ক্যামেরুন থামালো ব্রাজিলের অপরাজেয় যাত্রা

এখন সময়: শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল , ২০২৪, ০১:১৭:০৫ পিএম

ক্রীড়া ডেস্ক : আক্রমণের পসরা মেলে ধরল ব্রাজিল। প্রতিপক্ষের জমাট রক্ষণ ভেঙে সুযোগও তৈরি করল অনেক। কিন্তু ফিনিশিংয়ের ব্যর্থতায় নষ্ট হলো সব। ড্রয়ের দিকে এগিয়ে চলা ম্যাচে হঠাৎ নাটকীয়তা; যোগ করা সময়ে তিতের দলকে স্তব্ধ করে দিলেন ভিনসেন্ট আবুবাকার। আফ্রিকার প্রথম দল হিসেবে ব্রাজিলকে হারানোর ইতিহাস গড়ল ক্যামেরুন। তবে, অন্য ম্যাচের ফল পক্ষে না আসায় শেষটা মধুর হয়েও হলো না।
লুসাইল স্টেডিয়ামে শুক্রবার ‘জি’ গ্রুপের শেষ রাউন্ডে ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়েছে ক্যামেরুন।
গত বছরের কোপা আমেরিকার ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে হারের পর যে অপরাজেয় যাত্রার শুরু করেছিল ব্রাজিল, ১৭ ম্যাচ পর এবার থামল। থামিয়ে দল কোচ রিগোবার্ট সংয়ের দল।
অবশ্য এই হারের পরও গ্রুপ সেরা হয়েই শেষ ষোলোয় খেলবে ব্রাজিল। দুই ম্যাচে ৬ পয়েন্ট তাদের। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ‘এইচ’ গ্রুপের রানার্সআপ দক্ষিণ কোরিয়া।
অন্য ম্যাচে সার্বিয়াকে ৩-২ গোলে হারানো সুইজারল্যান্ডের পয়েন্টও ৬। গোলে ব্যবধানে পিছিয়ে রানার্সআপ হয়েছে তারা। কোয়ার্টার-ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তাদের প্রতিপক্ষ ‘এইচ’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল।
৪ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে থেকে বিদায় নিল ক্যামেরুন। সার্বিয়ার পয়েন্ট ১।
খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দিতে এবং বেঞ্চকে ঝালিয়ে নিতে আগের ম্যাচের শুরুর একাদশে ৯টি পরিবর্তন আনেন ব্রাজিল কোচ।
প্রথম দুই ম্যাচে শুরুর একাদশে খেলা আক্রমণভাগের সবাইকে বসিয়ে নামান গাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি, রদ্রিগো, আন্তোনি ও গাব্রিয়েল জেসুসকে। ২০০২ ফাইনালের পর এটাই ব্রাজিলের সবচেয়ে তরুণ দল, যাদের নেতৃত্বে ৩৯ বছর বয়সী দানি আলভেস।
ম্যাচ শুরু হতেই একসঙ্গে দুটি রেকর্ড যোগ হয় আলভেসের নামের পাশে; গড়েন সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড় ও অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপে ব্রাজিলের হয়ে খেলার কীর্তি। এই আসরেই দালমা সান্তোসের থেকে রেকর্ডটি নিজের করে নেন আরেক ডিফেন্ডার, ৩৮ বছর বয়সী চিয়াগো সিলভা। সপ্তাহের মধ্যে রেকর্ডটি নিজের করে নিলেন সাবেক বার্সেলোনা রাইট-ব্যাক।
একাদশে ঢালাও পরিবর্তন এলেও ব্রাজিলের আক্রমণাত্মক ফুটবলে কোনো প্রভাব পড়েনি। বল দখলে রেখে শুরু থেকে প্রবল চাপ তৈরি করে তারা। সুযোগ এসে যায় দ্বিতীয় মিনিটেই। তবে ফ্রেদ ও আন্তোনির, কেউই শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি।
চতুর্দশ মিনিটে গোলরক্ষকের দারুণ নৈপুণ্যে জাল অক্ষত থাকে ক্যামেরুনের। মার্তিনেল্লির জোরাল হেড কোনোমতে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান দেভিস এপাসি।
প্রতিপক্ষের একের পর এক আক্রমণের মুখেই ২০তম মিনিটে প্রতি-আক্রমণে ভীতি ছড়ায় ক্যামেরুন। এরিক মাক্সিম চুপো-মোটিংয়ে পাস পেয়ে নোহু টোলো বাঁ দিক থেকে ছয় গজ বক্সে সতীর্থের উদ্দেশ্যে ক্রস বাড়ান। তবে ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন গোলররক্ষক এদেরসন।
৪৫তম মিনিটে আরেকবার মার্তিনেল্লিকে হতাশ করেন গোলরক্ষক। এবার ডি-বক্সের মুখ থেকে নেওয়া আর্সেনাল ফরোয়ার্ডের শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান এপাসি।
দুই মিনিট পর ম্যাচে প্রথমবারের মতো গোলের উদ্দেশ্যে প্রথম চেষ্টা চালায় ক্যামেরুন। ডান দিক থেকে ব্রায়ান এমবিউমোর জোরাল হেড ঝাঁপিয়ে ফেরান এদেরসন। আসরে এই প্রথম ব্রাজিলের পোস্টে কোনো শট নিতে পারল প্রতিপক্ষ!
