিক রোগীর স্বজনদের সাথে কথা বললে এসব কথা জানিয়েছেন তারা। সরেজমিনেও তার সত্যতা মিলেছে। অনেক চিকিৎসক ও সেবিকা বিরক্তের সাথে রোগীর চিকিৎসাসেবা দেন। সব সময় যেনো তাদের মাথা গরম হয়ে থাকে।

রোগীর স্বজন আতিয়ার রহমান, দাউদ হোসেন, কবিরুল ইসলাম, আশাদুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন জানান, হাসপাতালের কিছু চিকিৎসক সেবিকা ও কর্মচারী নিজেদের খেয়াল খুশি মতো দায়িত্ব পালন করেন। একান্ত প্রয়োজনে রোগীর কাছে আসতে বললেও তারা না শোনার ভান করেন। দুই তিন বার ডাকলেই তারা দুর্ব্যবহার করেন। দুর্ব্যবহার যেন তাদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে।

জয়নাল আবেদীন, কুলসুম বেগম, জলিল উদ্দিন ও মনোয়ারা খাতুন জানান, ওয়ার্ডে দায়িত্বরতরা স্বজনদের সাথে রেগে কথা বলেন। মেঝেতে একটু পানি পড়লে আর রেহাই নেই। তবে বখশিষ দিলে ওয়ার্ডবয় ও আয়ারা খুশি থাকেন। আন্তঃবিভাগের মতো বহিঃবিভাগেও রোগী ও স্বজনদের সাথে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা  নানা অজুহাতে চোখ রাঙান।

বাগডাঙ্গা গ্রামের বাবর আলী জানান, কী আর বলবো সেবা নিতে এসে মান ইজ্জত সব হারানোর মতো অবস্থা। তার ছেলের বয়সের ছোট এক যুবকের গালমন্দে তিনি অবাক হয়েছেন। সরকারি হাসপাতালে দায়িত্বরতরা মানুষের মানুষ মনে করে না। তাদের খারাপ আচরণের কারণে হাসপাতালের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। আচরণ পরিবর্তনে কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। 

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর এমও) আব্দুস সামাদ জানান, রোগীর স্বজনদের সাথে দুর্ব্যবহারের ঘটনা ঘটে বিষয়টি তার জানা নেই। কোনো ভুক্তভোগী অভিযোগও করেননি। তিনি বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করবেন।