হিট অ্যালার্ট আরো তিনদিন

যশোরে ফের সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় বাইরে যেন আগুনের হল্কা

এখন সময়: রবিবার, ৫ মে , ২০২৪, ০২:০০:১৫ এম

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরে বয়ে যাওয়া অব্যাহত অতি তীব্র তাপপ্রবাহে মানুষ নাকাল হয়ে পড়েছে। ঘরে বাইরে কোথাও স্বস্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাইরে যেন সূর্যের তাপে আগুনের হল্কা। বৃহস্পতিবার জেলাটিতে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায়ও ছিল একই তাপমাত্রা। রোদের তীব্র তাপে প্রাণীকূল যেন অসহায় হয়ে পড়ে। আবহাওয়া অফিস আরও তিনদিন হিট অ্যালার্ট জারি করেছে।

তীব্র তাপে শ্রমিক শ্রেনীর মানুষ বেশি অসুবিধায় পড়ে। জীবিকার খোঁজে বছর দুয়েক আগে ঝিকরগাছার মাটিকুমড়া গ্রামের আবদুস সবুর। শহরে রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা সবুর জানান, মটর চালিত রিক্সা খুব বেশি চালানো যাচ্ছেনা। হাফ লেগে যাচ্ছে। আবার গরমের কারণে মানুষও রাস্তায় তেমন বের হচ্ছেনা। এতে করে তার আয় কমে গেছে।

আগে যেখানে শৈত্যপ্রবাহে মানুষ মারা যেত বেশি, এখন সেখানে তাপপ্রবাহে দেখা যাচ্ছে মৃত্যু । গত শুক্রবার থেকে বুধবার পর্যন্ত পাঁচ দিনে তাপপ্রবাহে দেশে অন্তত ২৯ জন মারা যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। তীব্র তাপপ্রবাহের দিনগুলোতে মৃত্যু বেড়ে যায় ২২ শতাংশ। দেশের পাঁচটি প্রধান নগরের ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ প্রবল তাপের ঝুঁকিতে আছেন। গরমে অধিক শ্রমে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারাচ্ছেন অনেকে। অন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেভাবে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তাপপ্রবাহের ঝুঁকিতে থাকা মানুষের পাশে নেই কেউ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাপপ্রবাহকে আর হেলাফেলা করার উপায় নেই। কয়েক বছর ধরে তাপমাত্রা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, ভবিষ্যতে পরিস্থিতি কত ভয়াবহ হবে। এখনই তাপপ্রবাহকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে রাষ্ট্রীয় নীতি ও পরিকল্পনা নিতে হবে।

সকালে আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম সাক্ষরিত এক সতর্কবার্তায় বলা হয়, দেশের উপর দিয়ে চলমান তাপ প্রবাহ আজ ২৫ এপ্রিল থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অর্থাৎ ২৮ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

এই সময়ে জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস।

এর আগে গত শুক্রবার থেকে দুই দফা ৭২ ঘণ্টা করে তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি করে আবহাওয়া অফিস।

খুলনা প্রতিনিধি জানান, খুলনা অঞ্চলে দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে বেশ কয়েকদিন ধরে। আর এই দাবদাহের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে তীব্র দাবদাহে শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানচালকরা অস্থির হয়ে পড়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা-ঘাটে লোকজনের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও খেটে খাওয়া মানুষ। শহরের বেশ কিছু সড়কের পিচ গলে যেতে দেখা গেছে। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাইরে না যেতে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হচ্ছে। তীব্র দাবদাহে নগরীর ফুলবাড়িগেট এলাকায় গলে যাচ্ছে পিচ।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, খুলনা বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে যশোর ও চুয়াডাঙ্গায়। এ দুটি জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২.২ ডিগ্রি। এছাড়া খুলনায় ৪১.৩ ডিগ্রি, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ৪১.২ ডিগ্রি, সাতক্ষীরায় ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি, মোংলা ৪০ ডিগ্রি এবং কয়রায় ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর পাবনার ইশ্বরদীতে ৪১.৫ ডিগ্রি এবং রাজশাহীতে ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

শিববাড়ি মোড়ে দাড়িয়ে থাকা ব্যাংক কর্মকর্তা শহিদুল হারেজ (৫২) বলেন, তীব্র গরমে মধ্যে আমরা অফিসিয়াল ড্রেস পারতে পারছি না। যতক্ষণ বাইরে থাকি ততক্ষণ তো ঠান্ডা পানি ও স্যালাইন খেয়ে ক্লান্তি দূর করার চেষ্টা করছি। তারপর কাজ শেষে বাসায় ফিরে যতটা পারছি নিজেকে সুস্থ থাকার জন্য ঠাণ্ডা জাতীয় খাবার খাচ্ছি।

চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। পুরো এপ্রিল মাসজুড়ে তাপপ্রবাহ থাকতে পারে। চলমান দাবদাহে ফসল রক্ষায় কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আগামী আরও কিছু দিন তীব্র দাবদাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময় বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এমতাবস্থায় ফল বিভাগ, উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শক্রমে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তথ্য অফিসের সহায়তায় জেলার সব স্থানে মাইকিং করে জনসাধারণকে সতর্ক করা হচ্ছে। তারা যেন অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হয়।