একই সময় শুরু অন্য ম্যাচেও বিরতির সময় ছিল সমতা, ২-২ গোলে। তাতে ক্যামেরুনের আশাও থাকে ভালোমতো বেঁচে।
তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই এগিয়ে যায় সুইজারল্যান্ড।
এদিকে বিরতির পর প্রথম ১০ মিনিটে কয়েকটি ভালো আক্রমণ করে ক্যামেরুন। তবে লক্ষ্যে কোনো শট রাখতে পারেনি তারা। মরিয়া হয়ে ওঠে ব্রাজিলও। ৫৬তম মিনিটে মার্তিনেল্লির আরও একটি শটে কোনোমতে এক হাত দিয়ে বল ক্রসবারের ওপর দিয়ে পাঠান এপাসি।
পরের মিনিটে এদের মিলিতাওয়ের সোজাসুজি শট ফেরাতে গিয়ে কিছুটা তালগোল পাকান ক্যামেরুন গোলরক্ষক, তবে শেষ পর্যন্ত কর্নারের বিনিময়ে ফেরান তিনি।
প্রতিপক্ষের একটি আক্রমণ রুখে ৭৮তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে ওঠে ক্যামেরুন। দূর থেকে শট নেন ওলিভিয়ে নিচাম, তবে রুখে দিতে তেমন বেগ পেতে হয়নি এদেরসনের। পরের দুই মিনিটে দুটি কর্নার আদায় করে নেয় ক্যামেরুন; কিন্তু কোনো কিছুতেই জালের দেখা মেলেনি।
৮৪তম মিনিটে রাফিনিয়া ডান দিকের বাইলাইন থেকে গোলমুখে বল বাড়ান, প্রতিপক্ষের কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে শট নেন ব্রুনো গিমারেস। বল ডিফেন্ডার ক্রিস্তোফা ওয়াওয়ের পায়ে লেগে চলে যায় বাইরে, দশম কর্নার পায় ব্রাজিল।
যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে জয়সূচক গোলের দেখা পায় ক্যামেরুন। দারুণ এক প্রতি-আক্রমণে ডান দিক থেকে বক্সে ক্রস বাড়ান জেরোম এনগুম আর ফাঁকায় বল পেয়ে হেডে ঠিকানা খুঁজে নেন আবুবাকার।
গোল করার আনন্দে জার্সি খুলে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন তিনি। ১০ জনের দলে পরিণত হয় ক্যামেরুন।
গোল শোধের জন্য ৯ মিনিট যোগ করা সময়ের তখনও অনেক বাকি। ভালো কয়েকটি সুযোগও পায় ব্রাজিল। কিন্তু এদিন তাদের খেলোয়াড়রা যেন সুযোগ নষ্টের মিছিলে নেমেছিল।
পয়েন্ট টেবিলে এই হার যদিও কোনো প্রভাব ফেলেনি, তবে নকআউট পর্বের আগ মুহূর্তে এমন ছন্দপতন যথেষ্টই ভাবনার কারণ।
আগামী সোমবার শেষ আটে ওঠার লড়াইয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার মুখোমুখি হবে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।