চৌগাছায় সোনা বহনকারী দুই অপহৃত বেনাপোলে উদ্ধার, আটক ২

এখন সময়: শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল , ২০২৪, ১১:২৩:২২ এম

নিজস্ব প্রতিবেদক : চৌগাছার সোনা পাচারকারী চক্রের দুই বহনকারীকে অপহরণের অভিযোগে দায়েরকরা মামলায় পাচারকারীচক্রের দুই সদস্যকে আটক করেছে যশোরের ডিবি পুলিশ। একই সাথে অপহৃত দুজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। 

আটক সোনা পাচারকারী চক্রের সদস্যরা হলেন, চৌগাছা উপজেলার ছোট কাবিলপুর গ্রামের মহসীন আলী মাস্টারের ছেলে আসম মোজাফফর হাসান ওরফে আবু সাঈদ (৪৯) এবং শার্শা উপজেলার শ্যামলাগছি গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে রবিউল ইসলাম ওরফে লিটন (৪৩)।

অপরদিকে উদ্ধার হওয়া ভগ্নিপতি-শ্যালক হলো, চৌগাছা উপজেলার শাহাজাদপুর গ্রামের আলমের ছেলে শাহীন (৩২) ও বাঘারপাড়া উপজেলার বেতালপাড়া গ্রামের মনিরুল ইসলামের ছেলে ইয়ামিন (১৯)।

আটকদের বুধবার যশোরের আদালতে সোপর্দ করা হলে আসামি আবু সাঈদ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সালমান আহমেদ শুভ তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, আটক আবু সাঈদের বড় কাবিলপুর বাজারে কীটনাশকের দোকান আছে। তিনি সোনা পাচারকারীচক্রের সদস্য। প্যাকেটাজাত কীটনাশকের কথা বলে ৫শ’ টাকা মজুরিতে শাহীন, তার ছোটভাই নবম শ্রেণির ছাত্র আবু হুরাইয়া ও শ্যালক ইয়ামিনকে দিয়ে চক্রের হয়ে প্যাকেটে মোড়ানো কেজি কেজি সোনা ভারতে পাচার করে আসছেন। একইভাবে গত ৩ জুন সকাল ৮টার দিকে দুটি প্যাকেটে ৩ কেজি সোনা শাহীনকে দেন সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের জন্য। পরে শাহীন, তার শ্যালক ইয়ামিন ও ছোটভাই আবু হুরাইয়াকে সাথে নিয়ে প্যাকেট দুটি ভারতে পাচারের জন্য শাহাজাদপুর মাঠে যান। একটি প্য্যাকেট ইয়ামিনের কাছে এবং অপর প্যাকেটটি ছিলো আবু হুরাইয়ার কাছে। সকলের দায়িত্ব ছিলো ভারতের জনৈক অমল রাজুর লোক এলে তাদের হাতে প্যাকেট দুটি তুলে দেয়া। শাহাজাদপুর মাঠে যাওয়ার পর লাল রঙের একটি অ্যাপাচি ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলে করে অজ্ঞাত পরিচয় দুই ব্যক্তি সেখানে আসেন এবং নিজেদেরকে অমল রাজুর লোক পরিচয় দিয়ে কৌশলে ইয়ামিনের কাছ থেকে দেড় কেজি সোনা ভর্তি একটি প্যাকেট নিয়ে চলে যান। এ সময় ভয় পেয়ে আবু হুরাইয়া তার কাছে থাকা দেড় কেজি সোনার আরেকটি প্যাকেট মাঠে ফেলে দেয়। পরে বিষয়টি আবু সাঈদকে জানান শাহীন। এরপর আবু সাঈদ চক্রের অন্যতম সদস্য শার্শার মন্টু ও লিটনকে বিষয়টি জানান। পরবর্তীতে আবু হুরাইয়ার ফেলা দেয়া সোনার প্যাকেট পাচারকারীচক্রের অন্য সদস্যরা উদ্ধার করলেও শাহীন ও ইয়ামিনের বিরুদ্ধে বাকী দেড় কেজি সোনা আত্মসাতের অভিযোগ করেন। মূলত মন্টু ও লিটন নিজস্ব লোক পাঠিয়ে ‘অমল রাজুর লোক’ পরিচয়ে দেড় কেজি সোনা হাতিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু সোনা আত্মসাতের দোষ চাপিয়ে দিতে চান শাহীন ও ইয়ামিনের ওপর।

তিনি বলেন, ওইদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পাচারকারীচক্রের অন্য সদস্যরা তাদেরকে বড় কাবিলপুর বাজারস্থ আবু সাঈদের কীটনাশকের দোকানের সামনে আসতে বলেন। তারা সেখানে গেলে মন্টু ও লিটনসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন তাদের চোখ বেঁধে বেনাপোলের অজ্ঞাত স্থানে রেখে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়।

গত ৪ জুন ইয়ামিন সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে এসে পরিবারের লোকজনকে ঘটনাটি জানান। এ বিষয়ে শাহীনের পিতা আলম লিখিত অভিযোগ করলে তার ছেলেকে উদ্ধারের জন্য অভিযানে নামে ডিবি পুলিশ। প্রথমে আবু সাঈদকে আটক করা হয়। এরপর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার সকাল ৭টার দিকে বেনাপোল পৌরগেটের পশ্চিমে হক ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে অপহৃত শাহীনকে উদ্ধার এবং অপহরণকারী লিটনকে আটক করা হয়। এ সময় অপহরণকাজে ব্যবহৃত একটি বাজাজ ডিসকভার ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।

তিনি আরও জানান, অপহরণ ঘটনায় শাহীনের পিতা আলমের দেয়া লিখিত অভিযোগটি চৌগাছা থানায়  নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে।