যশোরে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে স্ত্রী কারাগারে

এখন সময়: বুধবার, ২৪ এপ্রিল , ২০২৪, ০২:০০:০০ এম

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরে পুলিশ কর্মকর্তা স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা করে কারাগারে গেলেন স্ত্রী রাবেয়া আক্তার। তিনি সোমবার আদালতে আত্মসমর্পণ করলে শুনানি শেষে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক নিলুফার শিরীন এ আদেশ দিয়েছেন। রাবেয়া আক্তার ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর পালপাড়ার একরাম আলীর মেয়ে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি এক রায়ে আসামি পুলিশ কর্মকর্তা আজম মাহমুদকে ৩ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ১০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছিল আদালত। আজম মাহমুদ যশোরের মণিরামপুরের কাশিমপুর গ্রামের বজলুর রশিদের ছেলে। তিনি ওই সময় কুষ্টিয়ার খোকসা থানায় এসআই পদে কর্মরত ছিলেন।

এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন পুলিশ কর্মকর্তা আজম মাহমুদ। আপিলে জাল জখমি সনদ দেয়া হয়েছে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়। ২০২২ সালের ১৪ জুন বিচারপতি এএনএম বশির উল্লাহ উভয়পক্ষের শুনানি শেষে নি¤œ আদালতকে বিষয়টি যাচাইয়ের নির্দেশ দেন। একই সাথে জখমি সনদ যদি জাল হয় তাহলে আসামির সাজার আদেশ বাতিল করে বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দেয়া হয়।

উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশ পেয়ে যশোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক পিবিআইকে ঘটনার তদন্তের আদেশ দেন। ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর পিবিআই তদন্ত করে জখমী সনদ জাল বলে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়। এ প্রতিবেদনের উপর শুনানি শেষে গত ২৩ জানুয়ারি আদালত পুলিশ কর্মকর্তা আজম মাহমুদকে খালাস দিয়ে তার স্ত্রী মামলার বাদীর বিরুদ্ধে আইননুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেন। 

২৯ জানুয়ারি আজম মাহমুদ মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ও জেল খাটানোর অভিযোগে স্ত্রী রাবেয়া আক্তারকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলা করেন। আদালতের বিচারক অভিযোগটি গ্রহণ করে আসামি রাবেয়া আক্তারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। রাবেয়া বিষয়টি জানতে পেরে গতকাল আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে বিচারক শুনানি শেষে নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।

রাবেয়া আক্তারের মামলার অভিযোগে জানা গেছে, বিয়ের পর থেকে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে আসছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা স্বামী আজম মাহমুদ। তিনি বিভিন্ন সময় ওই টাকার জন্য নির্যাতন করতেন। ২০১৯ সালের ২৭ জুন আজম মাহমুদ স্ত্রী রাবেয়া আক্তারকে বেধড়ক মারপিট ও শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করেন।  রাবেয়ার পরিবার সংবাদ পেয়ে তাকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তিনি দুই দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর হাসপাতাল থেকে জখমি সনদ সংগ্রহ করে ২০১৯ সালের ১১ জুলাই রাবেয়া তার পুলিশ কর্মকর্তা স্বামীর বিরুদ্ধে যশোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলা করেন। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে ঝিকরগাছা উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার আদেশ দিয়েছিলেন। অভিযোগের তদন্ত শেষে পুলিশ কর্মকর্তা আজম মাহমুদের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন।  এরপর তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে বিচারক সাক্ষী গ্রহণ করেন। সাক্ষীদের বক্তব্যে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাকে সাজা দেন।